সপ্তাহের শুরু। মন খারাপ। চট করে প্ল্যান করে নিন উইকএন্ডে একটু ঘোরাঘুরির। সেরা ৮ ডেস্টিনেশনের খোঁজ দিচ্ছেন বর্ণিনী মৈত্র চক্রবর্তী।
চৌধুরি জমিদার বাড়ি
কেন যাবেন:
তিনশো পঁচাত্তর বছরের এই পুরনো রাজবাড়ির আনাচে-কানাচে ইতিহাসের ছোঁয়া। এ ছাড়া বিশাল আমবাগানে ঘুরে বেড়ানো, পুকুরে মাছ ধরা, গ্রামে ঘুরে বেড়ানো, মন্দির দর্শন, জমিদারবাড়ির প্রাঙ্গণ ঘোরা, রাজাউজিরদের ছবি ও তাঁদের শিকারের বিভিন্ন নিদর্শনের সঙ্গে সাক্ষাৎ-একই সঙ্গে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কোলাজ। সনাতনী জমিদারি পরিবেশে থাকার অনন্য সুযোগ।
থাকা-খাওয়া:
তিনটে ডাবল বেডরুম ও একটি চার শয্যার ঘর ভাড়া দেওয়া হয়। প্রত্যেকটি ঘরে রয়েছে পুরনো জমিদার আমলের আসবাব। কড়িবরগার সিলিং, দরজায় খিল, শিকল, এমনকী খিড়কিও রয়েছে। জমিদার বাড়ির পাশে পুকুর ছাড়াও রয়েছে টেরাকোটা কারুকার্যের শিবমন্দির, টেরাকোটা দোলমঞ্চ, রাধা-মাধবের মন্দির, দুর্গামঞ্চ।
কীভাবে যাবেন:
সব থেকে কাছে বর্ধমানের নিমো স্টেশন। অটো বা রিকশা করে স্টেশন থেকে জমিদারবাড়ি যেতে পারেন। ড্রাইভ করে গেলে এনএইচ ২ ধরে (দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে) নবগ্রাম, সেখান থেকে ১০ কিলোমিটার দূরত্বে চৌধুরিবাড়ি।
মহেশগঞ্জ এস্টেট
স্টিরিওটাইপ হোটেল বা রিসর্টে না থেকে দিন দুয়েক বেশ জমিদারি মেজাজে কাটাতে বেড়িয়ে আসুন নবদ্বীপের মহেশগঞ্জ এস্টেটে।
কেন যাবেন:
হেরিটেজ হোমস্টে-র উষ্ণ অভ্যর্থনা অপেক্ষা করছে আপনার জন্য। প্রকৃতির কোলে, সবুজের ছায়ায় এক মনোরম ছুটির আয়োজন। ফরাসি স্থাপত্যকলায় তৈরি এই এস্টেট অষ্টাদশ শতাব্দীতে ‘নীল কোঠি’ নামে পরিচিত ছিল। নীল বিদ্রোহের পর ১৮৭৫ নাগাদ এটি বিক্রি হয়ে যায়। পালচৌধুরিরা পুরো এস্টেট কিনে নেন। বিত্তশালী এই ব্যবসায়িক পরিবারটি তখন থেকেই এখানে থাকতে শুরু করেন। আজও একটি অংশে তাঁদের বংশধররা বসবাস করেন।
থাকা-খাওয়া:
তিনটে এসি ও দুটো নন এসি ঘর মিলবে এখানে। বিরাট লম্বা বারান্দাটি নিভৃতে বসে বই পড়ার জন্য আদর্শ। প্রচুর পাখির দেখা মেলে এখানে। স্নুকার, ক্যারম খেলার ব্যবস্থাও করতে পারেন। কনকনে ঠান্ডার সময় বসার ঘরে ফায়ারপ্লেস উষ্ণতা এনে দেবে, গ্যারান্টিড। তারা দেখার নেশা থাকলে ছাদের ওপর খোলা আকাশের হাতছানি তো আছেই। এখানে খাবারের আয়োজনও রয়্যাল। প্রাতঃরাশে ইংলিশ খাবার মিলবে, বাঙালি আহার মধ্যাহ্নে, নৈশভোজে মিলবে কন্টিনেন্টাল, ভারতীয় স্বাদ। এ ছাড়া কেক, পেস্ট্রি, পুডিং পাবেন।
কীভাবে যাবেন:
এনএইচ ৩৪ ধরে যশোর রোড ধরে কৃষ্ণনগর। সেখান থেকে মহেশগঞ্জ হয়ে বালাখানা। অথবা কোনা এক্সপ্রেসওয়ে ধরে কালনা। সেখান থেকে গৌরাঙ্গসেতু ধরে মহেশগঞ্জ সাইনবোর্ড ধরে বালাখানা। নয়তো ট্রেনে কৃষ্ণনগর পৌঁছে সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে যেতে হবে।
গজলডোবা
জলপাইগুড়ির ওদলাবাড়িতে অবস্থিত গজলডোবা। তিস্তা ব্যারেজের প্রথম জলাধার এটি।
কেন যাবেন:
অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যবেষ্টিত গজলডোবার পশ্চিমে বয়ে চলেছে মহানন্দা নদী আর পূর্বে তিস্তা নদী। বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গলে ঘেরা অঞ্চল। প্রচুর পরিযায়ী পাখির দেখা মেলে এখানে। এরা মূলত লাদাখ, মধ্য এশিয়া থেকে উড়ে আসে। একদিকে বহমান নদী আর পিছন ফিরে তাকালেই শ্বেতশুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘার পোর্ট্রেট।
থাকা-খাওয়া:
