শীতে অনীক দত্তর নতুন ছবি। লিখছেন সোমনাথ লাহা।
‘ছাদ’ অবলম্বনে
এই শীতেই দেখা হয়ে যেতে পারে ‘বরুণবাবুর বন্ধু’-র সঙ্গে। খরবটা শুনে চমকে ওঠা পাঠককুলের উদ্দেশে জানাই যে এই বরুণবাবু এবং তার বন্ধুর সঙ্গে দেখা হওয়াটা পুরোটাই ঘটবে সেলুলয়েডে বা অনস্ক্রিনে। অফস্ক্রিনে বা বাস্তবে নয়। আর দর্শকদের সঙ্গে ‘বরুণবাবুর বন্ধু’-র দেখা করানোর পিছনে থাকা নেপথ্যের কারিগর হলেন পরিচালক অনীক দত্ত।
অনীক দত্ত’র নতুন ছবির নাম ‘বরুণবাবুর বন্ধু’-র। প্রখ্যাত সাহিত্যিক রমাপদ চৌধুরির লেখা কাহিনি ‘ছাদ’ অবলম্বনে এই ছবির চিত্রনাট্যের বুনন ঘটিয়েছেন পরিচালক। সুরিন্দর ফিল্মস প্রাঃ লিঃ প্রযোজিত এই ছবির নিবেদক নিসপাল সিং।
বিতর্ক পিছু ছাড়েনি
প্রসঙ্গত ইতিমধ্যেই পরিচালক অনীক দত্ত’র হাত থেকে ‘ভূতের ভবিষৎ’, ‘আশ্চর্য প্রদীপ’, ‘মেঘনাদ বধ রহস্য’-র মতো ছবি উপহার পেয়েছেন দর্শকরা। তবে অনীকের পরিচালিত শেষ মুক্তি প্রাপ্ত ছবি ‘ভবিষ্যতের ভূত’ নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। আচমকাই প্রেক্ষাগৃহ থেকে উবে গিয়েছিল সেই ছবি। এমনকী ছবিকে ঘিরে তৈরি হয়েছিল প্রচুর বিতর্কও। এমনকী তা গড়ায় আদালত পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত অবশ্য যাবতীয় বাক-বিতণ্ডা, বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে প্রেক্ষাগৃহে ফিরে আসে সেই ছবি। ‘বরুণবাবুর বন্ধু’-র ক্ষেত্রেও সেই বিতর্ক পিছু ছাড়েনি পরিচালক অনীক দত্ত’র। তবে এবারের বিতর্ক অবশ্য ছবিকে ঘিরে নয়, তার প্রদর্শনকে ঘিরে। এবারের ২৫তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এই ছবি দেখানো নিয়ে কম টানাপোড়েন হয়নি। প্রসঙ্গত কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের বেঙ্গলি প্যানোরামা বিভাগের উদ্ধোধনী ছবি হিসাবে প্রথমে এই ছবিটি দেখানোর কথা ছিল রবীন্দ্রসদনে। কিন্তু কোনও এক অদৃশ্য অঙ্গুলিহেলনের ফলে কাঁচি চলে এই ছবির প্রদর্শনের উপর। ফলে উৎসবের মূল চত্বর থেকে এই ছবিটিকে সরিয়ে দেওয়া হয়। যদিও দর্শকরা ‘বরুণবাবুর বন্ধু’র দেখা পেয়েছেন, তবে তা সল্টলেকের রবীন্দ্র ও কাকুরা ভবনে। সেখানেই হয় এই প্রদর্শন। কিন্তু ঠিক কি কারণে নন্দন চত্বর থেকে ছবিটিকে সরিয়ে দেওয়া হল সেই সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
সৌমিত্র, ঋত্বিক, অর্পিতা ছবিটি অবশ্য দর্শক ও চলচ্চিত্র সমালোচকদের কাছ থেকে ভূয়সী প্রশংসা আদায় করে নিয়েছেন। ছবিতে মুখ্য চরিত্র অর্থাৎ বরুণবাবুর ভূমিকায় রয়েছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন মাধবী মুখোপাধ্যায়, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়, ঋত্বিক চক্রবর্তী, কৌশিক সেন, শ্রীলেখা মিত্র, বিদীপ্তা চক্রবর্তী প্রমুখ শিল্পীরা।
প্রসঙ্গত এই ছবির হাত ধরে প্রথমবার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়, ঋত্বিক চক্রবর্তীর সঙ্গে কাজ করলেন অনীক দত্ত। ছবির কাহিনি আবর্তিত হয়েছে অশীতিপর বয়স্ক মানুষ বরুণবাবু (সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়)-কে কেন্দ্র করে। সমাজের একাংশ-সহ নিজের পরিবারের সদস্যদের থেকে বরুণবাবু নিজেকে আলাদা তথা ভিন্ন করে রেখেছেন। এহেন বরুণবাবুর সঙ্গে নিজের নাতিকে নিয়ে প্রতিদিন দেখা করতে আসে তার এক পুরনো বন্ধু। বরুণবাবুর নির্লিপ্ততা, একা থাকার মানসিকতার পাশাপাশি চারিত্রিক রুক্ষতার জন্য অন্য সকলেই তাকে এড়িয়ে চলে। আসলে আধুনিকমনস্ক ও চিন্তাশীল এই মানুষটি আজকের সমাজের পরিবর্তন ও পারিপার্শ্বিক পশ্চাদগামিতার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেন না। এমতাবস্থায় হঠাৎই ঘটে যায় এক ঘটনা। তার এক বন্ধু তাকে দেখায় তিনি সকলের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। হঠাৎ করেই সকলে তার প্রতি যত্নবান হতে শুরু করায় অস্বস্তিবোধ করতে শুরু করেন বরুণবাবু। তার পর কী হয়? উত্তর মিলবে ছবির পর্দায়।
ছবিতে অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন দেবলীনা দত্ত, অনুষা বিশ্বনাথন, শিশুশিল্পী সামন্তক দ্যুতি মৈত্র ও অন্যান্যরা। ছবির চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচয়িতা উৎসব মুখোপাধ্যায় ও পরিচালক স্বয়ং। সংগীত পরিচালনায় দেবজ্যোতি মিশ্র। ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি একটি রবীন্দ্র সংগীতও গিয়েছেন বিদীপ্তা চক্রবর্তী। সিনেমাটোগ্রাফার অভীক মুখোপাধ্যায়। সম্পাদনায় অর্ঘ্যকমল মিত্র।
অনীক দত্ত’র ছবির অন্যতম আকর্ষণ হল তার গল্প বলার মুনশিয়ানা, বুদ্ধিমত্তা ও সমগাময়িকতাবোধ। এই ছবি জুড়েও যে সেই মেজাজ অব্যাহত থাকবে এবং তার ছোঁয়া পাবেন দর্শকরা এ কথা বলাই যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.