ছবি : ইনস্টাগ্রাম
‘নিখোঁজ সিজন টু’ মুক্তির আগে খোলামেলা আড্ডায় স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। মুখোমুখি বিদিশা চট্টোপাধ্যায়
কলকাতায় ফাইনালি বছর শেষে একটু ঠান্ডা পড়ল। এই একটা শেষ আর অন্যটা শুরু- এই সময় দাঁড়িয়ে কী মনে হয়?
– আমার প্রতিবার বছরের শুরুতে মনে হয়, সারা বছরের দরকার নেই, কিন্তু এই শীতের সময়টাতে যেন একটা প্রেমিক থাকে। এটা এই এখন মনে হয়েছে তা নয় কিন্তু। আই হ্যাভ অলওয়েজ ফেল্ট দিস, ধরো গত দশ বছর ধরে এটা মনে হয়েছে। সারা বছর থাকার দরকার নেই। পুজোটা শেষ হয়ে যেই হেমন্ত পড়বে- সেই সময় থেকে বসন্তকাল পর্যন্ত একটা প্রেমিক থাকুক। তারপর না থাকলেও চলবে। প্রতিবারই খুব গরমে প্রেমটা হয়। যখন দরকার তখন থাকে না। যা চাই তা ভুল করে চাই, যা পাই তা চাই না। এটাই জীবনের সত্যি।
শীত পড়ার মুখে কখনও প্রেমে পড়েছেন?
– পুরনোগুলো ধরে কী হবে! না, শীতে নতুন প্রেম হয়নি।
আপনি তো বম্বে থেকে ফিরলেন সদ্য…
– একটা হিন্দি ছবির লুক টেস্ট ছিল। ডিটেল বলতে পারব না। তবে ইদানীংকালে এই পরিচালকের ছবি প্রশংসিত হয়েছে।
কোন জনারের ছবি?
– থ্রিলার ছবি। এটার লুক টেস্ট ছিল, রিডিং ছিল। আর এগুলো আমাকে সবসময় খুব এক্সাইট করে। নতুন টিম, তাদের এনার্জি, ভালো কিছু করার ইচ্ছে- সব মিলিয়ে নতুন কিছু করার আনন্দ। চুলটা একটু বদলাতে হয়েছে। রং করেছি। কিন্তু গোড়ার দিকে সাদাগুলো থাকবে, দেখাও যাবে। এবং কলকাতার যে ছবিগুলোও করছি এখন প্রায় সবকটাতেই কমবেশি আমার পাকাচুল ব্যবহার করতে পারব। এই বিষয়টা নিয়ে হ্যাপি।
সাধারণত আপনি যে ছবিগুলোতে অভিনয় করেন বয়স কমাতে বা খুব বেশি বাড়াতে হয়নি। অথচ অন্যদিকে নায়কদের বিপরীতে অল্পবয়সি অভিনেত্রীদের মায়ের চরিত্র করতে দেখেছি কিংবা খুব বেশি বয়স্ক নায়কদের প্রায় মেয়ের বয়সি নায়িকা।
– আমি সবসময়ই যে কোনও কিছুতে কমফর্টেবল। ‘অনুব্রত ভালো আছি’ বা ‘গুলদস্তা’, সেখানে বয়স্ক চরিত্র করেছি। আসলে কলকাতা হোক বা মুম্বই আমি নিজের জায়গাটা বানাতে পেরেছি নিজের যোগ্যতা দিয়ে, কাজ দিয়ে। মানুষ আমার কাজটা মনে রেখেছে, তাই আমি এখনও কাজ করে যাচ্ছি। আর এটা তো বুঝতে হবে, কুড়ি বছর বয়সে যে চেহারা থাকবে সেটা চল্লিশে পালটাবেই।
২০০১ সালে ‘হেমন্তের পাখি’ মুক্তি পায়। কেরিয়ারের প্রায় ২৫ বছর। অনেকটা সময়, কী মনে হয়?
– আমার তো মনে হয়, এই সেদিন স্কুল থেকে বেরলাম। এই তো সেদিন যেন স্কুল থেকে রেজাল্ট নিয়ে ট্রামে করে বাড়ি ফিরলাম। তারপরে হোয়্যার ডিড অল দ্য ইয়ার্স গো? তার মধ্যে ছেলেমেয়েরাও কলেজ পাস করে বেরিয়ে গেল। এটা কখন হল?
অভিনেত্রী ছাড়া অন্য কিছু হতে চেয়েছেন কখনও?
– অভিনেত্রী না হলে হাউস ওয়াইফ হতাম। হ্যাঁ, সত্যি! আমি তাই-ই হতে চেয়েছি। আমাদের বাড়িতে, বোন ছিল ডাকাবুকো। সবসময় বলত, চাকরি করব, বাবা-মাকে দেখব। আর আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করত, বড় হয়ে কী হবি, আমি বলতাম, মায়ের মতো হব। অনেক ছেলেপুলে হবে, আর সংসার করব। ওটা হলে আর অভিনয় করা হত না। কিন্তু অভিনয় না করলে হাউস ওয়াইফ হতাম, কোনও সন্দেহ নেই।
এত কিছু পেরিয়ে আসার পর, ২৫ বছর আগেকার স্বস্তিকাকে কী বলতে ইচ্ছে করে?
– (একটু চুপ থেকে) কনগ্র্যাচুলেশন, ইউ হ্যাভ সারভাইড (হাসি)। আসলে যখনই আমাদের জীবনে কোনও ক্রাইসিস আসে, বাধা বিপত্তি আসে, মনে হয় আর পারছি না। মানে ধরো, মনে হল কালকের সকাল আর দেখব না, বা আমিই আর কালকের সকালটা দেখতে চাই না। যখন বিপর্যয় এসেছে পেশাগত কারণে বা টক্সিক সম্পর্কের কারণে, কিংবা বিচ্ছেদ হতে পারে, সন্তান কাছে না থাকা হতে পারে, আর্থিক কারণ হতে পারে- আমার জীবনে এইসবেরই মুখোমুখি হতে হয়েছে। বলতে চাইছি, যখনই মনে হয়েছে আর পারব না, আবার সেই সময়টাও পেরিয়ে গিয়েছে। তখন পিছন ফিরে তাকালে মনে হয় আই হ্যাভ সারভাইভড। নিজেকে একটু বাহবা দিতে ইচ্ছে করে। ২০১৪ সালে যখন মুম্বই যাই, কাউকে চিনতাম না। মনে হল ঠিক আছে, একটু ট্রাই করে দেখি। এই ট্রাই করে দেখার ইচ্ছেটাই আমাকে এতদিন ধরে চালনা করেছে।
‘নিখোঁজ টু’-এর ট্রেলার দারুণ লাগল। সিজন টু-তে ‘বৃন্দা বসু’-কে কীভাবে পাব? আগের সিজনের থেকে এটা কতটা আলাদা?
– এখানে ‘বৃন্দা বসু’ অ্যাংরি মিডল এজেড উওম্যান! মেয়েকে পেতে যা খুশি তাই করতে পারে। সিজন ওয়ান-এর থেকে পুরোটাই আলাদা। আগেরটা ইন্টারোগেশন বেসিসে তৈরি করা, সিজন টু-তে এভরিথিং ইজ হ্যাপেনিং অন গ্রাউন্ড। অনেক বেশি অ্যাকশন। আর আমি পরিচালক অয়নদাকে বলেছিলাম, আমাকে কাউকে একজনকে মারতে দাও। পুরুষ যখন পুলিশের ভূমিকায় দেখা যায়, তারা খিস্তিও মারে, আবার কেলায়ও, আমি মহিলা পুলিশ বলে তুমি আমাকে দুটো সিজনে এসব থেকে বঞ্চিত করতে পারো না। আমি জোর করে করিয়ে নিয়েছি।
‘নিখোঁজ’ হতে ইচ্ছে করেছে?
– মাঝে মাঝে মনে হয়, বেড়াতে যাব। যেখানে কেউ চিনবে না। বিচে শুয়ে থাকব, কেউ এসে সেলফি তুলবে না। আবার অনেককে নিখোঁজ করে দিতেও ইচ্ছে করেছে। লম্বা লিস্ট। ভেবেছিলাম কোভিডে হারিয়ে যাবে, যায়নি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.