সেচ দপ্তরের একটি বিল্ডিং রয়েছে৷ যার চারটে ঘর পাওয়া যায়। তবে পুরোটাই অনুরোধভিত্তিক। ইতিউতি দু’একটা থাকার ব্যবস্থা ক্রমে গড়ে উঠছে। শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, গরুমারা অভয়ারণ্য থেকে খুব একটা দূর নয় গজলডোবা। দিনের দিন গিয়ে ফিরে আসা যায়।
কীভাবে যাবেন:
নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে শেয়ার গাড়ি বা টোটো ভাড়া করে পৌঁছে যান গোড়ার মোড়। সেখান থেকে শেয়ার ট্রেকারে করে তিস্তা ব্যারেজ। আনুমানিক ঘণ্টা দেড়েক সময় লাগে পৌঁছতে।
গোয়ালপাড়া
শান্তিনিকেতনের নিকটবর্তী গোয়ালপাড়া। একটুকরো সৌম্যশান্ত রাঙামাটির পথ মন ভোলাবেই।
কেন যাবেন:
রাঙামাটির টানে শান্তিনিকেতন বাঙালির প্রিয় উইকএন্ড ডেস্টিনেশন। আর তাই ভিড়ভাট্টাও বেশি। সেই কোলাহল এড়াতে কয়েক পা দূরেই গোয়ালপাড়া। শ্যামবাটি থেকে কোপাইয়ের দিকে আসতে পড়ে সোনাঝুরি রোড। এগোতেই গোয়ালপাড়া। মাটির বাড়ি, ধানখেত, টলমলে পুকুরে রাজহাঁসের দল-সব মিলিয়ে মনোরম পরিবেশ। কোপাইয়ের পাড়, আদিবাসী গ্রাম, বিশ্বভারতী ক্যাম্পাস, কঙ্কালীতলা আর পৌষ মাসে পৌষ মেলা তো আছেই।
থাকা-খাওয়া:
‘দিয়া মাড ভিলা’ হোমস্টে খুব জনপ্রিয় এখানে। তিনটে মাড ভিলা রয়েছে। শান্তিনিকেতনের আদলেই গড়া বাড়ি।
কীভাবে যাবেন:
কলকাতা থেকে ট্রেনে প্রান্তিক অথবা বোলপুর চলে আসুন। সেখান থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার গোয়ালপাড়া। বাই রোড শ্যামবাটি হয়ে চলে আসুন।
পাউসি
পূর্ব মেদিনীপুরের ছোট্ট গ্রাম পাউসি। শহরের কোলাহল দূরে সরিয়ে, রোজকার রুটিনকে বাই বাই জানিয়ে নিঃশ্বাস নিতে চলে আসুন।
কেন যাবেন:
বাগদা নদীর পাড়ে বসে জলের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ ভুলিয়ে দেবে শহরের ক্লান্তি। বিস্তৃত ধানখেত, মাছরাঙার ওড়াউড়ি, কংক্রিট সিমেন্টের দমচাপা অবস্থা থেকে নিষ্কৃতি মিলবে।
থাকা-খাওয়া:
মনচাষা রিসর্ট রয়েছে থাকার জন্য। অত্যাধুনিক এই রিসর্টের বাইরের অংশ বাঁশ, খড়, হোগলা দিয়ে তৈরি। রিসর্টে চারটে কটেজ পাবেন। এখানকার বাঙালি খাবারের স্বাদও অনবদ্য।
কীভাবে যাবেন:
ট্রেনে কাঁথি স্টেশনে নেমে যেতে হবে পাউসি। ২৪ কিলোমিটারের দূরত্ব। বাসে এলে দিঘাগামী বাসে করে আসতে হবে রসুলপুর নদ। সেতু পেরলেই কালীনগর বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে ভ্যান রিকশায় পাউসি।
মৌসুনি আইল্যান্ড
কলকাতার কাছে সাগরদ্বীপ আর জম্বুদ্বীপের মোহনায় মৌসুনি আইল্যান্ড।
কেন যাবেন:
কলকাতা থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে একেবারে ভার্জিন বিচ। এক দিকে বয়ে যাওয়া শান্ত শীতল গঙ্গানদী, অন্য দিকে বঙ্গোপসাগর। অপূর্ব ক্যানভাস। প্রচুর পাখির সমাগম হয় এখানে। আর যেহেতু ভার্জিন তাই নেই কোনও কোলাহল।
থাকা-খাওয়া:
টেন্ট বা মাড হাউসে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। ক্যাম্পিংয়ের ব্যবস্থাও মিলবে। পাঁচটি টেন্ট আছে। খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা কেয়ারটেকারের। আশপাশে আরও কিছু থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে।
কীভাবে যাবেন:
ট্রেনে নামখানা পৌঁছে সেখান থেকে ভ্যানে চেপে হাতানিয়া-দোয়ানিয়া নদী পেরিয়ে নামখানা বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে দক্ষিণ বাগদাঙ্গা ফেরিঘাট। বাগদাঙ্গা থেকে বালিয়াড়া টেন্টস।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.