কয়েকদিন আগেই ‘ঝড়’-এর শুটিংয়ে দার্জিলিংয়ে গিয়েছিলেন সৌরভ-বনি। সেখানেই ধুন্ধুমার অ্য়াকশন। ঠিক কী ঘটেছিল? জানালেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়
শীত পড়ার মুখে টলিউডের দুই অভিনেতাকে পাওয়া গেল দার্জিলিং থেকে একটু দূরে। একেবারে অন্য মুডে বনি সেনগুপ্ত (Bonny Sengupta) এবং সৌরভ দাস (Sourav Das)। আপাতভাবে তাঁরা বন্ধু হলেও এখানে তাঁদের মধ্যে একটা চাপা টেনশন, এমনকী সংঘাতও। অ্যান্থনি জেন পরিচালিত ছবি ‘ঝড়’-এর শুটিংয়ে সেদিন ছিল ‘দার্জিলিং জমজমাট’। অর্থাৎ ছবির ক্লাইম্যাক্স শুটিং যাকে বলে। ফাইট মাস্টার উপস্থিত। রেন মেশিনও রয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে, অ্যাকশন দৃশ্যর তোড়জোড়। মুখোমুখি হবেন বনি, সৌরভ এবং নবাগতা অভিনেত্রী অমৃতা।
শোনা যাচ্ছে, এই ছবিতে আপনি ডার্ক চরিত্রে?
সৌরভ: ডার্ক না বলে গ্রে বলা ভালো বোধহয়। এইটুকু বলা যায়, ‘শৌভিক’ সোজা মানুষ নয়। অমৃতা নর্থ বেঙ্গলে যে কলেজে পড়তে আসে, আমি অর্থাৎ শৌভিক সেখানকার জি.এস.। আর এমনই চরিত্র আমাকে দেওয়া হয় যেটা নিয়ে খুব বেশি বলতে পারি না। তবে আমি, বনি আর অমৃতা– আমাদের ঘিরেই গোটা ছবিটা।
সাধারণত ইনটেন্স গ্রে-চরিত্রেই আপনাকে কেন বারবার কাস্ট করা?
সৌরভ: আগের যে সব চরিত্র করেছি সেগুলো দেখেই হয়তো বারবার এমন চরিত্র অফার করা হয়, কে জানে। হয়তো খুব কনভেনশনাল দেখতে নয় আমাকে। একটু কনভেনশনাল হলে হয়তো ‘ভালো’ ছেলেটা প্লে করার সুযোগ বেশি পেতাম।
আপনি নিজে কেমন চরিত্রে অভিনয় করতে চান?
সৌরভ: আগে কখনও ভাবিনি বলব, ইদানীং ‘হিরো’-র চরিত্র আমাকে খুব টানছে। কোথাও মনে হচ্ছে আমিও হিরো হতে চাই, কেবলমাত্র দারুণ পার্শ্বচরিত্রে আটকে থাকতে চাই না। আগে তিনটে দারুণ দৃশ্য থাকলেই মনে হত করব।
হ্যাঁ, মানে নায়কের কাছের বন্ধু বা ভাই– এমন একটা স্পেসে আপনাকে দেখা গিয়েছে একাধিকবার…
সৌরভ: আমি বেশিরভাগ সময় ওই ‘মাঝের’ ছেলেটার চরিত্রে অভিনয় করেছি। আমার উত্থান সেখান থেকেই। বাট আই অ্যাম বিইং ভেরি ফ্র্যাংক যে, আর মাঝের ছেলেটা হয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে না। এমন দু-একটা ছবি ছেড়েছি যেখানে আমি লিড নই অথচ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে। এই রকম অফার মুম্বই থেকে এলে করতে পারি।
বিয়ের এক বছর হতে চলল। কেমন লাগছে?
সৌরভ: বিবাহিত জীবন ভালো কাটছে। অল্পস্বল্প ঝগড়া, খুনসুটি নিয়ে। আর এই অল্প ঝগড়া হওয়াটা বেসিক। সব এক্কেবারে মসৃণ থাকলে বরং হালকা অস্বস্তি হয়। সবে জীবন শুরু করেছি। আর এখন তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করে।
গ্ল্যামার জগতে এত তাড়াতাড়ি কেউ বিয়ে করে না, আপনারা সেই পথে হাঁটেননি…
সৌরভ: হ্যাঁ, কিন্তু বলিউডেও আজকাল সবাই তাই করছে। আলিয়াকে দেখো বা কিয়ারা-সিদ্ধার্থ। এবং বিয়ের পরও চুটিয়ে কাজ করছে। বিয়ে হলে হিরো বা হিরোইন হওয়া যাবে না– এই মিথ এখন ভেঙে দিয়েছে বলিউড।
দর্শনার সম্পর্কে এমন কিছু যেটা বাইরের জগৎ জানে না!
সৌরভ: ইয়েস, এটা আমি বলতে চাই। আমি বাড়িতে খুব শান্ত আর ও প্রচণ্ড কথা বলে। মানে একেবারে নন-স্টপ। যদিও বাইরে তাড়াতাড়ি নিজেকে খুলতে পারে না। আমি আবার বাইরে গেলে, আই ক্যান পুট অন এ শো।
এবং এটার জন্য লোকে আপনাকে ভুল বোঝে..
