Advertisement
Advertisement

Breaking News

Soumitra Satyajit

বিশ্ব সিনেমার ইতিহাসে বিরল, জুটি বেঁধে ৩১ বছরে ১৪টি ছবি উপহার দিয়েছিলেন সত্যজিৎ-সৌমিত্র

সত্যজিৎ-সৌমিত্র জুটির শেষ কাজ ১৯৯০ সালে।

Bangla News of Soumitra Chatterjee: Soumitra-Satyajit pair in Bangali cinema was like Mifune and Kurosawa pair in Japan| Sangbad Pratidin
Published by: Suparna Majumder
  • Posted:November 15, 2020 2:39 pm
  • Updated:November 15, 2020 2:39 pm  

নির্মল ধর: ১৯২০ সালে জন্মেছিলেন জাপানি অভিনেতা তোশিরো মিফুনে (Toshiro Mifune)। প্রয়াত হন ১৯৯৭ সালে। পরিচালক আকিরা কুরোসাওয়ার (Akira Kurosawa) সঙ্গে জুটি বেঁধে মোট ১৬টি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন মিফুনে। ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের (Soumitra Chatterjee) অন্যতম প্রিয় অভিনেতা। বাঙালির প্রিয় সৌমিত্রের জন্ম ১৯৩৫ সালে। প্রথমবার প্রিয় পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে (Satyajit Ray) তিনি জুটি বেঁধেছিলেন ‘অপুর সংসার’-এ (১৯৫৯)। সত্যজিৎ-সৌমিত্র জুটির শেষ কাজ ‘শাখা প্রশাখা’ (১৯৯০)। দীর্ঘ এই ৩১ বছরে দু’জনে মিলে উপহার দিয়েছেন মোট ১৪টি ছবি। সময়ের হিসেবে কাজের সংখ্যা প্রায় সমান। বিশ্ব সিনেমার ইতিহাসে এমন পরিচালক-অভিনেতা জুটি সম্ভবত আর তৃতীয়টি নেই।

Advertisement

বলতে চাইছি, ছবির প্রধান চরিত্রের অভিনেতা এবং পরিচালকের এমন একসঙ্গে কাজ করার অনুসঙ্গ। হ্যাঁ, সুইডিশ পরিচালক বার্গম্যানের সঙ্গে ম্যাক্স ভন সিয়েডো, লিভ উলমান অথবা পোলিশ পরিচালক ওয়াইডার সঙ্গে সিবুলসকি, কিম্বা আমেরিকান পরিচালক মার্টিন স্করসেসির সঙ্গে রবার্ট ডি’নিরোর এমন ‘বন্ধুত্ব’ উদাহরণ হিসেবে পাওয়া যাবে। কিন্তু  সংখ্যায় এতগুলো ছবি নয়। কিছু দিন আগেই এক সাক্ষাৎকারে সৌমিত্রবাবু জানিয়েছিলেন, তাঁর আর অপূর্ণ কোনও অভিনীত চরিত্র নেই। সত্যজিৎ তাঁকে ১৪টি ছবিতে এত ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র দিয়েছেন যে আর কোনও অভিমান বা অভিযোগ নেই। এটা সম্ভব তখনই, যখন পরিচালক ও অভিনেতার মধ্যে এক ধরনের বোঝাবুঝির সুন্দর বন্ডিং তৈরি হয়। যেটা হয়েছিল মিফুনের সঙ্গে কুরসাওয়ার। আর এদেশে সৌমিত্রর সঙ্গে সত্যজিতের।

তিনি তো স্বীকার করেই গিয়েছেন চিত্রনাট্য লেখার সময় থেকেই ‘শাখা প্রশাখা’র অপ্রকৃতিস্থ প্রশান্ত  থেকে ‘গণশত্রু’র ডাক্তার অশোক গুপ্ত, ‘হীরক রাজার দেশে’র মাষ্টারমশাই উদয়ন, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’র অসীম— চরিত্রগুলি সৌমিত্রকে কল্পনা করেই লেখা। যেমনটি কুরোসাওয়া লিখেছিলেন ‘সেভেন সামুরাই’-এর কিকুচিও বা ‘রেড বিয়ার্ড’ ছবির ডাক্তার কিওজোর চরিত্রটি। কিংবা ‘থ্রোন অফ ব্লাড’ ছবি ওয়াশিযু। কে ভুলতে পারে ‘লোয়ার ডেপথ’-এর ছিঁচকে চোর শুতোকিচিকে।

