অংশুপ্রতিম পাল, খড়গপুর: ‘কাঁদালে তুমি মোরে ভালবাসারই ঘায়ে..’ বাস্তবিকই খড়গপুরকে কাঁদিয়ে চিরবিদায় নিলেন ‘আনটোল্ড স্টোরি’র নায়ক সুশান্ত সিং রাজপুত৷ রবিবারের বৃষ্টিস্নাত দুপুরে গোটা খড়গপুর শহরের অলিগলিতে বিস্ময়। শোকে হতবাক হয়ে গিয়েছেন সকলে৷ এখনও স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে তাঁর অতিথি হয়ে এসে ঘরের ছেলে হিসেবে ফিরে যাওয়ার কথা৷
২০১৫ সাল৷ জুন মাস৷ নীরজ পাণ্ডে পরিচালিত ‘এম এস ধোনি-আনটোল্ড স্টোরি’ ছবির শুটিং করতে সুশান্ত সিং রাজপুত খড়গপুর শহরে আসেন৷ ছিলেন পাক্কা দুই মাস৷ উঠেছিলেন খড়গপুর আইআইটির একটি অতিথি ভবনে৷ সেখান থেকেই তিনি শুটিংয়ের জন্য ঘুরে বেড়িয়েছেন খড়গপুর স্টেশন থেকে শুরু করে সেরসা স্টেডিয়াম, সাউথ সাইড এলাকা ও ট্রফিক গোলখুলি এলাকায়৷
এককথায় চাকরি করতে ধোনি খড়গপুর শহরের যেসব জায়গায় থাকতেন, খেলতেন ও ঘুরে বেড়াতেন, সেইসব জায়গাগুলিকেই কেমন যেন আপন করে নিয়েছিলেন সুশান্ত সিং রাজপুত (Sushant Singh Rajput)। আর ধোনির ঘনিষ্ঠদের সঙ্গেও গড়ে উঠেছিল দারুণ সখ্য। একসঙ্গে চায়ের ঠেক, ধোসার টেবিলে চুটিয়ে আড্ডা। কিছুই ভুলতে পারছেন না খড়গপুরের মানুষ। রেলকর্মী দীপক সিং। তাঁর কাছেই ধোনির চাকরি জীবনের কথা জানতে চেয়েছিলেন বলিউড অভিনেতা। “আমি বিস্মিত৷ মাহির ব্যাপারে উনি অনেককিছু জানতে চাইতেন৷ বিশেষ করে মাহি খড়গপুরে থাকার সময়ে কী করতেন? কোথায় থাকতেন? কীভাবে ধোনির সারাদিন কাটত? কোথায় অনুশীলন করতেন?… এরকম আরও অনেক কিছু”, সেদিনের কথা বলতে গিয়ে চোখের কোণ চিকচিক করে ওঠে দীপকের।
দীপক বললেন সুশান্ত সিং রাজপুতের একটি ‘আনটোল্ড স্টোরি’ও। “একবার আইআইটি গেস্ট হাউস থেকে ফুচকা খাওয়ার জন্য নিজে বাইক চালিয়ে চলে এসেছিলেন সাউথ সাইড এলাকায় একটি দোকানে৷ সেখানে সাধারণ মানুষের মতো একসারিতে দাঁড়িয়ে ফুচকা খেয়েছেন৷ কোনও তারকাসুলভ ব্যপার নেই।” আবার বলিউড হিরোর পাগলামির একটা ঘটনাও তাঁর খুব মনে পড়ছে। বললেন, “একদিন রাত এগারোটার সময় তিনি জিম করার ইচ্ছেপ্রকাশ করেন৷ তখন শহরের কৌশল্যা এলাকায় এক বন্ধুর জিম খুলিয়ে সেই ব্যবস্থা করে দিতে হয়েছিল সুশান্তকে।”
ধোনি-ঘনিষ্ঠ আর এক বন্ধু খড়গপুর শহরের ব্যবসায়ী বিট্টু গুপ্তা ওই সিনেমার একটি ছোট্ট চরিত্রে ছিলেন। তিনি জানালেন, “টেনিস বলের একটি ক্রিকেট দলের সদস্য হিসাবে ছোট একটা রোল পেয়েছিলাম। টেনিস বলের ক্রিকেট প্রতিযোগিতার বিজয়ী দলের সদস্য হিসাবে তাঁর সঙ্গে খেলতে হয়েছিল৷ খুব মাটির মানুষ ছিলেন। তিনি অকালে এভাবে চলে যাবেন, বিশ্বাসই হচ্ছে না।” আর সেই প্রতিযোগিতার বিজয়ী দলের অধিনায়ক হিসাবে পুরস্কার তুলে দিয়েছিলেন তত্কালীন পুরপ্রধান তথা প্রশাসক প্রদীপ সরকার৷
ঘটনায় বিস্মিত হয়েছেন ধোনির বহু পুরনো ঘনিষ্ঠ চাওয়ালা থমাস এ্যাটেন্ডা। রেলনগরী খড়গপুরের সাউথ সাইড এলাকায় সাউথ ইনস্টিটিউটের পাঁচিল ঘেঁষা ৩৫ বছরের পুরনো এই চা দোকানের মালিক থমাস জানালেন ” একদিন তিনি আমার চা দোকানে চলে আসেন। প্রথমে তাঁকে দেখে আমি ধোনি বলে ভেবেছিলাম। কিছুক্ষণ পরেই অবশ্য ভুল ভেঙ্গে যায়।” তবে আন টোল্ড স্টোরির নায়কের হঠাৎ এই অল্প বয়সে মৃত্যুর ঘটনায় গোটা খড়গপুর শহরকে যেন আত্মীয় বিয়োগের যন্ত্রণায় শোকাহত করে তুলেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.