নিজস্ব চিত্র
দেব গোস্বামী, বোলপুর: সিবিআই পরিচয়ে সঙ্গীতশিল্পীকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা লুঠ করল সাইবার অপরাধীরা। ঘটনাটি ঘটেছে শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লিতে। সুনিধি নায়েক নামের ওই শিল্পী বিশ্বভারতীর সঙ্গীতভবনের প্রাক্তন ছাত্রী। সুনিধির (Sunidhi Nayak) বাড়ি আসানসোলে। কর্মসূত্রে তিনি শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লিতে একটি ভাড়াবাড়িতে থাকতেন।
অভিযোগ, যেদিন এই ঘটনা ঘটে সেদিন শিল্পী একা ছিলেন ভাড়াবাড়িতে। বাড়ির বাইরে অজ্ঞাত পরিচয় মানুষজনদের ঘোরাফেরা করতে দেখেন তিনি। সুনিধির দাবি, দুষ্কৃতীরা তাঁকে সিবিআই পরিচয় দিয়ে ভিডিও কলের মাধ্যমে প্রায় গোটা দিন ‘হোম অ্যারেস্ট’ করে রেখেছিল। এর পর তাঁকে ও তাঁর বাবাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে অনলাইন মাধ্যমে সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা আদায় করে। বিষয়টি জানাজানি হতেই তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
উল্লেখ্য, যেখানে সুনিধির ভাড়াবাড়িটি রয়েছে। তার একশো মিটারের মধ্যেই শান্তিনিকেতন থানা ও এসডিপি অফিস। নিজের গায়কির জোরে সারা বিশ্বে সুনাম পেয়েছেন সুনিধি। তবে শান্তিনিকেতন তাঁর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সঙ্গীত জ্ঞানের শিকড়। সেই টানেই সেখানে বারবার ফিরে আসা। কিন্তু ভিডিও কলের মাধ্যমে কীভাবে হোম অ্যারেস্ট বা গৃহবন্দি করা সম্ভব? শিল্পীর জানান, মঙ্গলবার বিকেলে অপরিচিত নম্বর থেকে তাঁর কাছে ফোন আসে। ফোনে বলা হয়, “সিবিআই থেকে বলছি আপনার বিরুদ্ধে ব্যাঙ্কের আর্থিক তছরুপের অভিযোগ রয়েছে। ভিডিও কলের মাধ্যমে আপনাকে হোম অ্যারেস্ট করা হল। ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি আপনার উপর নজরদারি চালাচ্ছে। চালাকি করলেই বিপদ। আপনাকে ও আপনার বাবা নিধিরাম নায়েককে প্রয়োজনে প্রাণনাশ করতেও আমরা পিছপা হব না। আসানসোলের বাড়িতে সামনে আপনার বাবার উপর নজরদারি চালানো হচ্ছে।”
এই কথা শুনে সুনিধি অত্যন্ত আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। সেই পরিস্থিতিতে শিল্পীর অ্যাকাউন্টে যত টাকা আছে তা ট্রান্সফার করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কী করবেন বুঝতে না পেরে দুষ্কৃতীদের কথামতো নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা তাদের দেওয়া অ্যাকাউন্ট নম্বরে পাঠিয়ে দেন শিল্পী। টাকা পেতেই দুষ্কৃতীরা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। বাইরে দুষ্কৃতীরা অপেক্ষা করছে এই আশঙ্কায় মোবাইলের মাধ্যমে কোনওক্রমেই স্থানীয় বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে শান্তিনিকেতন থানায় গভীর রাতে অভিযোগ জানান।
প্রসঙ্গত, সাইবার অপরাধ বেড়ে চলায় বুধবারই শান্তিনিকেতনের শ্যামবাটি ক্যানাল ব্রিজে সাইবার থানার সূচনা করে বীরভূম জেলা পুলিস প্রশাসন। ওই দিনই বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি সুনিধির সঙ্গে ঘটে। ঘটনার পর শান্তিনিকেতনে নিজের নিরাপত্তা নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সুনিধি। তাঁর বক্তব্য, “দুষ্কৃতীরা যেভাবে কথা বলেছিল তাতে কোনওভাবেই মনে হয়নি তারা অপরাধমূলক কাজের জন্য যুক্ত। তাদের দাবি ছিল আমার ক্রেডিট কার্ড থেকে আর্থিক তছরুপ হয়েছে। সাম্প্রতিককালে দেশের কয়েকশো কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়া ব্যবসায়ীর সঙ্গে এর যোগ রয়েছে। সেজন্য বাবা ও আমার ওপর নজরদারি রেখেছে পুলিশ। চালাকি করা হলে প্রাণনাশেরও হুমকি দেওয়া হয়। এই বিষয়টি বলার পর থেকেই আমি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। তার পরই হুমকি দিয়ে তারা আমার অ্যাকাউন্ট থেকে সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা আদায় করে।” এদিকে অভিযোগ পেয়েই নড়েচড়ে বসেছে শান্তিনিকেতন থানা। সংশ্লিষ্ট নম্বরগুলোর বিরুদ্ধে সাইবার আইনে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.