শিবপ্রসাদ-নন্দিতার ‘কণ্ঠ’ মুক্তি পেতে আর বেশি দেরি নেই। শব্দ হারানো এক বাচিকশিল্পীর গল্প উঠে এসেছে ছবিতে। শব্দই যার জীবন, তার জীবন থেকে অকস্মাৎ কণ্ঠ হারিয়ে গেলে কী হয়? কেনই বা এমন গল্পকে তিনি বেছে নিলেন? পাওলির সঙ্গে রোম্যান্টিক সিন থেকে জয়া আহসানের সঙ্গে অভিনয়, সব নিয়েই আড্ডা দিলেন অভিনেতা-পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, শুনলেন বিশাখা পাল।
‘কণ্ঠ’-র আইডিয়া কোথা থেকে এল?
শিবপ্রসাদ: ১৯৯৯ সালে আমরা বেসরকারি চ্যানেলে চাকরি করতাম। ওখানে একটি হেল্থ সেগমেন্ট ছিল- ‘আলোয় ফেরা।’ সেখানে বিভূতি চক্রবর্তী বলে এক পেশেন্ট আসেন। তাঁর জীবনে শব্দযন্ত্র চলে গিয়েছিল। তিনি কীভাবে খাদ্যনালী দিয়ে কথা বলতেন, আবার নিজের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলেন এটাই মূল গল্প। আমাদের মনে হয়েছিল এটা খুব অনুপ্রেরণামূলক। কারণ এখন তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে ধূমপানের জন্য ওরাল ক্যানসার একটা মারাত্মক জায়গায় চলে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে মনে হয়েছিল, বিভূতিবাবুর গল্পটাকে আমরা আমাদের মতো করে সামনে নিয়ে আসি, তাহলে হয়তো অসংখ্য মানুষের কাছে এই বার্তা পৌঁছতে পারে। তারপর নন্দিতাদি পুরোটা নিয়ে সিনেমার জন্য গল্প তৈরি করেন। বিভূতি আসলে রেলে চাকরি করতেন। কিন্তু এখানে সিনেমার নায়ক-নায়িকা দু’জনেই বাচিক শিল্পী। এখানে নায়ক রেডিও জকি। ফলে তার কাছে শব্দযন্ত্র চলে যাওয়া মানে প্র্যাকটিক্যালি তার জীবন শেষ হয়ে যাওয়া।
অর্জুন চরিত্রের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?
শিবপ্রসাদ: অনেক ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলতে হয়েছিল। তাদের মধ্যে অঙ্কোলজিস্ট ও স্পিচ প্যাথোলজিস্টরাও ছিলেন। একটা পরিস্থিতিতে, একটা মানুষকে, একটা গল্পকে জানবার জন্য তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে হয়েছিল। এরপর পেশেন্টদের সঙ্গে, তাঁদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলা, তাঁদের সঙ্গে গিয়ে থাকা; এসবও করতে হয়। তাহলেই বোঝা যায় একটা পরিবার কীভাবে লড়াই করছে। লড়াই কিন্তু শুধু পেশেন্ট একা করে না। তার ছেলে বা তার মেয়ে, তার ডাক্তার, তার কলিগরা কীভীবে তাকে সাপোর্ট করছে এই পুরো জিনিসটা ইমপর্টেন্ট।
পাওলির মতো অভিনেত্রী সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
