Advertisement
Advertisement

Breaking News

সোনাগাছি

‘লোকের বাড়িতে কাজ করলেও শরীরের সুযোগ নিতে চায়’, অকপট সোনাগাছির ‘ব্রাত্য’ মেয়েরা

নিজেদের রোজনামচার কথা শোনালেন আবেদারা।

Sonagachi residents tell tale of their struggle during 'Sitara' premier
Published by: Bishakha Pal
  • Posted:July 20, 2019 5:04 pm
  • Updated:July 20, 2019 5:04 pm  

বিশাখা পাল: শহর কলকাতার মধ্যে এ যেন এক অন্য শহর। এঁদো গলি আর পুরনো গন্ধে মেশা গোলধাঁধাঁর এই সোনাগাছিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে অনেক না বলা কথা। পাড়ায় পা রাখতেই চারপাশ থেকে ভেসে আসে অশ্লীল শব্দ। কিন্তু তার ভাঁজেই মিশে থাকে ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’। শহরের কেউ এদের খোঁজ নেয় না। স্যুট-বুট পরা বাবুমশাইদের কাছে এরা নিতান্তই ‘নষ্ট মেয়ে’।

‘সিতারা’ ছবিটি দেখতে এসে একথাই বলছিলেন আবেদা বিবি। বলছিলেন, স্বেচ্ছায় তো তাঁরা এ ‘লাইনে’ আসেন না। পেটের তাড়না বড় দায়। খিদের অত্যাচারে তাঁদের নাম লেখাতে হয় এই পাড়ার ‘মাসিদের’ কাছে। অনেকে আবার ভাগ্যতাড়িত। এখানে এক একটা গলির সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক একটি রহস্য। প্রতিটি মন্দ মেয়ের আলাদা আলাদা উপাখ্যান। যেমন, আবেদা বললেন, তাঁর বাড়িতে অভাবের অন্ত নেই। তাঁর পাড়া প্রতিবেশিরা অনেকেই লোকের বাড়ি কাজ করে। কাছের প্লাস্টিক কারখানাতেও কাজ করে অনেকে। কিন্তু মেয়ে মানুষের শরীরের ঝুঁকি কি সেখানে নেই? লোলুপ দৃষ্টি তো সর্বত্র। লোকের বাড়িতে কাজ করলে সেখানেও তো অনেক রকম সমস্যা। বাড়ির পুরুষরা অনেক সময়ই দৃষ্টি দিয়েই পরিচারিকার শরীর এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয়। আবার এমন কানে আসে, বাড়ির মেয়েদের অনুপস্থিতিতে জোর করে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে পুরুষটি। বিনা পয়সায়। তার চেয়ে এই ভাল। টাকা পয়সা তো হাতে আসছে। আর সেই টাকা দিয়েই দিনগুজরানের অসুবিধা হচ্ছে না।

Advertisement

তবে এই একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে দুঃখ একটাই। যৌনপল্লির এই পেশাকে এখনও আর পাঁচটা পেশার মধ্যে ফেলে না অনেকে। সমাজে এখনও তাঁরা অপাঙক্তেয়। কারণ দেহ বেচে খান তাঁরা। সমাজ এতটা এগিয়েছে। সবাই এখন নিজেদের আধুনিক আধুনিকা বলে দাবি করে। কিন্তু মন এখনও পড়ে রয়েছে মধ্যযুগের আঁধার গহ্বরে। রেনেসাঁর আলো এখনও পৌঁছয়নি এই সব ‘আধুনিক আধুনিকাদের’ মননে। বরং সোনাগাছি সে তুলনায় অনেকটাই আধুনিক। কারণ সেখানকার ‘পতিতা’-রা মনে করেন বাকিরা যেভাবে উপার্জন করে, সেভাবে তাঁরাও রোজগার করেন। পার্থক্য শুধু একটাই। সবার পেশা সমাজে গ্রহণযোগ্য আর তাঁরা ‘অশুদ্ধ’, ‘অসূচি’, ‘বেলেল্লাপনার সামগ্রী’।

কিন্তু এনিয়ে খারাপ লাগা অনেকদিন আগেই ঘুঁচেছে পতিতাপল্লির রমণীদের। অন্ধকার থেকে উঠে আসার আশা অনেকদিন আগেই হারিয়েছেন তাঁরা। কারণ তাঁরা ভালভাবেই জানেন, এসমাজের উন্নতি অসম্ভব। মুখেই সবার বদলানোর স্লোগান। কিন্তু ইচ্ছেটা মৃত। যেদিন এই গোলকধাঁধাঁয় ঢুকেছিলেন আবেদারা। খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছিল অনেক। সেসব দিন আজ আর তাঁরা মনেও আনতে চান না। ভবিতব্যকে মেনে নিয়েছেন। বুঝে গিয়েছেন, এটাই তাঁদের কর্মক্ষেত্র। আর অনুশোচনা? “কেন হবে? এই টাকা দিয়েই তো সংসার চালাচ্ছি?” বলছিলেন আর একজন। বাড়িতে বাবা-মা রয়েছেন। তাঁদের রোজনামচাও চলে এই নিষিদ্ধপল্লি থেকে উপার্জিত অর্থেই। এমনকী কেউ কেউ তো ছেলেমেয়ের পড়াশোনাও চালাচ্ছেন এই টাকাতেই। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে আজ এঁদের সন্তানরা সুপ্রতিষ্ঠত। এক বারবণিতার ছেলে তো আজ সুদূর আমেরিকায়। নিজের যোগ্যতাতেই অনেক বারবণিতার সন্তানরা আজ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নাম করেছেন। “নিজের পেশাকে দুরছাই করলে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা চলত কী করে?”

নিজের জীবনকে এঁরা কেউ অভিশাপ মনে করেন না। বরং অভিশপ্ত জীবনকে এঁরা গলা টিপে মেরেছেন অনেকদিন আগেই। সোনাগাছি এঁদের কাছে ছোট্ট এক পৃথিবী। এখানেই তাঁদের সুখের নীড়। বাইরের পৃথিবীর কাছে এঁরা ব্রাত্য। তাই সুযোগ পেলেই আনন্দে মাতেন তাঁরা। সামনেই আসছে পুজো। বছরের এই ক’টা দিন নিজের জীবনকে চেটেপুটে উপভোগ করেন তাঁরা। কিছুদিন পর থেকেই শুরু হবে কেনাকাটির পালা।  “আমাদের এখানে খুব বড় করে দুর্গাপুজো হয়। তোমরাও এস কিন্তু। নিমন্ত্রণ রইল।” রাইমা সেনের ‘বই’ ‘সিতারা’ দেখে বেরিয়ে আসার সময় বিনম্র আবেদন করলেন সোনাগাছির ‘ব্রাত্য’ আবেদারা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement