Advertisement
Advertisement

Breaking News

Anupam Roy Prashmita Paul

‘প্রস্মিতার সঙ্গে মনোমালিন্য হলে মাঝেমধ্যেই চিঠি লিখি’, মুখে বলেন না কেন? জানালেন অনুপম

জন্মদিনের প্ল্যান নিয়ে আড্ডায় অনুপম রায়।

Singer Anupam Roy on his Birthday plan and work updates
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:March 28, 2025 7:52 pm
  • Updated:March 28, 2025 7:52 pm  

জন্মদিনের প্রাক্কালে খোলামেলা আড্ডায় অনুপম রায়। শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।

২৯ মার্চ আপনার জন্মদিন। কী প্ল‌্যান? বেশ কিছু গান মুক্তি পাওয়ার কথাও আছে বোধহয়?
– জন্মদিন আগে একরকম কাটত। আর বিখ‌্যাত হওয়ার পর আরেক রকম কাটে। কিছু বছর ধরে লক্ষ‌ করছি যে ওই দিন গান রিলিজ করার একটা রীতি শুরু হয়েছে। এটা প্রথম শিবুদা শুরু করে ‘বেলা শুরু’র সময়। এই বছর কত গান যে রিলিজ করবে আমি জানি না। ‘কিলবিল সোসাইটি’ এবং ‘আমার বস’- দুটোতেই আমার গান রয়েছে। এছাড়া রোহনের পরিচালনায় ‘মিথ্যে স্বপ্ন’ বলে একটা মিউজিক ভিডিও লঞ্চ হওয়ার কথা ‘ইটস মাজা’ প্ল‌্যাটফর্মে। তবে সিনেমার কোন গান কবে রিলিজ করবে? এই প্ল‌্যানিংটা আমি জানি না। সেটা প্রোডাকশন হাউস ঠিক করবে।

Advertisement

কাজ বাদ দিলে ব‌্যক্তি অনুপমের কাছে এই দিনটা কেমন?
– জন্মদিন নিয়ে খুব উৎসাহ দেখানোর মানুষ আমি নই। একদম ছোটবেলার কথা অন‌্যরকম। অনেক মানুষজন বাড়িতে উপহার নিয়ে আসত। খাওয়া-দাওয়া হত। মা-বাবার অ‌্যানিভার্সারিও মার্চ মাসে, কিন্তু আমার জন্মদিনটাই বড় করে পালন করা হত। একটু বড় হওয়ার পরই এই বড় করে সেলিব্রেশন আর আমি চাইনি। টিনএজার হলেই তো নিজের বক্তব‌্য তৈরি হয়, তাই না! তবে বাড়িতে পায়েস তৈরির চল আছে, মা রান্নাবান্না করে। আসলে এই দিনটা তো মা-বাবার, কারণ, তাঁদের কাছে এই দিনটার গুরুত্ব অনেক বেশি।

‘অটোগ্রাফ’ মুক্তি পেয়েছিল ২০১০ সালে। প্রায় পনেরো বছর কেটেছে। পিছনে ফিরে তাকালে কী মনে হয়, কতটা বদলেছেন?
– কী করে যে এতটা পথ পেরিয়ে এলাম, সেটা ভাবলে অবাক লাগে। আমার ভিতরের মানুষটা হয়তো বদলায়নি। যেমন বোকা ছিলাম, এখনও তেমনই বোকা আছি। তবে প্রফেশনালি অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে।

সেটা কীরকম?
– আমি যেভাবে গানবাজনাকে অ‌্যাপ্রোচ করতাম, যেভাবে দেখতাম সেখানে পরিবর্তন হয়েছে কারণ আমি তো অ‌্যামেচার হিসাবে শুরু করেছিলাম- গানবাজনা যখন পেশা হয়ে উঠল তখন বুঝলাম বদল প্রয়োজন। একেবারে গোড়ার দিকে- তা সে বাংলা সিনেমা হোক বা কীভাবে মানুষ গান শোনে, জনপ্রিয় হওয়া কাকে বলে, এসব নিয়ে কোনও ধারণাই ছিল না। গত পনেরো বছর আমি দেখেছি আমার যে গানগুলো খুব ভালো লাগে, সব মানুষের সেগুলো অত ভালো লাগে না। তাহলে মানুষের কী ভালো লাগে? এই সব ভাবনাচিন্তা আমার মাথায় বড্ড এসেছে। যেগুলো আগে কখনও ভাবতে হয়নি। ২৮ বছর বয়স পর্যন্ত কেবল এক ধরনের গানবাজনা শুনতাম। পরে যত সময় গিয়েছে দেখেছি অন‌্য ধরনের গানের থেকে নানান ফ্লেভার নিয়েও কাজ করার চেষ্টা করেছি। এখন অনেক ওপেন হয়েছি।