শিবপ্রসাদ: আমার মনে হয় পাওলি বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অভিনেত্রী। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ভিতরে পুরুষতান্ত্রিকতা থাকেই। সেখানে দাঁড়িয়ে একটি মেয়ে তাঁর নিজের জায়গা তৈরি করেছে, এটাই তো বিশাল ব্যাপার। তাঁকে কেন্দ্র করে সিনেমা তৈরি হয়, তাঁকে কেন্দ্র করে রোল লেখা হয়। ‘নাটকের মতো’, ‘কালবেলা’, ‘তৃতীয় অধ্যায়’-এর মতো ছবি কিন্তু পাওলি দাম মাথায় রেখেই লেখা হয়। পাওলি যে ছবিতে রয়েছেন, সেটাই বড় ব্যাপার। সেদিক থেকে বলতে গেলে একজন বলিষ্ঠ অভিনেত্রী পাওলি। সেই অভিনেত্রীদের সঙ্গে কাজ করা আমাদের কাছে বড় পাওয়া।
[ আরও পড়ুন: ‘এবার থেকে একসঙ্গে থাকো’, রণবীর-আলিয়াকে পরামর্শ নীতু কাপুরের ]
পাওলির সঙ্গে স্মরণীয় কোনও মুহূর্ত…
শিবপ্রসাদ: আমি তো ক্যামেরার পিছনের মানুষ। রোম্যান্টিক সিনগুলিতে ততটা স্বচ্ছন্দ হই না। সেখানে পাওলি প্রায় বলতে গেলে আমাকে গাইড করেছে। আমি খুব গ্রেটফুল। এই জায়গাগুলি আমাদের কাছে বড় পাওয়া। এই সিনেমাতে অনেক নীরব মুহূর্ত রয়েছে। যেমন ট্রেলারেই রয়েছে, ‘ও জল চাইলে তুমি ওকে জল দেবে না।’ এই সাইলেন্ট মোমেটগুলো একজন অভিনেত্রী হিসেবে পাওলি যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, সেগুলি অসামান্য।
জয়া আহসানের সঙ্গেও তো প্রথম ছবি?
শিবপ্রসাদ: তিনচার বছর ধরে এই ছবির প্ল্যান চলেছে। যখনই রোমিলার চরিত্রের কথা ভেবেছি, জয়ার কথাই ভেবেছি। জয়া নিজগুণে যেভাবে দুই বাংলার দর্শকের কাছে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করেছেন, তা অভাবনীয়। তাঁকে কেন্দ্র করে ‘দেবী’, ‘বিজয়া’, ‘বিসর্জন’ তৈরি হয়। এই রোলটা অন্য কোনও অভিনেত্রীর পক্ষে করা মুশকিল ছিল। কারণ জয়া একজন স্পিচ প্যাথলজিস্টের কাজ করেছে। তাঁকে ওই আওয়াজটা রপ্ত করতে হয়েছিল। ট্রেলারে ও যেভাবে ভয়েসটা বের করেছে, বহু স্পিচ প্যাথোলজিস্ট, ডাক্তাররা হাততালি দিয়েছেন। বলেছেন, যে এটা কী করে সম্ভব? এত পারফেক্ট কী করে হয়! এখানেই বোধহয় জয়ার শ্রেষ্ঠত্ব।
যদি হঠাৎ কখনও কণ্ঠ হারিয়ে যায়…
শিবপ্রসাদ: আমি যেহেতু এই সিনেমাটার মধ্যে দিয়ে গিয়েছি, আমার কাছে এই ভাবানাটাই খুব ভয়ঙ্কর। আমি জানি না আমি কী করব। এটা ভাবা আমার পক্ষে খুব মুশকিল। তবে একটা জিনিস, নিয়তি তোমার জীবনের একটা অংশ কেড়ে নিতে পারে। কিন্তু জীবনী শক্তিকে বাদ দিতে পারবে না। আমার যদি কণ্ঠ চলে যায়, দুটো পা চলে যায়, হাত চলে যায়, ফুসফুস চলে যায়, আমি চেষ্টা করব শেষ দিন অবধি কাজ করে যাওয়ার। হয়তো গলা থাকবে না, হয়তো লিখে কাজ করব। না লিখতে পারলে অন্য কিছু করব। কিন্তু কাজ করব।
[ আরও পড়ুন: এবার সিরিয়াল কিলারের ভূমিকায় জ্যাকলিন ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.