Advertisement
Advertisement

Breaking News

কেরলের হাতি মৃত্যুয় সরব টলিউড

আমাদের দেশে পশুদের সুরক্ষা বলে কিছু আছে?, কেরলে হাতির হত্যা নিয়ে প্রশ্ন টলিউডের

কান্নাভেজা গলায় কথা বললেন সাংসদ মিমি।

Tollywood celebs Mimi, Raj, Imon opens up on animal rights in our country
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:June 4, 2020 3:31 pm
  • Updated:June 4, 2020 7:08 pm  

শম্পালী মৌলিক: মানুষ কীভাবে এতটা নৃশংস হতে পারে? শিউরে উঠছে গোটা দেশ তথা সারা পৃথিবী। একদল অবিবেচক মানুষের জঘন্য নিষ্ঠুরতায় প্রাণ গেল মা-হাতি এবং তার সন্তানের। কেরলের মলপ্পুরমের ঘটনা ঘুম কেড়ে নিয়েছে পশুপ্রেমীদের। অনেক সময়েই খাবারের অন্বেষণে হাতি জঙ্গল থেকে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। তাকে তাড়ানোর নানা উপায় অবলম্বন করে লোকজন। কিন্তু এমনভাবেও হত্যার পরিকল্পনা করতে পারে মানুষ! বাজি আর বারুদে ঠাসা আনারস খেতে দেওয়া হয়েছিল হাতিটিকে (অন্য মত হল, বুনো শূকর দূরে রাখতে গুড়ে মোড়া বাজি)। মুখের মধ্যেই সেসব ফেটে যায়। ভয়াবহ যন্ত্রণায় গর্ভস্থ সন্তান-সহ মারা গিয়েছে সে। এমনভাবে হত্যার ঘটনায় সরব হয়েছে বলিউড। অনুষ্কা শর্মা, বরুণ ধাওয়ান, আলিয়া ভাট, শ্রদ্ধা কাপুর, জন আব্রাহাম প্রমুখ তারকা সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দেন। টলিউডও কার্যত শোকস্তব্ধ।

এমন হৃদয়হীন আচরণ মানুষ করতে পারে ভেবে সকলেই স্তম্ভিত। করোনা যখন শয়ে শয়ে প্রাণ কাড়ছে, তখনও মানুষের মস্তিষ্কে এমন কূট-কৌশল কাজ করছে! সাংসদ অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী টুইট তো করেইছেন, বুধবার রাতে তিনি মোবাইলে জানালেন, “এটা তো মানুষের কাজ নয়! একটা ক্ষুধার্ত হাতি যখন খেতে এসেছে তখন একটা আনারসের মধ্যে বাজি-পটকা ভরে দেওয়া হয়েছে তাকে! আমি এই মানসিকতা বুঝি না। এটা কি একটা ‘স্যাডিস্টিক প্লেজার’? একটা প্রাণী যে কথা বলতে পারে না, আমাদের উপর নির্ভর করছে। অন্তঃসত্ত্বা সে। যার ভিতরে একটা প্রাণ রয়েছে। তাদের সঙ্গে আমরা এই ব্যবহার করব? আর এদিকে আমরা মনুষ্যত্ব নিয়ে কথা বলি! মানবাধিকার নিয়ে কথা বলি। আমাদের দেশে অ্যানিমেল রাইটস বলে কী আছে? ইটস ভেরি ‘লিন’! আমি শুনেছি, অনেকদিন ধরেই কেরালাতে এমন চলছে। কেউ এটা নিয়ে আওয়াজ তোলেনি। জানি না এটা নিয়ে কী বলব! কিন্তু ভীষণ অমানবিক কাজ। আজকে আমরা দু’মাস ঘরের ভিতরে বসে এত অভিযোগ করছি। কষ্ট হচ্ছে, জেলখানার মতো লাগছে। আমরাই কিন্তু সেই মানুষ, যারা চিড়িয়াখানায় গিয়ে পশুদের দিকে ঢিল ছুড়ি। নানারকমভাবে তাদের উত্যক্ত করি।”

Advertisement

“এইভাবেই আমরা কৃতকর্মের ফল ভোগ করছি। এই যদি মনুষ্যত্ব হয়, তা নিয়ে আমি বাঁচতে চাই না। আমার ছোটবেলা অরুণাচলে কেটেছে, ডুয়ার্সে কেটেছে। আমি হাতি দেখেছি। দেখা না দেখাটাও ম্যাটার করে না। একটা ক্ষুধার্ত প্রাণী বিশ্বাস করে তোমার কাছে এসেছে, যে কিছু খেতে দেবে। তার সঙ্গে এরকম আচরণ করা বাঞ্ছনীয়? এতেও হাতিটা কাউকে কিছু করেনি। জলাশয়ে গিয়ে মাথাটা ডুবিয়ে বসেছিল। আমার এটা বলতে বলতেও কান্না পাচ্ছে। আর কী বলব? এরা মানুষ নয়!”, কান্নাভেজা গলায় মন্তব্য মিমির।

পরিচালক রাজ চক্রবর্তী বললেন, “বুধবার সকালে আমি খবরটা পড়ার পর হাউহাউ করে কেঁদে ফেলেছি। বারবার করে ছবিতে দেখা হাতিটার মুখ মনে পড়ছিল। এত নিষ্ঠুর মানুষজন। এই পরিস্থিতিতেও আর কতটা নিষ্ঠুরতা দেখাব আমরা? কোথায় গেল মনুষ্যত্ব? নিজেদের মানুষ বলতে ঘেন্না হচ্ছে। ঠিক বোঝাতে পারব না কেমন কষ্ট হচ্ছে। সমাজে এমন মানুষের সংখ্যা হয়তো কম, প্রচুর মানুষ আছে যারা মানুষের ভাল করে। পশুপ্রেমীও। পশুপাখি বাঁচানোর জন্য জীবন দিয়ে দেয়। এই পরিস্থিতিতে যখন সবাই সবার পাশে থাকার চেষ্টা করছি, তার মধ্যেও কিছু সংখ্যক মানুষ, যারা আসলে অমানুষ। তারাই এমন কাজ করে চলেছে। এদের কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত। সরকারের এমন পদক্ষেপ করা উচিত যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন কাজ করার আগে দু’বার ভাবে। রাস্তায় নেমে এদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা উচিত।”

[আরও পড়ুন: বাংলা ধারাবাহিকে বন্ধ ঘনিষ্ঠ দৃশ্য, টলিপাড়ায় ৫ ঘণ্টার বৈঠকেও শুটিং নিয়ে জট কাটল না]

সংগীতশিল্পী ইমন চক্রবর্তী বললেন, “এরা কারা জানি না! প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে। আমাদের পাড়াতেই বুধবার একটি ঘটনা ঘটেছে। একটা কুকুরকে মেরে কোমর ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তাকে আমার বাড়িতে তুলে এনে শুশ্রুষা করছিলাম। দুপুরে সে মারা যায়। এই ঘটনার পর আমার নিজেরই শরীর খারাপ হয়ে গিয়েছে। হাতির ঘটনায় এতটাই মর্মাহত আমি যে সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখতে পারছি না। কোনও অসুবিধে হলে বনদপ্তরকে ফোন করা যেত। সেভাবে হাতি তাড়ানো যেত। একটা কুকুর যদি ঘরের সামনে পটি করে যায়, তাহলে কি তাকে মেরে কোমর ভেঙে দেওয়া যায়? এটা হতে পারে না! সরকারকে পদক্ষেপ করতে হবে। এর আগেও কেরলে শয়ে শয়ে কুকুরকে মেরে ফেলা হয়েছিল। মানুষ এখন পশুরও অধম হয়ে গিয়েছে। প্রকৃতি নষ্ট করছি আমরা নিজেরাই। যখন এগুলো বুমেরাং হয়ে ফিরে আসছে, আমরা হা-হুতাশ করছি। খুব মন খারাপ লাগছে।”

অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ও সরব হয়েছেন। তিনি বললেন, “ভিডিওটা দেখে আমি স্তম্ভিত! কী বলব জানি না। মানুষ তো উন্নত প্রজাতি। সংবেদনশীল, যত্ন নেওয়ার ক্ষমতা রাখে বলেই জানতাম। এ কোন মানুষ! কেন এই আচরণ? মনুষ্য গোষ্ঠী হিসেবে আমরা আর পৃথিবীর ভাল করছি না। কিছু লোক হয়তো চেষ্টা করছেন। আমরা ভুলে গিয়েছি যে এই পৃথিবীর প্রত্যেকটা প্রাণী গুরুত্বপূর্ণ বাস্তুতন্ত্রটাকে বজায় রাখার জন্য। আমরা একা গুরুত্বপূর্ণ নই শুধু। আমাদের সকলের সহাবস্থান প্রয়োজন। কোথা থেকে আসে এমন মানসিকতা!”
করোনা সংকটের দিনে মানুষ বোধহয় মানুষের জন্য ভাবছিল, পাশে দাঁড়াচ্ছিল পশুপাখিদের। এমন সময়ে কেরলের হাতি-হত্যার ঘটনা সেই বিশ্বাসে ভাঙন ধরাল।

[আরও পড়ুন: বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন সোনু সুদ! রাজনীতি নিয়ে মুখ খুললেন অভিনেতা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement