বিদিশা চট্টোপাধ্যায়: করণ জোহর পরিচালিত ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি’ মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই টোটা রায়চৌধুরীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ সকলেই। সন্ধেবেলায় লেক মল-এর শোয়ে এই ছবি দেখতে গিয়ে সেটা সরাসরি টের পেলাম। টোটা এবং রণবীর সিংয়ের ‘ডোলা রে’ নাচের সিকোয়েন্সে তুমুল হাততালি এবং সিটি। ১৯৯৩ সালে প্রভাত রায়ের ‘দুরন্ত প্রেম’ ছবিতে টোটা রায়চৌধুরির ডেবিউ হয়। প্রায় তিরিশ বছর হতে চলল তাঁর কেরিয়ারের। মেনস্ট্রিম বাংলা ছবি ‘লাঠি’, ‘শুধু একবার বলো’, ‘সন্তান যখন শত্রু’, ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’-এর পাশাপাশি তিনি ‘শুভ মহরৎ’, ‘চোখের বালি’, ‘পদক্ষেপ’-এর মতো ছবি দিয়ে শুরু করেছিলেন। সাফল্যের কথা তুলতেই মোবাইলে টোটা জানান, “ঠিক কুড়ি বছর আগে এমন সাফল্য পেয়েছিলাম ‘চোখের বালি’ ছবির জন্য। তখন তো এত সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না, তাই ব্যাপ্তিও ছিল না।”
‘রকি অউর রানি’তে ‘চন্দন চ্যাটার্জি’র চরিত্রে দেখা গিয়েছে টোটাকে। রণবীর সিং, আমির বশিরের স্টিরিওটিপিকাল ‘আলফা মেল’ চরিত্রায়ণের পাশাপাশি ‘চন্দন’-এর চরিত্র একেবারেই নিউট্রাল। ক্লাসিক্যাল ডান্সারের চরিত্র হলেও কোনওভাবেই তাঁকে মেয়েলি করে দেখানো হয়নি। নিজের চরিত্র সম্পর্কে টোটা বলছিলেন, ‘করণ প্রথম থেকেই স্ট্রিক্ট ছিলেন যাতে কোনওভাবেই স্টিরিওটাইপ না হয়। আধ ঘণ্টায় যে অডিশন ক্র্যাক করেছিলাম সেই নিউট্রাল অভিনয় করণ সেটে চেয়েছিলেন। অনেক নৃত্যশিল্পী, মেকআপ আর্টিস্ট, ডিজাইনারদের সঙ্গে আমি পরিচিত। অনেকেই খুব সফল না হলেও নিজের কাজ নিয়ে আনন্দে থাকেন। তবে একটা চাপা দুঃখও থাকে যে, যখন তাঁরা শুরু করেছিলেন হয়তো সমাজের আর পাঁচজনকে পাশে পাননি। কিন্তু সেটাকে অতিক্রম করে গিয়েছেন তাঁরা। চন্দনের চরিত্রটা করতে গিয়ে আমি শিল্পীর এই অভিমানের কথা মাথায় রেখেছিলাম।’
সঞ্জয়লীলা বনশালীর আইকনিক ডান্স সিকোয়েন্স নিয়ে নার্ভাস ছিলেন টোটা। “আমি জানতাম এটা একটা আইকনিক গান এবং মাধুরী দীক্ষিত ও ঐশ্বর্যা রাই পারফর্ম করেছেন। পারফর্ম করতে গিয়ে দর্শকের হাসির পাত্র না হয়ে যাই, এই ভয় ছিল। যেখানে রণবীর আমার শিষ্যের চরিত্রে, সেখানে নাচের সিকোয়েন্সে দু’জনের পারফরম্যান্স যেন সমান হয়। রণবীর প্রচণ্ড ভাল ডান্সার এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। বাংলার নাম যেন না ডোবাই এটা মাথায় ছিল।”
তার জন্য টোটাকে কম পরিশ্রম করতে হয়নি। কলকাতায় নৃত্যশিল্পী পারমিতা মৈত্রর কাছে কত্থকের বেসিক ট্রেনিং নিয়েছিলেন। মুম্বইয়ে নিকিতা বনওয়ালিকরের কাছে বৈভবী মার্চেন্টের কোরিওগ্রাফ করা ‘ডোলা রে’ নাচটা তুলেছিলেন। চার মাসে চল্লিশটা সেশন। শুটিং হয়েছিল দু’দিন ধরে। বারো ঘণ্টা শিফটে। “রণবীরের অসম্ভব এনার্জি। কিছুতেই ক্লান্ত হয় না ও। এই জন্যই ওকে সবাই ‘ডিউরাসেল ব্যাটারি’ বলে। শুটিংয়ের সময় আমরা দেড়ঘণ্টা করে প্র্যাকটিস করতাম একসঙ্গে। কাজ করতে গিয়ে বুঝেছি ও অসম্ভব পজিটিভ একটা মানুষ। অসম্ভব ভাল। আর মনে হয় পারফর্ম করার জন্যই জন্মেছে। আমরা এমনভাবে নাচটা তুলেছিলাম যাতে দু’জনকে স্প্লিট ইমেজ মনে হয়। বৈভবীও খুব কড়া ছিলেন। ছবিতে কেটে-কেটে দেখানো হলেও নাচটা একবারে শুট করা হয়েছিল।”
রণবীর যতটা পরিশ্রমী ততটাই মজার। টোটাকে তিনি প্রায়ই জিজ্ঞেস করতেন তাঁর ফিটনেস রহস্য নিয়ে। ‘স্যর, আপ ক্যায়সে ইতনা ফিট রহেতে হো?’ এই প্রশ্ন শুনে আমি বলতাম, ‘তোমার কথা বলো- তোমার এত এনার্জি কোথা থেকে আসে!’ কেরিয়ারে প্রায় তিরিশ বছর পেরিয়ে অভিনেতা টোটা রায়চৌধুরি আজ দর্শকদের আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছেন। বিদ্যা বালন নিজে থেকে ফোন করেছেন, কাজল মেসেজ করেছেন, অনুরাগ কাশ্যপ প্রশংসা করেছেন, বলিউডের প্রিমিয়ারে সিনেমা দেখে বেরিয়ে অনন্যা পাণ্ডে জিজ্ঞেস করেছেন, ‘স্যর আপ কেয়া কত্থক শিখে হো?’ টোটা বললেন অন্য কথা। “আজ আমি একজনকে সবচেয়ে বেশি মিস করছি। ঋতুপর্ণ ঘোষ। ঋতুদা থাকলে ফোন করে বলতেন, ‘অ্যাই শয়তান, বাড়ি আয়, তোর সঙ্গে কথা আছে।’ আমি জানি ঋতুদা থাকলে খুব খুব খুশি হতেন।”
একই সঙ্গে যোগ করলেন, “পিছন ফিরে তাকালে সব পরিচালকের কাছেই আমি ঋণী। সবার থেকেই কিছু না কিছু শিখেছি। প্রভাত রায় আমাকে ব্রেক দিয়েছিলেন। ঋতুদা তো ইনস্টিটিউশন। ‘সন্তান যখন শত্রু’র মতো ছবিতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন আমার কো-স্টার। ছ’দিন, ছ’রাত তাঁর সঙ্গে একই ঘরে কাটানো। আমি এতদিনে যা শিখেছি তার ফিনিশিং লাইনের দোরগোড়ায় ‘রকি অউর রানি’।” টোটা আশা রাখেন আরেকটা সাফল্যের জন্য হয়তো কুড়ি বছর অপেক্ষা করতে হবে না। তিনি চান কলেজে বন্ধুদের চেনা নাম ‘পুষ্পরাগ’ ফিরে আসুক। দাদুর দেওয়া এই নাম ‘রকি অউর রানি’-তে টাইটেল কার্ডে রেখেছেন টোটা। “আমি চেয়েছিলাম এই নামটাও সকলে জানুক। এটাও তো আমারই নাম। করণকে বলার পর তিনি বলেন ব্র্যাকেটে ‘টোটা’ নামটা রেখো।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.