বিদিশা চট্টোপাধ্যায়: অরিন্দম ভট্টাচার্য পরিচালিত, স্বস্তিকা-বিক্রম অভিনীত ‘দুর্গাপুর জংশন’ মুক্তি পেয়েছে সম্প্রতি। দর্শকদের মধ্যে ইতিমধ্যেই বেশ ভালো সাড়া ফেলেছে। স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় এবং বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের কেমিস্ট্রি এবং তাঁদের অভিনয় প্রশংসিত হচ্ছে। তবে আরও একটি কারণে সোশ্যাল মিডিয়াতে ছবিটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। পরিচালক অরিন্দম ভট্টাচার্যর বিরুদ্ধে মধুবন্তি মুখোপাধ্যায় (এই ছবির চিফ অ্যাসিসস্ট্যান্ট ডিরেক্টর) এবং ছবির অন্যতম অভিনেতা স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়াতে সরব হয়েছেন। যদিও পরিচালক অরিন্দম ভট্টাচার্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন ‘পেমেন্ট রিলেটেড ইস্যুতে আমাদের রেকর্ড ক্লিয়ার, গিল্ডের মধ্যস্ততায় আমরা সব ক্লিয়ার করে দিয়েছি, যদি কারও কোনও বক্তব্য থাকে ফেডারেশনে গিয়ে জানাতে পারেন, আর পরিচালকের অনুপস্থিতি হাস্যকর কথা, আমি একদিন অসুস্থ ছিলাম, তখনকার কয়েক ঘণ্টার কাজ সবাই মিলে উতরে দিয়েছে, এটা নিয়ে ইস্যু করে লাভ নেই, এটা হাস্যকর’। তবে কিছুদিন আগেই স্বস্তিকা এবং বিক্রম ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর অফিসে আসেন ছবির প্রচারে, সেদিনের কথায় একটা ইঙ্গিত ছিল যে চিত্রনাট্যে অনেক রদবদল এবং ইমপ্রোভাইজেশন করা হয়েছে। ছবির মুক্তির পর তাঁদের সঙ্গে আবার যোগাযোগ করা হয়। সেই আলাপচারিতায় উঠে আসে দুটো দিক– বিক্রমের ডিফেন্স মোড এবং স্বস্তিকার স্ট্রেট ব্যাটে সপাট উত্তর। তাঁদের সেই প্রশ্নোত্তর রইল সংবাদ প্রতিদিনের পাঠকদের জন্য।
স্বস্তিকা আপনি ছবির প্রিমিয়ারে যাননি, পরবর্তীকালে যাবেন না সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই সিদ্ধান্ত কী এই ছবিকে কেন্দ্র করেই?
স্বস্তিকা: আসলে অনেকদিন ধরেই দেখছি, ছবির টিমের লোকজন যারা ছবির পিছনে খেটে মরে, তাদের প্রতি একটা অবজ্ঞা ছুঁড়ে দেওয়া হয়। মানুষকে তুচ্ছ করে দেখাটা আমার একদম সহ্য হয় না। এই ছবির পরিচালক তো ছবির মেকআাপম্যানের নামটা পর্যন্ত মনে রাখেননি। যে পরিচালকের নিজের টিমের প্রতি রেসপেক্ট নেই তাকে আর কী বলব! আর এই ছবিটার তো উনি আসলে পরিচালক নন, এবং শেষ তিরিশ মিনিটের স্ক্রিপ্ট উনি লেখেননি। আমার আর বিক্রমের শেষ দিকের একটা সংলাপও ওঁর লেখা না। শেষ দৃশ্যটা যে ভাইজাগে শুটিং হয়েছে, সেটাও ওঁর আইডিয়া নয়।
অরিন্দম ভট্টাচার্যকে নিয়ে এই অভিযোগ বেশ গুরুতর। এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে সেসব রয়েছে….
বিক্রম: একটা কথা বলতে চাই, দেখো আমাদের মধ্যে অনেক মানুষ আছে যাদের শুটের সময় অজস্র ইস্যু হয়েছে, সব শুটিংয়েই হয়ে থাকে। এই ছবির শুটিং নিয়েও নিশ্চয়ই অনেক কমপ্লেন আছে। আমার কমপ্লেন আছে, স্বস্তিকার কমপ্লেন আছে, সবার নানা ধরনের কমপ্লেন আছে। কিন্তু আমরা এমন একটা সময়ে দাঁড়িয়ে যেখানে ৯০ শতাংশ ছবি দর্শক পর্যন্ত ভালোভাবে পৌঁছতে পারে না, বা ব্যবসা হয় না। আমি দেখলাম এই ছবির ব্যবসা পিক আপ করছে। তো এই ছবির ক্ষেত্রে আমার যদি কাউকে নিয়ে বিশাল অভিযোগ থাকে তাহলে সেটা আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে জানাব, সোশ্যাল মিডিয়া বা মিডিয়াতে সেসব বলব না। এই মুহূর্তে ছবিটা এবং ছবির সাফল্যের প্রতি মন দিতে চাই। এটা আমার টেক। সেটে কী হয়েছে সেটা নিয়ে কথা বলতে চাই না, মধুবন্তি এবং স্বস্তিকাদি যেমন একটা স্ট্যান্ড নিয়েছে, এটা এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আমার স্ট্যান্ড– নো ম্যাটার হোয়াট হ্যাজ হ্যাপেন্ড বাট আই ওয়ান্ট টু কনসেনট্রেন্ট অন দ্য ফিল্ম রাইট নাউ। ছবিটার আরও বেটার করার একটা হিট ফিল্ম হওয়ার সম্ভাবনা আছে, তাই আমার অভিযোগ বা কমপ্লেন যা থাকতে পারে, সেটা এখন সামনে ডিসকাস করব না।
স্বস্তিকা: হ্যাঁ, এটা সিরিয়াস অভিযোগ। যারা পরবর্তীকালে অরিন্দম ভট্টাচার্যর সঙ্গে কাজ করবে ভাবছে, তাদের জানা উচিত। এখনই তো বলার সময়, এখন না বললে আর কখন বলব। একবছর পরে আমার এটা নিয়ে কথা বলে তো আর লাভ নেই। ছবির লিড কাস্ট, চিফ এডি যখন বলছে, দেয়ার ইজ এ অ্যামাউন্ট অফ ট্রুথ ইন ইট!
