সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: “টলিউডে ৬০ শতাংশ যৌন হেনস্তার অভিযোগ পরিচালক-প্রযোজকের বিরুদ্ধে”, সম্প্রতি এমনই বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন স্বরূপ বিশ্বাস। এবার সেই প্রেক্ষিতেই পালটা বিবৃতি জারি করে ফেডারেশন সভাপতির প্রস্তাবিত ‘সুরক্ষা বন্ধু’ কমিটি গড়া নিয়ে প্রশ্ন তুলল ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন।
দিন কয়েক আগের কথা। পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়কে নিষিদ্ধ করা নিয়ে ফেডারেশন বনাম ডিরেক্টর্সদের লড়াইয়ে ইন্ডাস্ট্রির অচলায়তন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। তার রেশ কাটতেই সম্প্রতি আর জি কর আবহে টলিউডের কাস্টিং কাউচ নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন স্বরূপ বিশ্বাস। যেখানে সিনেপাড়ার যৌন হয়রানির ৬০ শতাংশ ঘটনার দায় চাপিয়ে দেন পরিচালক-প্রযোজকদের বিরুদ্ধে। ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস বলেছিলেন, “৪০ শতাংশ যৌন হেনস্তার অভিযোগ এসেছে প্রযোজকদের বিরুদ্ধে। আর ৬০ শতাংশ অভিযোগ রয়েছে পরিচালক এবং পরিচালক থেকে প্রযোজক হয়েছেন, এমন ব্যক্তির বিরুদ্ধে। যে তিনটি অভিযোগ সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, ভুক্তভোগীরা যদি সুরক্ষা বন্ধু কমিটিতে অভিযোগ করেন, তাহলে অবশ্যই সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। আমাদের আইনজীবীরা বিনামূল্য়ে সেই মামলা লড়বেন।”
স্বরূপের এহেন মন্তব্যের তিন দিনেকের মাথায় এবার সরব হল টলিউডের ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন। তাঁরা পালটা কাঠগড়ায় দাঁড় করালো ফেডারেশন সভাপতির সুরক্ষা বন্ধু কমিটি গড়ে তোলার অভিপ্রায়কে। বৃহস্পতিবার ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশনের তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, “যৌন হয়রানি শুধুমাত্র পরিচালক-প্রযোজকরাই করেন, এই সিদ্ধান্তে উনি কীভাবে পৌঁছলেন তার কোনও ব্যাখ্যা দেননি। দশ বছরের শিশুও জানে, যৌন হয়রানির মূলসূত্র ক্ষমতা। ক্ষমতার অঙ্কে পরিচালক-প্রযোজকরা কোন স্থানে রয়েছেন, সাধারণ মানুষ সেটা জানেন। স্বরূপ বিশ্বাস কোনওরকম আইনি বৈধতা ছাড়া ১২-১৩ বছর ধরে ইন্ডাস্ট্রির সমস্ত নিয়ম একতরফাভাবে তৈরি করে আসছেন কারও অনুমতি না নিয়েই। এই কমিটির মূল উদ্দেশ্য যৌন হয়রানিতে ভুক্তভোগীদের পাশে দাঁড়ানো। তাঁদের সমস্যায় হস্তক্ষেপ করা। প্রয়োজনে তাঁদের আইনি এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরিষেবা বিনামূল্যে দেওয়া। স্বরূপ বিশ্বাস জানিয়েছেন, স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই এই সুরক্ষা বন্ধু উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। আপাতদৃষ্টিতে সাধুপ্রস্তাব হলেও বিষয়টা একটু খুঁটিয়ে দেখতে হবে। তাহলে অঙ্কটা পরিষ্কার হয়। উনি জানিয়েছেন, অভিযোগের ষাট শতাংশ পরিচালকদের বিরুদ্ধে এবং চল্লিশ শতাংশ নাকি প্রযোজকদের বিরুদ্ধে। সমাজ মাধ্যম ও কানাঘুষোয় পাওয়া অভিযোগ থেকে উনি কোন দুর্লভ অঙ্কের মাধ্যমে এই শতাংশের হিসেব করলেন, সেটা জানাননি।” সুরক্ষা বন্ধু কমিটি গড়ায় আগেও স্বরূপ বিশ্বাসের বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত ছিল বলে দাবি করেন তাঁরা।
সেই বিবৃতিতেই সুরক্ষা বন্ধু কমিটির প্রয়োজন রয়েছে জানিয়েও ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপের উদ্দেশে ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশনের মন্তব্য, “তাঁর সুরক্ষা বন্ধু কমিটিতে কয়েকজন আইনজীবীর উল্লেখ থাকলেও বাকি সদস্যরা কীসের ভিত্তিতে, কোন যোগ্যতায় এবং কোন প্রক্রিয়ায় সদস্য নির্বাচিত হলেন, তার কোনও প্রমাণ দাখিল করেননি। স্বরূপ বিশ্বাস মিডিয়ার কাছে নারী সুরক্ষা নিয়ে অশ্রুসজল বক্তব্য রেখেছেন। সেই সূত্রে আমাদের প্রশ্ন, এইমুহূর্তে গোটা রাজ্যজুড়ে যে জ্বলন্ত ইস্যুটি সকলের চোখের সামনে, তার বিরুদ্ধে স্বরূপ বিশ্বাস বা তাঁর ফেডারেশন কি কোনও বিবৃতি বা প্রতিবাদী মিছিলের ডাক দিতে পারবেন? করলে আমরা বুঝতাম, উনি এই বিষয়ে আন্তরিক।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.