দুলাল দে: ঘন্টা চার পরে প্রিয়া সিনেমা হলে টনিকের (Tonic Movie) প্রিমিয়ার। আসছিলেন এসপ্ল্যানেড থেকে সাউট সিটিতে নিজের আবাসনের দিকে। গাড়িতে কিছুতেই যেন স্থিরভাবে বসে থাকতে পারছিলেন না। উসখুস করেই যাচ্ছিলেন। “চল, একবার প্রিয়াটা ঘুরে যাই। সব কিছু ঠিকঠাক সাজানো হয়েছে তো? রিলিজের দিনটা এলেই এমন টেনশন হয় না..।”
প্রথম শোয়ের পর সবকিছু এতটাই ঠিকঠাক হয়েছে যে, প্রিমিয়ারের পর ভোররাত পর্যন্ত জন্মদিনের পার্টি করে এদিন যখন বেলায় ঘুম থেকে উঠলেন, মুখে সেই পরিচিত হাসি। টলিউড সুপারস্টার দেব (Dev) বললেন, “চারিদিক থেকে যা রিপোর্ট আসছে, ঠিকঠাক লেগে গেছে মনে হচ্ছে।” সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ‘টনিক’ ছবির স্পেশ্যাল শোয়ের আবদার করেছেন বলেও জানান দেব।
কিন্তু টনিকের আসল সুপারস্টার কে? দেব না ৮২ বছরের পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়? যিনি সকাল থেকে ভাসছেন শুধু অভিনন্দনের বার্তায়। “আপনারা হয়তো পর্দায় টনিক দেখলেন। কিন্তু টনিকের শ্যুটিংটাই হচ্ছে টনিকের ভিতর আসল টনিকের গল্প।” নিজে হিরো, প্রোডিউসার। কিন্তু প্রোমোশনে সবসময় এগিয়ে দিয়েছেন পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যা নিয়ে এদিন উচ্ছ্বসিত পরাণ বলছিলেন, “দেব কত বড় হিরো, তার থেকেও কত বড় হৃদয় এই সিনেমাটা করে সত্যিই বুঝতে পেরেছি। একবার ‘মীরাক্কেলে’ এসে দেব বলেছিল, পরাণদা, বাবার জন্য একটা বাড়ি কিনতে চাই। টনিকের শ্যুটিংয়ের সময়ও দেখলাম, সেই একই আবেগটা রয়ে গিয়েছে। ফলে ওর আর আমার কিছু কিছু ডায়ালগ যেন বাস্তব থেকে উঠে এসেছিল।”
কিন্তু তা বলে ৮০ বছর বয়সে রাফ্টিং? পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এখন ৮২। দু’বছর আগে যখন টনিকের শ্যুট হচ্ছিল, দেব তখন পাশাপাশি ‘গোলন্দাজ’ ছবির নগেন্দ্রপ্রসাদ হয়ে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সেই সময় তিস্তার বুকে রাফ্টিং। ‘টনিক’ ছবির জলধর সেন থুড়ি পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সত্যি বলতে শুরুতে রীতিমতো ভয় পেয়ে তিস্তায় নামতে চাইছিলাম না। কিন্তু দেব এমন গ্যাস খাওয়ালো, ভিতরে ভিতরে একটা জোশ পেয়ে গেলাম। বললাম, চেষ্টা করেই দেখি না। ব্যস হয়ে গেল। বলছিলাম না, সিনেমার পর্দায় যা দেখেছো, একইভাবে শ্যুটিংয়েও দেব আমাকে সব সময় গ্যাস খাইয়ে গাছে তুলে দিত।”
কিন্তু কোন ভরসায় আপনি ৮০ বছরের একজন বৃদ্ধ মানুষকে তিস্তার বুকে রাফ্টিংয়ে নামিয়ে দিলেন? যদি কিছু হয়ে যেত? লোকেশনে ডাক্তার ছিল? দেব হাসতে হাসতে হাসতে বললেন, “পরাণদাকে আর যাই বলুন, বৃদ্ধ বলবেন না প্লিজ। পরাণদা’র সঙ্গে মিশলে বুঝতে পারবেন, পরাণদা’র শরীরে ভীষণ জোর। আমি জানতাম, শুরুতে ভয় পেলেও পরাণদা রাফ্টিংটা করে দিতে পারবে। পরাণদা’কে দিয়ে করিয়ে নেওয়াটাই তো টনিকের কাজ।”
শ্যুটিংয়ের শুরুতে একটু গতির সঙ্গেই ডায়লগ বলতেন দেব। সেই ঘটনাগুলি স্মৃতিচারণায় পরাণ বন্ধ্যোপাধ্যায় বলেন, “দেব যে এত ভাল বাধ্য আর মনোযোগী ছাত্র, সত্যি আগে জানতাম না। টনিকে প্রথাগত হিরোর ইমেজ ছেড়ে পুরো চরিত্রের মধ্যে ঢুকে গিয়েছে। শুরুতে ডায়ালগ থ্রো-র মধ্যে একটু গতি থাকত। একদিন বোঝালাম ব্যাপারটা। তারপর থেকে যেখানেও সংশয় হয়েছে, বারবার জিজ্ঞাসা করেছে, পরাণদা একটু দেখো তো, সব ঠিক আছে কিনা। ছেলেটার মনটা সত্যিই শিশুর মতো সরল। টনিকের চরিত্রটা দেবের জন্যই একদম খাপে খাপে মিলে গিয়েছে।”
দেবের আমন্ত্রনেই ‘টনিক’ ছবির প্রিমিয়ার শো দেখতে প্রিয়ায় হাজির ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও (Sourav Ganguly)। পরিবারের সঙ্গে ডিনারে যাবেন বলে, পুরো সিনেমাটা দেখতে পারেননি। দেব বললেন, “সিনেমাটা দেখার জন্য সৌরভ ফের একটা শো করতে বলেছে। দেখছি, কবে ফের আরেকটা স্পেশ্যাল শো করা যায়।”
জন্মদিনের সকালে কথা বলবেন কি, ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে জন্মদিনের পাশাপাশি টনিকের সাফল্যর জন্যও অভিনন্দন জানিয়ে একের পর এক ফোন আর বার্তা আসছে। সঙ্গে আসছে হাউসফুলের খবর। করোনা (Coronavirus) আবহের পর মধ্যবিত্ত বাঙালি যে ‘টনিক’ দেখতে হলমুখী হচ্ছেন। দ্বিতীয় দিনের ট্রেন্ডেই বোঝা যাচ্ছে। “বাঙালি যে, বাংলা সিনেমা দেখতে পরিবার নিয়ে হলমুখী হচ্ছে, এটাই তো বাংলা সিনেমার জন্য ভাল খবর।” কথা বলার মাঝেই দেবের মোবাইলে ফোন এল পরাণ বন্ধ্যোপাধ্যায়ের। –– হ্যালো… টনিক…!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.