সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ‘ভালবাসা সবচেয়ে বড় তন্ত্র। সবচেয়ে বড় জাদু’। সেই তন্ত্রসাধনা, কালা জাদু, দশ মহাবিদ্যার তিন দেবীকে নিয়ে স্পিরিচুয়াল থ্রিলার ‘পূর্ব পশ্চিম দক্ষিণ – উত্তর আসবেই’ মুক্তি পাচ্ছে শুক্রবার। যে ছবি তৈরির পিছনে অনেকটাই রয়েছে পুরুলিয়ার প্রকৃতি। এর প্রেক্ষাপটে ছবির অনেকাংশের শ্যুটিং হয়েছে।
লেখক অভীক সরকারের রচনা ‘এবং ইনকুইজিশন’ গল্প সংকলনের প্রথম তিনটি গল্প – ‘শোধ, ভোগ ও রক্তফলক’ নিয়ে এই ছবি। ‘শোধ’ গল্পটি ষোড়শ, সপ্তদশ শতকের এক অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন পুরুষ, যিনি প্রতিটি কাহিনিতেই ফিরে ফিরে এসেছেন। ঠগীরা এই গল্পের অন্যতম গুরুত্বপূ্র্ণ চরিত্র। ‘ভোগ’ এক স্বাতন্ত্র্যবাদী পুরুষের গল্প। তিনি কীভাবে তন্ত্রের মাধ্যমে বিপদ কাটিয়ে উঠলেন, তা নিয়ে আবর্তিত এই কাহিনি। আর ‘রক্তফলক’ বৌদ্ধ যুগের ইতিহাসকে আজকের প্রেক্ষাপটে এনে রচিত। এই তিন কাহিনির সমন্বয়ে তৈরি ‘পূর্ব পশ্চিম দক্ষিণ – উত্তর আসবেই’। জাস্ট স্টুডিও তরফে সুচন্দ্রা ভানিয়া প্রযোজিত এই ছবির পরিচালক রাজর্ষি দে। তাঁর এটাই প্রথম ছবি।
কাহিনি বিন্যাস খানিকটা এরকম – একটি ট্রেনযাত্রায় অভিনেতা কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় তাঁর সহযাত্রী অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়কে জোর করেই তিনটি গল্প শোনান। যা দশমহাবিদ্যার তিন দেবীকে ঘিরে। এই ছবিতে অভিনয়ও করেছেন সুচন্দ্রা। তাঁর কথায়, “তন্ত্র মানেই যেন ভয়। এমন একটা ধারণা আমাদের মনের মধ্যে গেঁথে গিয়েছে। আসলে এই তন্ত্রকেদেখিয়ে অনেকে ভয় দেখায়। ব্যবসা করে। কিন্তু তার যাতে ভুল প্রয়োগ না হয় ছবিতে সেটাই তুলে ধরা হয়েছে।” অনেকের মতে, এটি কুসংস্কা্রের ছবি! কিন্তু পরিচালক রাজর্ষি দে–র দাবি, “এই ছবিতে একটা সামাজিক বার্তা দেওয়া হচ্ছে। তন্ত্র আসলে কিছুই নয়, ভালবাসাই সবচেয়ে বড় তন্ত্র। অনেকে বলেন, সময় খারাপ কাটাতে তাবিজ পরে নাও। কিন্তু এসবের দরকার হয় না। আমরা যদি নিজের কাজ সঠিক ভাবে করে যাই, তাহলে সফল হবই।”
এই ছবির প্রধান চরিত্র, গল্পের চরিত্রের মতোই কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ। তন্ত্রের ভুল প্রয়োগ হলে কী হবে এবং তার সঠিক রাস্তা কী, সেটাই বারবার বাতলে দিচ্ছেন এই চরিত্রে অভিনয় করা পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করছেন প্রায় দু’দশক পর নাট্যকার রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত।
গল্প– শোধ:
বৌদ্ধতন্ত্র মা তারাকে নিয়ে রোমহর্ষক গল্প। মূল চরিত্রে বলিউডের রাজেশ শর্মা। ঠগীদের নিয়ে এই কাহিনী। যেখানে চোখে সুরমা, মুখে দাড়ি, পরনে কালো রঙের জোব্বা নাগরা পায়ে সাদা ঘোড়ায় চড়ে ছুটছেন বুল্লা খাঁ। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে ঠগী হামলা থেকে রেহাই দিতে। পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের খটখটে, শুকনো নিলডি পাহাড়ের কোলে এই ছবির শুটিং। আর এই বুল্লা খাঁ চরিত্রে পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়।
গল্প–ভোগ:
এই গল্প দশমহাবিদ্যার আরেক দেবী মাতঙ্গীকে নিয়ে। এখানে রয়েছেন দামিনী বসু, ঈশিকা দে, গৌরব চক্রবর্তী। এই ছবিতে ঈশিকা ডামড়ি নামে এক চরিত্রে পিশাচিনীর ভূমিকায়।
গল্প–রক্তফলক:
“এত ছোট বাচ্চাকে কোথাও নিয়ে যাওয়ার দরকার নেই। তিন মাসের বাচ্চাকে কোথায় ঝাড়াতে নিয়ে যাবি বল তো? একটা কাজ কর, আন্টিকে বল বাড়িতে তো রোজ ধু্নো দেওয়াই হয়। অনেক বেশি নেগেটিভ এনার্জিকে সরাতে হেল্প করে তেজপাতা। বাড়িতে তো আমরা সবাই তেজপাতা ইউজই করি। তুই আন্টিকে বলিস তেজপাতা যখন ধু্নো দিচ্ছে কয়েকটা তেজপাতা ধুনোর মধ্য দিয়ে জ্বালাতে।” এই গল্পের মুখ্য চরিত্র তিতলির ভূমিকায় সুচন্দ্রা ভানিয়া। অনেকে বলেন, তিতলি নাকি সব জানেন। দেবীর আশীর্বাদ
আছে তাঁর ওপর। কিন্তু তা নয়। নিজের ইচ্ছে আর অন্যকে উপকার করার প্রবৃত্তিতেই তিনি অশুভ শক্তিকে নাশ করছেন। এই গল্পে রয়েছে দেবী ছিন্নমস্তা। কাহিনি অনুযায়ী, এই দেবীর যখন পুজো হচ্ছে, তখন গ্রামের ছোট মেয়েকে সেখানে নিয়ে এসে বলি দিতে। কিন্তু মা কখনোই নরবলি দিতে বলেননি। মায়ের মুখে একটাই কথা – ভালবাসাই সবচয়ে বড় তন্ত্র।আর সেই বার্তাই তুলে ধরা হচ্ছে ছবিতে। তাই, অশুভ শক্তিকে নাশ করতে উত্তর আসবেই, এমনই দাবি পরিচালকের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.