সৌরভ: হ্যাঁ, ভুল বোঝে। ঠিক জানি না কেন। লোকে আমার ইমেজ নিয়ে একটা ধারণা করে ফেলেছে। যেসব চরিত্রে অভিনয় করেছি সেটাও কারণ হতে পারে। এবং ধরেই নেয় আই অ্যাম আ ডার্ক গাই, শুটিং-এ লোকে ভাবে, আমি প্রচণ্ড নেশা করি। ভদ্র, শান্ত ছেলের ইমেজে আমাকে লোকে রিলেট করতে পারে না।
এই ছবিতে কে গুডবয় কে ব্যাড বয়?
সৌরভ: বনি ইজ অলওয়েজ এ গুড বয়। ছবিতে আমি গুডবয় কিন্তু ওই আর কি! কে গুড কে ব্যাড, নাকি দুজনেই গুড– সেটা ছবির শেষে জানা যাবে।
সকাল থেকেই অ্যাকশন দৃশ্যে দেখা যাচ্ছে আপনাকে। তার মানে বনি আজ গোটাদিনই মারপিট করবেন?
বনি: শুধু সকাল নয়, আজ গোটা রাত শুটিং হবে, ভোর পর্যন্ত। মোক্ষম অ্যাকশন সিকোয়েন্স সব সন্ধের পর। তার ওপর এই ঠান্ডায় বৃষ্টিতে ভিজে ফাইট।
ফাইট সিকোয়েন্স অভিনয় করার পূর্ব অভিজ্ঞতা তো আপনার রয়েছে।
বনি: হ্যাঁ, আগে তো খুব ফাইট সিকোয়েন্স হত। এখন সেটা অনেকটা কমেছে। তাও ‘খাদান’-এ দেবদাকে দেখতে পাব। জিৎদা এখনও কনটিনিউ করছে। ‘জানবাজ’-এ প্রচুর ফাইট সিকোয়েন্স ছিল। তখন সেই বাজেটটাও ছিল। এখন তো কমে গিয়েছে। আর আমার দারুণ লাগে ফাইট সিন করতে। এমনিতেও আমার লার্জ স্কেল মশলা মুভি সবসময় ভালো লাগে।
এই ছবির কথা একটু জানতে চাই।
বনি: এখানে আমি ‘মাইকেল’। আইবি-র অফিসার। তবে কোনও একটা বিশেষ কারণে সাসপেন্ড। তবু আমি অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছি।
সৌরভের একটা ব্যাড বয় ইমেজ আছে, আপনার ইমেজ নিয়ে কী বলবেন?
বনি: আমার গুড বয়ের ইমেজই রয়েছে, তবে আজকাল হঠাৎ ‘ব্যাড বয়’ করার চেষ্টা চলছে (হাসি)।
সৌরভের সঙ্গে কেমন বন্ডিং?
বনি: গত তিন বছর ধরে আমরা বেশ ভালো বন্ধু। ‘কে তুমি নন্দিনী’র সময় প্রথম একসঙ্গে কাজ। সিসিএল-এর সময় থেকে বন্ধুত্বটা গাঢ় হয়। সৌরভ ইজ আ ব্রিলিয়ান্ট অ্যাক্টর। ন্যাচারাল অভিনয় করে। একসঙ্গে আবার একটা কাজ করতে পেরে বেশ ভালো লাগছে।
বন্ধুর তো বিয়ের একবছর হতে চলল। আপনারটা কি পরের বছর?
বনি: হা হা হা… এখনও পুরো প্ল্যান হয়নি। ওই কথাবার্তা চলছে। ২০২৬-এর শেষের দিকে। শীতকাল হলে সুবিধে। ডেস্টিনেশন ওয়েডিং-এর প্ল্যান আছে। ফিরে এসে পার্টি হবে।
‘বহুরূপী’র পর কৌশানির কথা সবার মুখে মুখে। বয়ফ্রেন্ড হিসাবে কতটা গর্বিত?
বনি: এটা বলতে পারো ওর জন্য রি-লঞ্চ ছিল। কৌশানি ২.০ ভার্সন বলা যেতে পারে। এমন সুযোগের অপেক্ষা আমরা সবাই করি। ও সেটা পেয়েছে এবং কাজে লাগিয়েছে। বুঝিয়ে দিয়েছে, আমরাও পারি। অনেকেরই ধারণা আছে বনি, কৌশানি, যশ, নুসরত– এরা কেবল কমার্শিয়াল আর্টিস্ট। অ্যান্ড আই অ্যাম সুপার প্রাউড অফ হার। এমনকী আইটেম নাম্বারেও শি ইজ অ্যামেজিং।
আপনাদের সম্পর্ক অনেক দিনের। খুব সহজ নয়!
বনি: আই থিংক বিকজ উই বোথ আর ভেরি ফিল্মি। সম্পর্কটাকে সেলিব্রেট করতে ভালোবাসি এবং সেটা সাহায্য করে। স্পেশাল ডেট প্ল্যান করি, এমনকী পিডিএ-তে এনগেজও করি। অনেকে এটাকে ফেক বা লোক-দেখানো বা বাড়াবাড়ি বলতেই পারেন। কিন্তু আমরা এটা ভালোবাসি। এবং পারস্পরিক বিশ্বাসের জায়গাটা বেশ জোরালো।
প্রথম ছবি করতে গিয়েই তো প্রেম! ৯-১০ বছর হল?
বনি: নয়ের একটু বেশি হল। আর দশে পা দিয়ে বিয়েটা করব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.