নোবেল প্রাইজ পাওয়ার পর থেকেই অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে শুরু হয়েছে সমালোচনা। কখনও তাঁর নোবেলজয়ী স্ত্রী এস্থারকে নিয়ে অপপ্রচার করা হচ্ছে, তো কখনও আবার তিনি ভারতীয় কি না, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। এমনকী, প্রথম পক্ষের স্ত্রী তুলির সঙ্গে অভিজিতের সম্পর্ক নিয়েও কদর্য আক্রমণ করতে ছাড়েননি নেটিজেনদের একাংশ। নোবেলজয়ী এই বাঙালিকে ঘিরে হওয়া অপপ্রচার নিয়েই সরব হলেন বাংলার বিদ্বজ্জনদের একাংশ। এপ্রসঙ্গে কফি হাউস-এর কাছে মুখ খুললেন কবীর সুমন, অপর্ণা সেন, শঙ্খ ঘোষ এবং সুগত মারজিৎ।
‘বাকিরা পরশ্রীকাতর, বাঙালি আত্মশ্রীকাতর’- কবীর সুমন
প্রথমেই বলি, বাঙালি কাঁকড়ার এই প্রবৃত্তির শিকার আমি বহুদিন ধরেই হয়েছি। আর আজকাল অভিজিতের সঙ্গে যা হচ্ছে চারিদিকে, তা করছে কিছু ছোটলোক আর গর্দভ। হঠাৎ করে দেখছি কিছু দামড়া দামড়া লোক যেন খাপ পঞ্চায়েত বসিয়েছে। আমার প্রশ্ন, তোরা কে? তো একজন নোবেল লরিয়েটকেও তোদের স্তরে নামাতে চাস? ছোটলোক কোথাকার। আরও একটা জিনিস। কলকাতাই একমাত্র শহর যেখানে বাস আর অটোর পিছনে দুটো উক্তি দেখা যায়। এক, ‘দেখবি আর জ্বলবি, লুচির মতো ফুলবি।’ দ্বিতীয়, ‘হিংসে কোরো না, চেষ্টা করো, তোমারও হবে।’
বলতে বাধ্য হচ্ছি, বাঙালি কাঁকড়া বলেই এই ধরনের উক্তি লিখে আর দেখে আনন্দ পায়। শেষে বলি, বাঙালির সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, বাঙালির নিজের গর্ব করার কিছু নেই। এবং এ বিষয়ে শ্রেষ্ঠ কথাটা বলেছেন আমার এক বাংলাদেশি বন্ধু ও সাহিত্যবিদ, ফারহাদ খান। ওঁর কথায়, বাকি সবাই পরশ্রীকাতর হয়, বাঙালি হল আত্মশ্রীকাতর। তারা নিজের ভাল দেখতে পারে না। গন্ডমূর্খ আর গাড়ল এই কাঁকড়ার দলকে একটাই কথা বলব- ‘মর তোরা।’
‘পাড়ার দোকানে নোবেল কিনতে পাওয়া যায় না’- অপর্ণা সেন
যাঁরা অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কুৎসিত ভঙ্গিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোল করছেন তাঁরা কি জানেন অভিজিতের অ্যাচিভমেন্টের ব্যাপ্তি? অভিজিৎ নোবেল প্রাইজ পেয়েছে। কী প্রাইজ? নোবেল প্রাইজ! এটা পাড়ার দোকানে কিনতে পাওয়া যায় না। আর এসব কারা করছে, কেন করছে, সেটা তো জলের মতো পরিষ্কার। এগুলো হচ্ছে ‘পেড ট্রোলিং’। আমি নিজেও এর শিকার হয়েছি। আমি শুধু এটাই বলব, অভিজিতের এতে কিচ্ছু এসে যাবে না। ওর এই অবিশ্বাস্য অ্যাচিভমেন্টের সামনে দিজ পিপল ডোন্ট ম্যাটার।
‘কুৎসিত আলোচনা যারা করছে তাদের জন্য ঘৃণা’- সুগত মারজিৎ
অভিজিতের বাবা, অর্থনীতির দিকপাল অধ্যাপক দীপক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন আমার ভীষণ প্রিয় মাস্টারমশাই। অভিজিৎকে আমি চিনি অনেক আগে থেকে। কিন্তু কাছ থেকে চিনি বলে প্রতিবাদ করছি না। চেনাজানা না থাকলেও একই কথা বলতাম। সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিজিতের ব্যক্তিগত জীবন ঘিরে যা হচ্ছে তা অত্যন্ত অনুচিত একটা চর্চা। আমি নিজে সোশ্যাল মিডিয়ায় থাকতে পছন্দ করি না। যা শুনেছি সবই অন্যদের থেকে, তবে সেটা মিথ্যে নয়। এসব আলোচনা যত চলবে, বাঙালি হিসেবে আমাদের খামতি, অসাবধানতা তত প্রতিফলিত হবে। যে কাজের জন্য অভিজিৎ নোবেল পেয়েছে, সেটাই প্রধান আলোচনার বিষয় হওয়া উচিত। তার বদলে কেন যে ব্যক্তিগত জীবনের দিকে মানুষের আগ্রহ মোড় নিল, কে জানে! যারা এই কুৎসিত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখা উচিত। নোবেল পাওয়ার পরেও যদি এমন আক্রমণের মুখে পড়তে হয়, তাহলে সত্যিই কিছু বলার থাকে না। আশা করি নিজ ঔদার্যেই অভিজিৎ এসব কথায় কান দেবে না।
‘অভিজিতের সমালোচনা হচ্ছে, এটাই আশ্চর্যের’- শঙ্খ ঘোষ
অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় যে নোবেল পেয়েছেন, এ খবর খুব আনন্দের। ওঁর সম্বন্ধে যে সমালোচনা হচ্ছে, এটাই খুব আশ্চর্যের। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিতভাবে আমার জানা নেই। তাই কোনও মন্তব্য করতে পারছি না।
সাক্ষাৎকার: ইন্দ্রনীল রায়, ভাস্কর লেট, শ্যামশ্রী সাহা
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.