Anupam-Roy-1
নিজস্ব চিত্র

আর গান লেখার ক্ষেত্রেও তাই?
– হ্যাঁ, আগে আমি গান লিখতাম শুধু নিজের জন‌্য, ব‌্যক্তিগত অভিজ্ঞতা প্রাধান‌্য পেত। আমার কোনও দায়বদ্ধতা ছিল না। পরে বুঝেছি যে ‘রেফারেনশিয়াল লিরিক’ ব‌্যবহার করার একটা লিমিটেশন আছে, যদিও এটা হয়তো ডিবেটেবল। অর্থাৎ গানের লিরিকে যদি কোনও বিশেষ জায়গার নাম, উৎসবের নাম, খাবারের নাম বা রিচুয়‌্যালের নাম ব‌্যবহৃত হয়– একটা সংখ‌্যক মানুষের কাছে চটজলদি পৌঁছে গেলেও, কিন্তু বহুসংখ‌্যক মানুষ আছে যারা রিলেট করতে পারে না। সেটা লিখতে লিখতে বুঝতে পেরেছি, এবং তাই ‘রেফারেনশিয়াল লিরিক’ কমিয়ে বেশি সংখ‌্যক মানুষের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করেছি। শুরুতে এই সব নিয়ে ভাবতাম না, তখন মনে হত আমি অলটারনেটিভ, কিন্তু যেই চার-পাঁচজন শুনছে তখন মনে হয় আরও দশজন শুনুক, দশজন শুনলে মনে হয়েছে তিরিশজন শুনুক। এই চাহিদাটা তৈরি হয়। এমন ইমোশন নিয়ে আমার কাজ করতে ইচ্ছে করে যা সর্বজনীন।

বাংলা গানের জগতে আপনি একজন সফল গীতিকার এবং সুরকার। এটা যেমন একটা নতুন কাজের কনফিডেন্স জোগায়, তেমন ভয় হয় যে পরপর গান যদি হিট না হয় তা হলে কী হবে?
– একটা জেনুইন ভয়ের জায়গা কাজ করে। আমরা যারা গান তৈরি করি, তাদের মনে হয় যেন প্রত্যেকটা গানই যেন মানুষ শোনে, প্রত্যেকটা গানই যেন জনপ্রিয় হয়, কিন্তু তা হয় না। তাই একধরনের সেলফ কাউনসেলিং করতে হয় যে, হিট-ফ্লপ গুরুত্বপূর্ণ নয়, আমি যে কাজটা করছি সেটাই ইমপর্ট‌্যান্ট। কারণ আমি সেটার মধ্যে আনন্দ পাচ্ছি। কিন্তু এটা সত্যি যে ‘নাথিং সাকসিডস লাইক সাকসেস’। এবং এই বাজারি সাফল্যের ধাঁচটা খুব নিষ্ঠুর, সেটা বুঝি। তাই সচেতনভাবে চেষ্টা করছি এই সাফল্যের উচ্ছ্বাসে আনন্দে গা ভাসিয়ে না দিতে বা এই মার্কেটে ফেলিওরের দুঃখে একেবারে ধরাশায়ী না হতে। ওই মধ‌্যপন্থা অবলম্বন করার চেষ্টা করি।

সৃজিত মুখোপাধ‌্যায়ের সঙ্গে আপনার পনেরো বছরের পার্টনারশিপ। সৃজিত বেশির ভাগ ছবিতেই আপনাকে চান কেন? দুজনের মধ্যে নিশ্চয়ই কিছু কমন গ্রাউন্ড আছে, না হলে এই পার্টনারশিপ সম্ভব হত না!
– সৃজিতদা আমার গান জেনুইনলি পছন্দ করে। আমি যেভাবে কথা লিখি, সুর করি, সেটা ও ভ‌্যালু করে, সেই জন‌্যই ডাকে। আর আমাদের একসঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে যেটা সুবিধে হয়, সেটা হল সৃজিতদা আমাকে দিয়ে ফরমায়েশি গান তৈরি করায় না। আমাকে বলে, তোর কী কী লেখা আছে সেগুলো আমাকে শোনা। তারপর সেখান থেকে বেছে নেয়। ‘কিলবিল সোসাইটি’র যে গান, সেটার একটাও এই ছবির কথা ভেবে লেখা নয়। সবই আগে লেখা এবং কম্পোজ করা। আর এতে আমারও খুব সুবিধে হয় কারণ নিজে থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গান তৈরি করার যে আনন্দ, স্বস্তি সে সব এই গানগুলোয় থাকে। যে মুহূর্তে এটা সাপ্লাই ডিমান্ডের ব‌্যাপার হয়ে যায় তখন একটা প্রেশার চলে আসে। এত বছর হয়ে যাওয়ার পরও ফরমায়েশি গান তৈরি করতে একটু হলেও ভয় লাগে।

আপনার যে সব প্রেমের গান, শুনলে মনে হয় বিরহের গান। সব গানেই মেলানকলি আছে। আপনি মানুষটাও কি তেমনই?
– কোনওদিন ভাবিনি! গানগুলো জনপ্রিয় হওয়ার পর এই সব অ‌্যানালিসিস হয়েছে। আমি তো নিজের মতো করে লিখেই গিয়েছি। তবে লিখতে বসলে ওই ধরনের কথা, ওই ধরনের সুর ভালো লাগে। আর খুব দুঃখ বা কষ্ট না হলে তো গানটা লিখতে বসা হয় না। খুব আনন্দে থাকলে তো গান লিখতে বসি না, পার্টি করি। গান বা লেখালিখির জায়গাটা তখনই আসে যখন ভিতরে কিছু একটা নাড়া দিয়ে যায়। আর এগুলো কোপিং মেকানিজম বলতে পারো। জীবনে তো অনেক ঘাত প্রতিঘাত চলে, আর আমি যে ধরনের মানুষ আমি হয়তো চেঁচিয়ে কথা বলতে পারব না, চারটে কথা শোনাতে পারব না কাউকে– তখন আমার কলমই আমার অস্ত্র। তখন আমার যত দুঃখ, বেদনা আমার কলমের মধ‌্য দিয়েই প্রকাশ পায়।

Singer Anupam Roy on his Birthday plan and work updates

হ্যাঁ, মানে ‘কিলবিল’-এর নতুন গান ‘ভালোবেসে বাসো না’তেও একটা গিট আছে, ব‌্যাকফুটে থাকা আছে!
– ব‌্যাকফুটে থাকা আছে! তবে ওটার মূল লিরিক আমি যা লিখেছিলাম, আর যেটা শুনছ সেটা অনেকটাই পালটে যাওয়া, সৃজিত অনেকটাই পালটে দিয়েছে। এই বদলে ফেলার ব‌্যাপারটা ওর মধ্যে আছে। পারলে ও সব কিছুই নিজে করে দেবে। ‘ভালোবেসে বাসো না’ নিয়ে আমাদের মধ্যে নানান ক্রিয়েটিভ তর্ক হয়েছে। ডিটেলে যাচ্ছি না। তবে এই গানটা যে ও পছন্দ করেছে সেটার জন‌্য পয়েন্ট দেব, কারণ অনেকেই হয়তো গানটা রিজেক্ট করে দেবে। কিন্তু পরে ওর মনে হয় যে ও লিরিক লিখবে। মুখড়াটা আমার লেখা, যদিও ‘ফ্লার্ট’ শব্দটা আমার নয়। তবে সৃজিতদা ডিবেটে জিতেছে, তাই এই গানের লিরিসিস্ট ও। আমার একটু দুঃখ হয়েছে, যেহেতু একরকম ভেবে লেখা তবে ও পরিচালক, ফাইনাল কল ওই নেবে। আর আমি গুণগত মান নিয়ে কথা বলছি না। আমাদের দুজনের ধরনটা আলাদা। যেমন গানে ব‌্যবহৃত হয়েছে ‘বৃন্দাবন’, বা ‘গোকুল’ শব্দগুলো- ধর্মের রেফারেন্স রয়েছে এমন শব্দ আমি কখনও ব‌্যবহার করব না। এক গোষ্ঠীর কাছে সেটা রেলিভেন্ট হলে অন‌্য ধর্মীয় ভাবাবেগের মানুষের কাছে সেটা রেলিভেন্ট নয়। আমি মনে করি মিউজিক ইজ বিয়ন্ড এনি রিলিজিয়ন। এই ধরনের রূপক আসলে রেসট্রিক্ট করে দেয়। বলতে চাইছি দুজনের স্কুল অফ থট আলাদা।

গান ছাড়াও, কবিতা, গল্প, উপন‌্যাস, গ্রাফিক নভেল, লেখালেখির লিস্ট লম্বা!
– সপ্তাহে সাতদিন তো গান লিখতে পারব না। তখন অন‌্য লেখালিখি করে নিজেকে ব‌্যস্ত রাখি (হাসতে হাসতে)। আর মূল সমস‌্যা হল এক্সপ্রেস করা, কে যে আমাকে বলেছে এত এক্সপ্রেস করতে হবে কে জানে! আমি যদি কবিতা না লিখি কী হবে এবং নিজের কবিতা পড়ে বুঝি যে উচ্চমানের নয়, তবু যদি কোনওদিন ভালো কিছু বের হয় এই ভেবে লিখি!

লেখায় যত এক্সপ্রেস করতে পারেন, মানুষের সামনে প্রকাশ করতে পারেন?
– পারি না বোধহয়। আমার লিখলে অনেক সুবিধে হয়। প্রস্মিতা ভালো বলতে পারবে। হয়তো ওর সঙ্গে আমার কোনও মনোমালিন‌্য হয়েছে, আমি একটা দীর্ঘ পাতার চিঠি লিখলাম। প্রস্মিতা তখন বলে, ‘মুখে বলতে পারো না, এতটা পড়তে হবে এখন’ (হাসি)। লিখলে আসলে অনেকটা ক্ল‌্যারিটি পাই, মুখে বললে অনেক ভুল কথা বলে ফেলি। যেটা বলতে চাইনি তেমন কথা হয়তো বলে ফেলি!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement