সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অবশেষে একাকীত্ব ঘুচল তাহসানের। রাফিয়াত রশিদ মিথিলার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের প্রায় আট বছর পর নতুন করে সংসার পাতলেন বাংলাদেশি তারকা তাহসান রহমান খান (Tahsan, Roza Ahmed’s marriage)। গায়কের নতুন বিয়ে নিয়ে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে শোরগোল। ‘নতুন ভাবী’র প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ‘ভাইয়া’র প্রাক্তন মিথিলাকে নিয়ে নানা কুৎসা শুরু হয়েছে পদ্মাপারে! ঠিক সেই আবহেই অভিনেত্রী তথা সমাজকর্মী মিথিলার হয়ে ব্যাটন ধরলেন তসলিমা নাসরিন (Taslima Nasrin)। পালটা নিন্দুকদের উদ্দেশে তোপ দাগলেন লেখিকা।
তাহসানের সঙ্গে ১১ বছর বৈবাহিক সম্পর্কে থাকার পর বাংলাদেশের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী তাহসানের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় মিথিলার। তিনি এখন পরিচালক সৃজিতের ঘরণি। তবে মেয়ে আইরার খাতিরেই প্রাক্তন স্বামীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন মিথিলা। এবার তাহসান দ্বিতীয়বার বিয়ের পিঁড়িতে বসতেই নতুন করে ট্রোলড হলেন অভিনেত্রী। আর সেই প্রেক্ষিতেই তসলিমা নিন্দুকদের উদ্দেশে ফেসবুক পোস্ট করে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের উল্লাসকে বিঁধলেন। তসলিমা নাসরিন লিখেছেন, “ফেসবুক ছেয়ে গিয়েছে ‘তাহসান জিতেছে তাহসান জিতেছে’ রবে। কেন তাহসান জিতেছে, বুঝে পেলাম না। সে একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে বা করতে যাচ্ছে। এর মধ্যে জেতাজেতির কি হল? হেট্রোসেক্সুয়ালদের বিপরীত লিঙ্গে আকর্ষণ থাকে, তারা জীবনের কোনও এক সময় পছন্দসই কাউকে পেলে তার সঙ্গে প্রেম করে, লিভ ইন করে বা তাকে বিয়ে করে। এ তো স্বাভাবিক। জিতলো কেন তাহলে তাহসান? আসলে যারা জিতেছে, জিতেছে বলে চেঁচাচ্ছে, তারা মনে করেছে তাহসান এক বাচ্চার বাবা হয়েও, ডিভোর্সী হয়েও একটা ‘কচি সুন্দরী ভার্জিন মেয়ে’ পেয়েছে। মর্ত্যে বসে যত খুশি এবং যেভাবে খুশি নারী ভোগ করার পর স্বর্গে গিয়ে সঙ্গমের জন্য ভার্জিন হুর পেয়ে যাওয়াকে মুসলমানরা ‘জিতে যাওয়া’ই মনে করে। কিন্তু রোজা আহমেদ রক্ত মাংসের মানুষ, হুর নয়, খুব সম্ভবত ভার্জিনও নয়। রাজকন্যার জীবন তার ছিল না, খুব স্ট্রাগল করেছে জীবনে। দারিদ্রের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন সংগ্রাম করে একটি মেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। কঠিন সংগ্রামের দিনগুলোয় নিজের লক্ষে স্থির ছিল বলে, নিজের স্বপ্ন যে করেই হোক পূরণ করতে চেয়েছিল বলে নারীবিদ্বেষী সমাজ রোজাকে কম নিন্দে করেনি, কম অপমান করেনি, কম অপদস্থ করেনি। মিথিলার বিরুদ্ধেও কম কুৎসা রটায়নি এই সমাজ।”
রোজা আহমেদ ১০ বছরের বেশি সময় ধরে ব্রাইডাল মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করছেন। নিউইয়র্কে পড়াশোনা তাঁর। সোশাল মিডিয়ায় খুবই জনপ্রিয় রোজা। তাঁকেই এবার তাহসান জীবনসঙ্গিনী হিসেবে পাওয়ায় বাংলাদেশের নেটিজেনদের একাংশ লম্ফঋম্ফ শুরু করেছে! সেই প্রেক্ষিতে লেখিকার সংযোজন, “তাহসান জিতেছে, এই নিয়ে সবাই উল্লাস করছে। নারীবিদ্বেষী সমাজে সব পুরুষই জেতে। সর্বক্ষণ জেতে। তাদের হার নেই। হারতে হয় শুধু নারীকেই। কিন্তু আমি কি মনে করি মিথিলা বা রোজা হেরেছে? না। তারা একটুও হারেনি। তারা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রথা ভেঙ্গে নিজের যোগ্যতায় স্বর্নিভরতা এবং স্বাধীনতা অর্জন করেছে। নারীবিদ্বেষী সমাজে নারীর জিতে যাওয়ার প্রথম শর্তই এটি। তারা ভ্রুক্ষেপ করছে না কুৎসা বা নিন্দে, এটা জিতে যাওয়ার দ্বিতীয় শর্ত। ভালো না লাগলে তারা তাদের সঙ্গীকে, সে প্রেমিক হোক বা স্বামী হোক, ত্যাগ করতে পারছে, তারা বাধ্য নয় তাদের সঙ্গে এক ছাদের তলায় বাস করতে, জিতে যাওয়ার এটি তৃতীয় শর্ত। স্বামীর আচার ব্যবহার যদি পছন্দ না হয় রোজার, তার স্বনির্ভরতাই তাকে সাহস জোগাবে স্বামীকে ত্যাগ করার, মাথা উঁচু করে একা বাঁচার। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের জেতা কোনও চ্যালেঞ্জ নয়। নারীর জন্যই এ চ্যালেঞ্জ। দুই নারীই তিন শর্তের চ্যালেঞ্জে জিতেছে। চ্যালেঞ্জহীন জয়ের চেয়ে চ্যালেঞ্জপূর্ণ জয় ঢের বেশি গৌরবময়। জয়তু নারী।” তসলিমার পোস্টে বাহবা জানিয়েছেন নারীরাও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.