সন্দীপ্তা ভঞ্জ: ভাগ্যের ফের অনেক সময়েই আপনজনদের কেড়ে নেয় আমাদের কাছ থেকে। আর ঠিক সেই শূন্যতাই যখন পূরণ করে কোনও অনাত্মীয়, যাঁর সঙ্গে চোদ্দো পুরুষেও রক্তের কোনও সম্পর্ক নেই। তখন? সেই মানুষগুলিই যেন তখন আমাদের কাছের মানুষ হয়ে ওঠে। ‘অসহায়’ আমাদের আশ্রয় হয়ে ওঠে। যেন কত কাল থেকে তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে! ঠিক সেরকমই এক ছকভাঙা সম্পর্কের গল্প নিয়ে রুদ্রনীল ঘোষের ছোট ছবি ‘কেয়ার অফ চ্যাটার্জি’। শর্ট ফিল্মে অভিনয় করেছেন বাংলার দুই কিংবদন্তী অভিনেতা-অভিনেত্রী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ও। যাঁদের অভিনয়ে ফুটে উঠল ‘ফেমিলিহুড’ অর্থাৎ পরিবারের আসল অর্থ। পরিচালনায় সৌর্য দেব।
সত্যিই তো, পরিবার বলতে কি শুধুই রক্তের সম্পর্ক? নাড়ির টান না থাকলে কি কাউকে পরিবারের সদস্য বলা যায় না! আজকের ‘নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি’র কনসেপ্টের কাছে অবশ্য সংজ্ঞাটা অন্যরকম। তবে বাস্তবে এমন উদাহরণও কিন্তু কম নেই, যেখানে মা-বাবা, ভাই-বোন, ঠাকুরদা-ঠাকুমা ছাড়াও প্রতিবেশী কিংবা বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আমাদের আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, অনেক অসহায় সময়েও তারাই আমাদের আশ্রয় হয়ে উঠেছে। আবার অনাথ আশ্রম থেকে নিয়ে আসা কোনও বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে কোনও নিঃসন্তান দম্পতি কাটিয়ে দিয়েছে গোটা জীবন। বিবেক-মানবিকতাই বোধহয় একটা ‘পরিবার’ গড়ে তুলতে পারে। রক্তের টান না থাকলেও অনায়াসে কাছে টেনে আপন করে নিতে পারে কাউকে। ‘কেয়ার অফ চ্যাটার্জি’-এর গল্পটাও ঠিক সেরকমই। লকডাউনের অনেক আগেই শুটিং হয়ে গিয়েছিল, জানালেন রুদ্রনীল ঘোষ।
ছবিতে বিশেষচাহিদা সম্পন্ন এক যুবকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন রুদ্রনীল ঘোষ। আর সেই মানুষটিকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে শর্ট ফিল্মের গল্প। ঘটনাচক্রে তার মা-বাবাকে হারিয়েছে সে। তাঁর একমাত্র আশ্রয় বলতে এখন প্রতিবেশী চ্যাটার্জি কাকু আর কাকিমা। যে দুই চরিত্রে দেখা গেল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়কে। যাঁরা দিনরাত নিজের সন্তানের মতোই দেখভাল করেন তার। খাইয়ে দেওয়া, বাইরের ঘোরাতে নিয়ে যাওয়া থেকে সবকিছুর জন্যেই ভাগ্যের ফেরে এই বৃদ্ধ দম্পতির প্রতি নির্ভরশীল সে। চ্যাটার্জি কাকু আর কাকিমাই এখন তাঁর মা-বাবা। কীভাবে নিজেদের বার্ধক্যের যন্ত্রণার মাঝেও এক অনাত্মীয়কে আপন করে নিলেন, বুকে টেনে নিলেন বিশেষচাহিদা সম্পন্ন এক প্রতিবেশী পরিবারের ছেলেকে, সেই গল্পই ফুটে উঠল ‘কেয়ার অফ চ্যাটার্জি’তে। সামাজিক বার্তা দিতেই সুগম হোমসের তরফে এই শর্ট ফিল্ম তৈরি করা হয়েছে। শুক্রবার এই সংস্থার ফেসবুক পেজেই মুক্তি পেল ‘কেয়ার অফ চ্যাটার্জি’। এই ছবিটি আবারও মনে করিয়ে দিল যে সম্পর্কের সত্যিই কোনও সিলেবাস হয় না!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.