ছবি: ফেসবুক
সন্দীপ্তা ভঞ্জ: পদ্মাপাড়ে জমে উঠেছে সুদীপা চট্টোপাধ্যায়ের (Sudipa Chatterjee) রান্নার শো। কলকাতার ‘হেঁশেল রানি’র নিত্যদিন নতুন পদের বাহার শিখে খুশি বাংলাদেশের দর্শকরা। তবে সম্প্রতি সেই শোয়ে গোমাংসের এক পদ রাঁধা নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় একেবারে কেলেঙ্কারি কাণ্ড! অনবরত হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে সুদীপাকে। কখনও তাঁর পাঁচ বছরের ছেলে আদিদেব চট্টোপাধ্যায়কে অপহরণ করার হুমকি আসছে তো কখনও বা আবার সঞ্চালিকাকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। মুহুর্মুহু এই হুমকির জেরে ভেঙে পড়েছেন সুদীপা চট্টোপাধ্যায়! সংবাদ প্রতিদিনকে তিনি জানালেন, “আমাকে টার্গেট করা হচ্ছে বারবার।”
গোমাংস বিতর্কে ঠিক কী বললেন সঞ্চালিকা? সুদীপার মন্তব্য, “যাঁরা এটা নিয়ে ট্রোল করছেন, তাঁদের মধ্যে সিংহভাগ মানুষ সেই ভিডিওটা দেখেননি, আমি নিশ্চিত। আমি গোরুর মাংস খাওয়া তো দূর অস্ত, রান্নাও করিনি। এমনকী ছুঁইওনি। দ্বিতীয়ত, করিম জাহান নিজে রান্নাটা করেছেন। ভিডিওগুলো এখনও অপরিবর্তিত অবস্থায় রয়েছে। যে কেউ চাইলে দেখে নিতে পারেন। কোথাও দেখতে পাবেন না যে আমি গোমাংস স্পর্শ পর্যন্ত করেছি।” বিষয়টিকে রাজনৈতিক রং দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগও উঠেছে। এপ্রসঙ্গে সুদীপাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, “আমার সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বাবুল সুপ্রিয়র ছবি পোস্ট করে অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ করা হচ্ছে। আমি বলতে চাই, এটার সঙ্গে তৃণমূল বা কোনও রাজনৈতিক দলের কোনও সম্পর্ক নেই। বিজেপির নাম করে অনেক হুমকি মেসেজও আসছে। আমাকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা কিংবা আমার ছেলেকে অপহরণ করার মতো খোলা হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমার মৃত মাকে নিয়েও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হচ্ছে। হুমকি বার্তা দিয়ে জয় শ্রী রাম লিখছেন অনেকে। আমি বিশ্বাস করি না এঁরা কেউ আদৌ বিজেপি দলের লোক। এটা আদ্যোপান্ত অসৎ উদ্দেশ নিয়ে করা।”
এরপরই সুদীপা চট্টোপাধ্যায়ের সংযোজন, “ফেসবুক লাইভে আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, আমি কেন সেখানে দাঁড়িয়ে রইলাম? এপ্রসঙ্গে বলতে চাই, ওখানে যখন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটা বাজছে, আমি কেন সরে যাব? শোয়ের উদ্যোক্তারা আমায় জানিয়েছিলেন গোমাংস ওঁদের জাতীয় খাবারের মধ্যে অন্যতম। আর কোরবানির ইদ নিয়ে অনুষ্ঠানটা হচ্ছিল। তাই অন্যের ধর্মাচরণে আঘাত দিতে চাইনি। আমি বাংলাদেশে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়েছি। আমার দেশ ধর্মনিরপেক্ষ। ছোট থেকে ‘মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম’ গানটি শুনে বড় হয়েছি। সেক্যুলার দেশের একজন নাগরিক হয়ে অন্যের ধর্মবিশ্বাসে আঘাত করাটা অন্যায়। ক্রিকেটের মাঠে যখন ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচে পদ্মাপাড়ের জাতীয় সঙ্গীত বাজে, তখন আমাদের দেশের খেলোয়াড়রা তো কেউ সরে যান না।”
সুদীপা জানালেন, “শুটিংয়ের দিন স্টুডিওতেও মুরগির মাংস ছাড়া অন্য কোনও মাংস রান্না হয়নি, আমি যাব বলে। এমনকী যাঁদের বাড়িতে আমি আমন্ত্রিত হয়েছি, তাঁরা প্রত্যেকে আমার জন্য নানা পদ রেঁধেছেন, কিন্তু গোমাংস করেননি, পাছে আমি কিছু মনে করি। এতটা যাঁরা আমার ধর্ম সম্পর্কে সহিষ্ণু, তাঁদের ধর্মাচরণে আমি কী করে আঘাত করতাম? না আমি খেয়েছি, না রান্না করেছি, না ছুঁয়েছি। সকলের কাছে আমার অনুরোধ ভিডিওটা দেখুন। কাকে কান নিয়ে গিয়েছে বলে… চেঁচাবেন না!”
শোয়ে গোমাংস রান্নার ইস্যুতে তাঁর বিরুদ্ধে হিন্দুধর্মে আঘাতের অভিযোগ ওঠায় ভীষণই দুঃখিত সুদীপা চট্টোপাধ্যায়। উপরন্তু লাগাতার কুকথা, আক্রমণ! “কোন সনাতন ধর্ম আমাদের শেখায় সন্তান এবং মৃত মাকে অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ করা? এটা আমাদের সনাতন হিন্দু ধর্ম শেখায় না। গান্ধিজী স্বয়ং বলে গিয়েছেন, ঈশ্বর-আল্লা তেরো নাম, সবকো সম্মতি দে ভগবান… যাঁরা এত নোংরা ভাষায় গালিগালাজ করছেন কিংবা সমালোচনা করছেন, তাঁরা কি গান্ধিজীর থেকেও বড় হিন্দু?”, প্রশ্ন সুদীপার। অনবরত এত হুমকির জেরে পাঁচ বছরের ছেলে আদিদেবকে কোথাও খেলতে অবধি যেতে দিতে পারছেন না বলে জানালেন সুদীপা চট্টোপাধ্যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.