নিজস্ব চিত্র
অর্ক দে, বর্ধমান: বর্ধমানের শ্যামলাল এলাকার বাসিন্দা পূজা ভৌমিক। একসময়ে হৈমন্তী শুক্লা, মান্না দে, লোপামুদ্রা মিত্র, আরতি মুখোপাধ্যায়ের মতো কিংবদন্তি শিল্পীদের সঙ্গে একই অনুষ্ঠানের মঞ্চে গান গাইতেন। সুরের জাদুতে দর্শকদের মুগ্ধ করতেন। এখন সংসারের হাল ধরতে স্বামীর সঙ্গে চায়ের দোকান চালাচ্ছেন পঞ্চাশোর্দ্ধ পূজা।
এখন শুধু দোকানেই মন দিয়েছেন সেই শিল্পী। নানান স্বাদের চা তৈরি করে ক্রেতাদের মন জয় করাই পূজার কাজ। বিভিন্ন ধরনের চা বানান। মালাই চা, ফ্লেবার চা। ক্রেতাদের চা খাইয়েই তাঁর তৃপ্তি। তবে প্রতিভার কথা কাউকে বলতে চান না! তার দোকানে চা খেতে আসা অনেকেই পূজা দেবীর এই প্রতিভার কথা জানেন না। পরিস্থিতি তাঁর জীবন বদলে দিয়েছে। বর্ধমানের নার্স কোয়ার্টার মোড়ে স্বামীর সঙ্গে চায়ের দোকানে তাঁকে দেখে কেউ ভাবতে পারবেন না যে দশ বছর আগেও তাঁর পরিচয় ছিল আলাদা। তাঁর কথায়, “পুরনো দিনের কথা মনে করলে খুব কষ্ট হয়, ওই দিনগুলি আর ফিরে পাব না। তবে এখনও সুযোগ পেলে অনুষ্ঠান করব। বাড়িতে নিয়মিত চর্চা রয়েছে।”
পূজা শেষ অনুষ্ঠান করেছেন বর্ধমানের কাঞ্চন উৎসবে ২০১১ সালে। তাঁর স্বামীই তাঁকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অনুষ্ঠানে নিয়ে যেতেন। তবে এক দুর্ঘটনায় পূজা দেবীর স্বামীর পা ভেঙে যায়। তারপরই বদলে যায় তাঁদের জীবন। এরপর থেকে বিজন ভৌমিক আর তাঁর স্ত্রীকে অনুষ্ঠান করতে নিয়ে যেতে পারতেন না। কোনওরকমে দোকানে এসে বসতেন। অগত্যা পরিস্থিতি সামলাতে পূজাদেবীও ব্যবসায় হাত লাগান। তারপর থেকে আর স্টেজে উঠে গান গাওয়া হয়নি তাঁর।
এখন তার বয়স প্রায় ৫৩ বছর। দোকানে চা তৈরি করতে করতে পূজা ভৌমিক জানান, “এখন যে ধরনের অনুষ্ঠান হচ্ছে, সেগুলি ঠিক আমাদের সময়কার অনুষ্ঠানগুলির মতো নয়। এখনকার অনুষ্ঠানের ধারা আলাদা। এগুলি ঠিক আমাদের উপযুক্ত নয়। আর তার থেকেও বড় কথা আমার স্বামী আর পারছেন না, তাই ওকে সঙ্গ দিতে ব্যবসায় হাত লাগাচ্ছি।” অতীতের স্মৃতি তাঁর চোখে এখনও জ্বলজ্বল করে উঠে। ফেলে আসা পরিচয় ভুলতে পারেননি তিনি। স্বামীর সঙ্গে সংসারের হাল ধরে খারাপ সময় কাটিয়ে উঠলে ফের অনুষ্ঠান করার ইচ্ছা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.