সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ছাত্রসমাজ ভবিষ্যতের দূত। তারাই দেশের আওয়াজ। কারণ, তাদের কণ্ঠেই সূচনা হয় আগামির পদধ্বনি। কিন্তু সেই ছাত্রসমাজের উপরেই যখন নেমে আসে রাষ্ট্র-রাজনীতির খড়্গাঘাত, তখন? তখন কী হতে পারে, তা দেখিয়ে দিচ্ছে গোটা দেশ। প্রতিবাদে মায়ানগরী মুম্বই থেকে তিলোত্তমা কলকাতার রাজপথে নেমেছেন আম জনতা, ছাত্রসমাজ তথা বিদ্বজ্জনেরা।
দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে রবিবার রাতে যেভাবে পড়ুয়াদের উপরে নির্যাতন চালিয়েছে একদল মুখঢাকা দুষ্কৃতী, তার নিন্দায় একতালে সোচ্চার হয়েছেন অঞ্জন দত্ত, কৌশিক সেন, উষসী চক্রবর্তী, ঋদ্ধি সেন, সুরঙ্গমা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ আরও অনেকেই। মঙ্গলবার রাজপথে নেমে তাঁরা প্রতিবাদী মিছিলে শামিল হন।
এদিন মিছিলে হাঁটাকালীনই রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষকে কটাক্ষ করে কৌশিক সেন মন্তব্য করেন, “উনি যেরকম উলটো-পালটা মন্তব্য করছেন, তাতে পরিষ্কার যে, ভয় পাচ্ছে বিজেপি সরকার। মোক্ষম ভয় পাচ্ছে। তাই এসব করে ছাত্রসমাজকে বাকরুদ্ধ করার চেষ্টা করছে। ঐশীর মাথার রক্তও নকল কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন উনি। উনি হয় পাগল, নয় শয়তান।” পাশাপাশি তিনি এও উল্লেখ করেন যে, “পশ্চিমবঙ্গে যেন আরএসএস বা বিজেপি কোনওরকম সুবিধে না করতে পারে, সেদিকটা নজর দিতে হবে সকলেরই।”
কৌশিকপুত্র জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা ঋদ্ধি সেনও হাজির ছিলেন মঙ্গলবারের মিছিলে। তাঁর মন্তব্য, “আমাদের সঙ্গে যুক্তি দিয়ে কথা বলতে হবে। হুলিগানরা এসে কিছু বলবে, আর তা মেনে নেওয়া হবে, তা চলতে পারে না। ছাত্রসমাজকে বাকরুদ্ধ করা হচ্ছে।” অভিনেত্রী সুরঙ্গমাও ঋদ্ধির সঙ্গে একমত হয়ে বলেন, “যুক্তি দিয়ে কথা বলুন। ছাত্রসমাজের আওয়াজকে বিজেপি রীতিমতো ভয় পাচ্ছে।” রবিবার আক্রান্ত ঐশী ঘোষকে সমর্থন জানিয়ে তাঁরা বলেন, “ঐশী তোমার পাশে রয়েছি।”
অভিনেত্রী উষসী চক্রবর্তীর কথায়, “ছাত্রদের উপর যে আঘাত হানা হচ্ছে, তার তীব্র প্রতিবাদ করছি। আজ জেএনইউতে এমন কাণ্ড হয়েছে, কাল যাদবপুর কিংবা প্রেসিডেন্সিতে হবে। তার আগেই আমাদের উঠে দাঁড়ানো দরকার।” পরিচালক-অভিনেতা-গায়ক অঞ্জন দত্তও মঙ্গলবার মিছিলে শামিল হয়েছিলেন। সোজাসাপটা ভাষায় বলেন, “কেন্দ্রে এই সরকারের বদল চাই।” অঞ্জনপুত্র নীল দত্তও দীলিপ ঘোষকে কটাক্ষ করে বলেন, “ওঁর মাথা আসলে খারাপ হয়ে গিয়েছে।”
সোমবার কলকাতার এক প্রতিবাদী মিছিলে উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়, উজান গঙ্গোপাধ্যায়, অনুষা বিশ্বনাথন। ঋতব্রতর কথায়, ‘আগামী দিনে এই অত্যাচার আরও বাড়বে। যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বিজেপির ছাত্র সংগঠন নেই, সেখানেই ওরা এই হামলা চালাচ্ছে। যদিও ওরা কেউ ছাত্রই নয়, সেটা আলাদা কথা! তবে এই আগুন ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে যতক্ষণ না মানুষের ঘরে গিয়ে পৌঁছচ্ছে, ততক্ষণ মানুষের হুঁশ হবে না হয়তো।’’ অনেকেরই প্রশ্ন, “কেন এমন ঘটনা যাদবপুর বা জেএনইউতেই ঘটে? ঋতব্রত স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষ এটাও বোঝে না যে, মিছিল করতেও পড়াশোনার দরকার। শুধু দেখে, যাদবপুরে মিছিল হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোও সেটা ভাঙিয়েই চলছে।” রাজনীতি মহল থেকে আম জনতার ঘরে ঘরে এখন প্রশ্ন উঠেছে, শেষের শুরুটা কি তাহলে এভাবেই?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.