সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কলকাতা শহর যখন দীপাবলির আলোয় ঝলমলে, ঠিক তখনই বিনোদন জগতে নেমে এল অন্ধকার। মঙ্গলবার ঘুমের মধ্যেই চলে গেলেন পরিচালক সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায় (Sudipto Chattopadhyay)। নীরবেই ঝরে গেল একটা প্রাণ। যাঁর হাত ধরে এক সময়ে টেলিভিশনের পর্দায় জায়গা করে নিয়েছিল ‘খাস খবর’, যাঁর হাত ধরে ডিডি ৭-এ একের পর এক নতুন অনুষ্ঠান ঝলমল করে উঠেছিল, সেই সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায় ৫৯ বছর বয়সে ঘুমের মধ্যেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন।
২৬ অক্টোবরই শুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল তাঁর শেষ ছবি ‘মেঘনা যমুনা’র। যেখানে অভিনয় করার কথা ছিল অভিনেতা সাহেব ভট্টাচার্যর। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালের তরফ থেকে সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ”ভাবতেই পারছি না। এই তো সেদিন ছবি নিয়ে নানা কথা হচ্ছিল। আমার চরিত্র নিয়ে কত কিছু বলেছিল। এত বড় পরিচালকের সঙ্গে কাজ করার জন্য মুখিয়ে ছিলাম। সত্যিই খুব খারাপ খবর। মানতে পারছি না।”
পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের (Shibaprasad Mukhopadhyay) কাছে সুদীপ্ত ছিলেন অভিভাবক। শিবপ্রসাদের কেরিয়ারের শুরুটা সুদীপ্তর সঙ্গে হাত মিলিয়ে। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে শিবপ্রসাদ জানালেন, ”চিত্রনাট্য লেখা আমি শিখেছি সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়ের কাজ থেকেই। সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার প্রথম কাজ ‘মুঝে আয়ে গুসসা’ নামে এক হিন্দি ধারাবাহিকে। সজল বারুইয়ের জীবনকে মাথায় রেখেই তৈরি হয়েছিল এই ধারাবাহিক। সেখানেই প্রথম আমি ওর সঙ্গে কাজ করতে শুরু করি। আমি সহকারি হিসেবে কাজ করতাম। এককথায় উনি আমার দাদা, আমার অভিভাবক, বন্ধু এবং অবশ্য়ই মেন্টর। সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘ঘুম নেই’ নামেও আরেকটি ধারাবাহিক করেছিলাম। খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ ছিল এটা। গুরু দত্তের জীবনের উপর নির্ভর ছিল এই ধারাবাহিক। কাজটি দূরদর্শনের জন্য ছিল। এরপর আমরা একসঙ্গে বেশকয়েকটা সিনেমার চিত্রনাট্যও লিখি। যার মধ্যে ‘লজ্জা’ নামে একটি সিনেমায় কাজ করেছিলাম। যার পরিচালক সুদীপ্তদাই ছিলেন। অবশ্য় সেই সিনেমার কাজ অসম্পূর্ণই থেকে যায়। আজকের সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে ছবির বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ‘লজ্জা’য় ট্রান্সজেন্ডার একটি ছেলের গল্প বলা হয়েছিল। আমি মুখ্য ভূমিকায় ছিলাম, আমার মায়ের চরিত্রে ছিলেন সীমা বিশ্বাস। এই গল্প নিয়ে পরে অবশ্য ‘পঙ্খ’ নামে একটি হিন্দি ছবিও তৈরি করেছিলেন সুদীপ্তদা। এর পরে ‘জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ’ নামে একটি সিনেমায় আমরা একসঙ্গে কাজ করেছিলাম। তবে শুধু সিনেমা বা চিত্রনাট্য নয়, টেলিভিশনে রিয়্যালিটি গেমস শো সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরেই শুরু হয়। একসঙ্গে মিলে ডিডি ৭ -এ ‘গান পয়েন্ট’ নামে একটা শো করেছিলাম। ডিডি ৭ যখন শুরু হয়, তখন ৭ টি অনুষ্ঠান উনিই তৈরি করেছিলেন। ১৯৯৪ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বহু কাজ আমি ওর সঙ্গে করেছি। আমার কেরিয়ারে একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় সেই সময়টা। শেষবার কথা হয়, সেপ্টেম্বর মাসে। সুদীপ্তদার মা মারা যাওয়ার পর। মুম্বইয়ে চলে যাওয়ায়, দূরত্ব বেড়ে গিয়েছিল। তবুও অল্প বিস্তর কথা হত, কাজের কথা হত। সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়ের পূর্ণ কাজের চেহারা বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি পুরোপুরি পায়নি। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এমনকী, সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়কে আমরা সঠিকভাবে মূল্যায়নও করতে পারিনি। এটা খুব বড় খামতি।”
শিবপ্রসাদ আরও বলেন, ”প্রায় তিনযুগ আগে কলকাতায় বসে হিন্দিতে কাজ করা। ন্যাশনাল নেটওয়ার্কের জন্য যাঁরা করেছিলেন, সুদীপ্তদা তাঁদের মধ্যে একজন ছিল। হেমা মালিনীকে নিয়ে ‘নাম গুম জায়েগা’ বলে একটা ধারাবাহিক তিনি তৈরি করেছিলেন, সেই সময়ে ন্যাশনাল নেটওয়ার্কে কাজ করা মানে আজকের দিনে হিন্দি সিনেমা তৈরি করার মতো ব্যাপার। সিনেমা দেখা, সিনেমা সম্পর্কে বোধ তৈরি হওয়া, বিশ্ব সিনেমা সম্পর্কে ধারণা তৈরি করা, সুদীপ্ত চট্টোপাধ্য়ায় না থাকলে আমার জীবনে এসব তৈরি হত না।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় শোকপ্রকাশ করার পাশাপাশি অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে জানালেন, ”শুধুমাত্র খাস খবর নয়, আমি তিনটে ধারাবাহিকের কাজও করেছি সুদীপ্ত চট্টোপাধ্য়ায়ের সঙ্গে। কয়েক মাসে আগে আমাকে ফোন করে বলেছিল, একটা ছবি তৈরি করছি, তোর জন্য চরিত্র রয়েছে। আমি স্ক্রিপ্ট শোনাতে বলেছিলাম। দেখাও করবে বলেছিল। কিন্তু তা আর হল না। শুনেছি একটা ছবির কাজও শুরু করেছিলেন।”
পরিচালক সুদীপ্ত চট্টোপাধ্য়ায়ের প্রয়াণে সোশ্যাল মিডিয়ায় শোকপ্রকাশ করেছেন পরিচালক সুব্রত সেন, অভিনেত্রী দেবলীনা দত্তও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.