 

‘ওয়াজিম্বু’ নামের ছবিতে লরাকু কুয়াবাতাকের চরিত্রে অভিনয় করে মীফুনে ভেনিস থেকে সেরা অভিনেতা হয়েছিলেন। চার বছর বাদে আবারও ‘রেড বিয়ার্ড’ ছবির জন্য সেই ভেনিস থেকেই দ্বিতীয়বার পান সেরা অভিনেতার সম্মান। না, সত্যজিতের এতগুলো ছবিতে অভিনয় করেও সৌমিত্র কিন্তু বিদেশের কোনো পুরস্কার সেভাবে পাননি। এমনকী দেশেও তাঁর পুরস্কারের সংখ্যা তুলনায় কম। দু’বার তিনি বিশেষ জাতীয় পুরস্কার জিতেছেন তপন সিংহের ‘অন্তর্ধান’ এবং সুমন ঘোষের ‘দেখা’ ছবির জন্য। ‘পদক্ষেপ’ ছবির জন্য একবার সেরা অভিনেতা হয়েছে। অবশ্য শেষ পর্যন্ত ভারত সরকার দাদাসাহেব ফালকে আর পদ্মভূষণ দিয়ে মুখ রক্ষা করেছে।

জাপানি ও ভারতীয় (উপরন্তু বাঙালি) দুই অভিনেতার কাজের মধ্যে সাদৃশ্য হল এঁরা দুজনেই দীর্ঘ অভিনয় জীবনে বাস্তব চরিত্রে যেমন সাবলীল থেকেছেন, তেমনি একটু পিছিয়ে যাওয়া অতীতের চরিত্র হলেও সমান দক্ষতা দেখিয়েছেন। জাপানি ছবির পৌরাণিক কাহিনীতে সামুরাই জীবনের ঘটনা প্রাধান্য পায়। যেখানে একটু উচ্চকিত অভিনয় করতেই হয়। বাংলা ছবিতে তেমন সুযোগ নেই। কিন্তু মিফুনে দেখিয়ে দিয়েছেন দু’ধরনের স্টাইলেই তিনি সমান দক্ষ। সৌমিত্রবাবুর সামনে সেই সুযোগ তেমন আসেনি, অন্তত সিনেমার পর্দায়। মঞ্চে তিনি ‘রাজা লিয়র’ করে দেখিয়েছেন তাঁর ক্ষমতার ধার কতটা! মিফুনে চলে গেছেন ১৯৯৭ সালে। ১৯৬৪ সালের পর কুরোসাওয়ার সঙ্গে তিনি আর কাজ করেননি। সতেরো বছরের ১৬টি ছবি রয়ে গেছে বিশ্ব সিনেমার ইতিহাসের পাতায়। পরবর্তী তিরিশ বছরে কুরোসাওয়া মাত্র ৭টি ছবি করেছেন, একবারও ডাকেননি মিফুনেকে। এমনকী, নিজের আত্মজীবনীতেও কিছু লিখে যাননি। অজানা রয়েই গেছে দুই প্রতিভার বিচ্ছেদের কারণ। সৌভাগ্য, সত্যজিতের সঙ্গে সৌমিত্রর সখ্যতা আমৃত্যু ছিল স্বাভাবিক, সৌহার্দ্যপূর্ণ। বাঙালির প্রিয় এ জুটি কখনও আলাদা হয়নি, হয়তো অন্য কোনও জগতে গিয়ে আবার তাঁদের দেখা হয়েছে। নতুন চিত্রনাট্য লিখে মানিকদা হয়তো আবার হাঁক পেড়েছেন, “পুলু, আজ সন্ধে বেলা একবার এস তো, একটা গপ্পো শোনাবো”।

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement