সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সাতের দশকে কলকাতার খ্যাতনামা ক্যাবারে ডান্সার তো বটেই, প্রথম বাঙালি ক্যাবারে নাচিয়েও ছিলেন তিনি। সেসময়ে রাতের কলকাতা মাতিয়ে রাখত একটাই নাম, মিস শেফালি। যাঁর পায়ের ছন্দ, শরীরী বিভঙ্গে কথা বলত সাহেবি পার্ক স্ট্রিট। ‘কুইন অফ ক্যাবারে’, ঠিক এই নামেই ডাকা হত তাঁকে। পার্কস্ট্রিটে প্রায় একসময়েই কাজ করা শুরু করেন জনপ্রিয় গায়িকা উষা উত্থুপের সঙ্গে মিস শেফালি। কেমন ছিল শেফালির সেসব দিন? আজ ক্যাবারে কুইনের প্রয়াণের খবরে বিমর্ষ মনে স্মৃতিচারণায় মগ্ন উষা উত্থুপ। অন্যদিকে, ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করার অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন অভিনেতা বরুণ চন্দ।
সাতের দশকে পার্কস্ট্রিটে একসঙ্গে কাজ করার স্মৃতিচারণ করে উষা উত্থুপ জানান, খুব দুঃখজনক। মনে পড়ে যাচ্ছে সেসব দিনের কথা। নাচের প্রতি ওঁর একটা অন্যরকম আকর্ষণ ছিল। পরিস্থিতির চাপ কোনও দিন ওঁর প্যাশন থেকে দূরে সরাতে পারেনি ওঁকে। সেজেগুজে পারফর্ম করার জন্য একেবারে তৈরি থাকত। হাজার বাধা-প্রতিকূলতা সত্ত্বেও চোখে-মুখে সবসময়ে হাসি। যে হাসি-আনন্দতে মাতিয়ে রাখত দর্শকদের।
এরকম একজন শিল্পী যথাযথ মর্যাদা পায়নি বলেও আক্ষেপ জানিয়েছেন উষা উত্থুপ। তাঁর মত, “শেফালির মতো প্রতিভাবান শিল্পীর সেরকম সম্মান জোটেনি।” শেষবয়সে অর্থাভাবেও ভুগতে হয়েছিল অভিনেত্রীকে। সেকথাও স্মৃতিচারণায় উঠে আসে। নিজের সংস্থা থেকে এবং ব্যক্তিগতভাবেও উষা যথাসাধ্য শেফালির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, যাঁর সঙ্গে শেফালির সম্পর্ক ভীষণ ভাল ছিল। এমনকী, তাঁর চিকিৎসার প্রয়োজনেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ঋতুপর্ণা। তাঁর প্রিয় শেফালির মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত ঋতুপর্ণা। বললেন, “মিস শেফালি.. আমি কিন্তু তাঁকে ভালবেসে শেফালিদি বলে ডাকি। তিনি আজ আর বেঁচে না থাকলেও, আমাদের হৃদয়ে তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন। অতীব সুন্দরী এবম প্রাণোচ্ছ্বল মানুষ ছিলেন। ক্যাবারে নৃত্যের ক্ষেত্রে তাঁর অসীম অবদানের জন্য চিরকাল সবাই তাঁকে মনে রাখবেন। তোমাকে মিস করব।”
টুইটারে শোকজ্ঞাপন করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। অন্যদিকে, বরুণ চন্দ জানালেন, আরতি ওরফে শেফালি অত্যন্ত যত্ন নিয়ে সিনেমার কাজ করতেন। ভীষণই দক্ষ নৃত্যশিল্পী ছিলেন। একবার নাকি, বরুণবাবুর মুখে বাঙাল ভাষা শুনে ভিষণ হেসেছিলেন। কতারণ, ওপার বাংলায় জন্মগ্রহণ করার সুবাদে বাঙালটাও বেশ ভালই জানতেন জানতেন তিনি।
প্রথম শোয়ে পোশাক দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন কিন্তু শেফালির সেটাই সুপারহিট হয়ে যায়। ৬ মাস বয়সে বাবা মার সঙ্গে পূর্ববঙ্গ থেকে এপারে এসেছিলেন, শৈশব কেটেছিল অবর্ণনীয় দুঃখকষ্টে। ১১ বছর বয়সে চৌরঙ্গীর এক অ্যাংলো পরিবারে কাজ শুরু করেন। প্রতি সন্ধেয় সেখানে পার্টি বসত, তখন থেকেই নাচের প্রতি আগ্রহ। সেই পরিবারেরই এক আমন্ত্রিতের সহায়তায় পার্ক স্ট্রিটের ক্যাবারেতে প্রথম নাচের সুযোগ। মাইনে ছিল যৎসামান্য! শিখেছেন নানারকম নাচ চার্লসটন, ক্যান ক্যান, টুইস্ট এমনকী বেলি ডান্সিং। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা নাগাদ চরতরে বিদায় নিলেন সাতের দশকের ‘রাতপরী’ তথা অভিনেত্রী আরতি দাস।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.