সুপর্ণা মজুমদার: রক্তস্নাত আফগানিস্তান (Afghanistan Crisis)। সারা বিশ্ব চোখের সামনে দেখছে তালিবানি সন্ত্রাসের (Taliban Terror) বীভৎস চেহারা। নিজেদের অনুভূতির কথা জানালেন টলিউডের তারকারা। ভারতের ভূমিকা কী হওয়া উচিত? তা নিয়ে মতামত জানালেন তাঁরা।
রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায় (Rahul Banerjee): আমি ভয়ের চোটে খবর দেখা বন্ধ করে দিয়েছে। জানি এটা খরগোশের মতো কাজ হচ্ছে। চোখ বুঝে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা। কী বলব, প্লেন থেকে মানুষ পড়ে যাচ্ছে, মানুষ হাহাকার করছে একটা সভ্য সমাজে। আমার মনে হয় আমরা ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। দ্য ডুমস ডে ইজ নট ফার। এই বর্বরতার শেষ কোথায় জানা নেই। আমার তো মনে হয় আফগানিস্তানের এই সংকটে ভারতের পাশে দাঁড়ানো উচিত এবং দরকার পড়লে বর্ডার খুলে দেওয়া উচিত।
সুদীপ্তা চক্রবর্তী (Sudipta Chakraborty): কী বলব বলো তো! আমি শকে আছি। দুপুরেই আমার স্বামীর সঙ্গে আলোচনা করছিলাম। এটা ২০২১-এ ঘটছে? এটা ভেবেই আমি শিহরিত হচ্ছি যে আমরা কোথায় আছি। নিজেদেরটা নিয়ে কী সুন্দর ব্যস্ত আছি।কিন্তু আসলে এটা ঘটছে। অবিশ্বাস্য! আর এটার মধ্যে এত বেশি রাজনীতি। এটা নিয়ে গভীরে যাইনি, পড়াশোনাও করিনি। সুতরাং এটা নিয়ে কোনও কিছু বলার অধিকার নেই। তবে মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে তো দাঁড়ানো দরকার।
অনীক দত্ত: দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এর নিন্দে করা উচিত। কোনও কূটনৈতিক সম্পর্কের তোয়াক্কা না করে। কারণ এটা তো জবাই হচ্ছে, সেটা যদি কোনওদিন আমাদের হয় এবং সারা বিশ্ব যদি বলে যে রাষ্ট্রসংঘ কিছু করছে না বলে আমি চুপচাপ বসে আছি! রাষ্ট্রসংঘ, আমেরিকা অবশ্যই দায়িত্ব পালন করছে না। শুধুমাত্র ভারতবর্ষ নয় সমস্ত দেশের রাষ্ট্রসংঘে ফোন করে এর বিরুদ্ধে বলা উচিত। শুধুমাত্র ভারত নয়, সমস্ত দেশের একজোট হয়ে এটা করা উচিত। যাঁরা করছে না তাঁদের চিহ্নিতও করা উচিত। শুধু কেন্দ্র সরকার নয়, রাজ্য সরকারেরও বলা উচিত। এটা নিয়ে এত আলোচনা-পর্যালোচনার কিছু নেই। যাঁরা বুদ্ধিজীবী তাঁরাইবা চুপ কেন? আপনাদের মতো সংবাদমাধ্যমেরও প্রশ্ন করা উচিত। আমরা দূরে বলে উদাসীন থাকি, তাহলে উত্তরপ্রদেশে কী হচ্ছে আর দিল্লিতে কী হচ্ছে, তা নিয়ে কীভাবে বলব আমরা? এখন অনেকেই সাত-পাঁচ ভেবে মতামত দেন, একটা অবলা সংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে।
রুদ্রনীল ঘোষ (Rudranil Ghosh): আফগানিস্তানে যা হচ্ছে ভয়ংকর। যেকোনও দেশের মানুষ এমন কোনও শাসককে দেখতে চান না, যাঁর কাজ হচ্ছে শাসনের অজুহাতে মানুষকে শোষণ করা। বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে। আমরা দেখেছি কীভাবে মানুষ প্লেনে করে পালাতে পারলে বাঁচে। সভ্য পৃথিবীতে এ ঘটনা প্রমাণ করে সেখানকার মানুষের অবস্থা। ঈশ্বরের নাম করে কিছু মানুষ এই কাজ করছে। কোনও ধর্মগ্রন্থে মানুষকে অসম্মান করার কথা লেখা নেই বলেই জানি। লেখা নেই মানুষের ক্ষতি করার কথা। তারা বন্দুকের নল দিয়ে সমস্ত কিছুর অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আফগানিস্তানের মানুষের পাশে দাঁড়াতে গেলে কূটনৈতিক বিষয় নিয়েও ভাবতে হবে। সারা বিশ্বের ক্ষেত্রেই তাই।মন থেকে চাইলেও অনেক কিছু করা যাবে না। সারা বিশ্বের দেশগুলির আফগানিস্তানের উপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। কূটনৈতিক যা যা নিয়ম রয়েছে, তা মেনেই ভারতকে পদক্ষেপ করতে হবে।
কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় (Kamaleshwar Mukherjee): সভ্যতার সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা। অমানবিক ঘটনা ঘটছে। আমার দেশে এই মুহূর্তে হয়তো তা ঘটছে না। কিন্তু আফগানিস্তানের যে চিত্র আমরা দেখতে পাচ্ছি, তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে রাষ্ট্রসংঘ, সিকিউরিটি কাউন্সিলে থাকা দেশগুলি এবং পৃথিবীর বৃহৎ শক্তিগুলি, তারা প্রত্যেকেই কিন্তু আফগানিস্তানের পুনর্নির্মাণের নামে চলা ব্যবসা নিয়েই বেশি আগ্রহী। মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কাউকে কিছু বলা হচ্ছে না। ভারতের কী করা উচিত তা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা বলতে পারবেন। কারণ তাঁরা গ্রাউন্ড রিয়ালিটিটা জানেন। আমি বলব যে মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই উচিত এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিষয়টা দেখতে হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.