পরিচালকের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে এমন অভিযোগ কী টলিউডের পক্ষে ভালো বা নজিরবিহীন উদাহরণ সেট করবে?
স্বস্তিকা: আমার মনে হয় না এখানে কোনও উদাহরণ সেট করা যায়। কোনও কিছুতেই কারও কিছু এসে যায় না। কারণ এর আগেও দেখেছি এক প্রযোজক অনেক লোকের টাকা দেয়নি, বঞ্চিত করেছে, কিন্তু তারপরেও সে আবার ছবি করেছে, লোকেরা তাতে কাজও করেছে।
‘শিবপুর’-এর সময়ও নানা সমস্যার কথা উঠে এসেছিল! আবার কাজ করলেন কেন?
স্বস্তিকা: ‘শিবপুর:-এও প্রোডাকশনে নানা সমস্যা ছিল, কিন্তু অরিন্দম ভট্টাচার্য তখন বলেছিলেন সেটা প্রোডিউসারের দোষ, কিন্তু এখানে তো তিনিই প্রোডিউসার। আর একই গন্ডগোল যখন দ্বিতীয়বার হয়, তখন বোঝাই যায় গন্ডগোল কার! ওঁর সঙ্গে ভবিষ্যতে কাজ করার প্রশ্নই নেই। এবং ওঁর সঙ্গে আমার যোগাযোগও নেই, আমি অনেক মাস ধরে ওর নম্বর ব্লক করে দিয়েছি। বিক্রম ওর মতো করে স্ট্যান্ড নিয়েছে। কিন্তু ছবির চিফ এডি যদি একটা পোস্ট করে এবং আমি জানি যে সেটা সত্যি কথা তাহলে সেটা তো আমাকে শেয়ার করতেই হবে।
‘দুর্গাপুর জংশন’-এর রেসপন্স কেমন পাচ্ছেন?
বিক্রম: খুব ভালো রেসপন্স পাচ্ছি। দর্শক দেখে ভালো বলছে। রিভিউ খুব স্ট্রং, আমাদের পারফরম্যান্স নিয়ে সবাই প্রশংসা করছে। স্বস্তিকা একজন এত ভালো অভিনেত্রী, তার পাশে আমার অভিনয় নিয়েও যখন প্রশংসা হচ্ছে সেটা আরও ভালো লাগার জায়গা। সিনেমা হলে শনি, রবিবারের ফুট ফল খুব ভালো।
স্বস্তিকা: এর মধ্যে নেতাজি নগরে একটা শুট করছিলাম, রাস্তায় র্যানডমলি লোকজন এসে ছবিটার প্রশংসা করল। তাদের আমি চিনিও না, তাঁরা দুপুরেই ছবিটা দেখেছেন, বিকেলে আমাকে দেখতে পেয়ে জানালেন। ওভার অল ফিডব্যাক ভালো।
‘দুর্গাপুর জংশন’-এ দুজনের কেমিস্ট্রি অসম্ভব ভালো, সেটা কী করে ক্রিয়েট হল?
বিক্রম: আমার আর স্বস্তিকার ‘সাহেব বিবি এবং গোলাম’-এ কাজ করার একটা অভিজ্ঞতা আছে, সেখানে একটা কেমিস্ট্রি তৈরি হয়েছিল। এই ছবিতে বোধহয় সেখান থেকেই শুরু করেছি। আর শুটিংয়ের সময় যখন আমরা ইমপ্রোভাইজও করছি সেটা খুব সহজভাবে হয়ে যাচ্ছিল। আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থান ছিল, যেটা সাহায্য করেছে। সিনগুলোও তাই অন্য মাত্রা পেয়েছে।
স্বস্তিকা: আমরা শেষের দিকে যে লম্বা সিকোয়েন্স তার প্রতিটা দৃশ্য নিয়ে কথা বলেছি, রি-রাইট করেছি, ইমপ্রোভাইস করেছি, সংলাপ তৈরি করেছি, কীভাবে কী করা যায় সেটা নিয়ে আলোচনা করেছি। তারপর আধঘণ্টা ব্রেক দিয়ে শুটিং শুরু করেছি। আর ক্যামেরা চলতে শুরু করলে বাকি পৃথিবীর সমস্ত ক্যাকোফনি দূরে মিলিয়ে যায়। তখন আমরা কেবল চরিত্র। সেই সময় ডিরেক্টর সেটেও ছিলেন না। আমাদের পেয়ারিং দর্শকের ভালো লাগছে। অন্যান্য পরিচালক তো আছেন, তাদের যদি মনে হয় তারা আমাদের আবার কাস্ট করবেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.