Advertisement
Advertisement

Breaking News

সুজিত সরকার

‘মির্জার চরিত্র নিয়ে মিস্টার বচ্চনকে ভয় দেখিয়েছিলাম’, ‘গুলাবো সিতাবো’ প্রসঙ্গে মন্তব্য সুজিত সরকারের

'গুলাব সিতাবো' ছবি তৈরির নেপথ্যের কাহিনি শোনালেন পরিচালক সুজিত সরকার।

Shoojit Sircar shares his shooting experince of Gulabo Sitabo
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:June 21, 2020 7:04 pm
  • Updated:January 11, 2021 5:16 pm  

‘গুলাবো সিতাবো’ সিনেমার শুটিংয়ের স্মৃতিচারণা করলেন পরিচালক সুজিত সরকার। শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ‌্যায়

‘গুলাবো সিতাবো’ যে ছবিটা কি না প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল, সেটা ওটিটি প্ল‌্যাটফর্মে রিলিজ করানোর সিদ্ধান্তটা এখন ঠিক বলে মনে হচ্ছে? আপনি খুশি?
– ওয়েল ইয়েস, এখন যা পরিস্থিতি, তাতে আমি বলব যে, ডেফিনিটলি আই অ‌্যাম ভেরি হ‌্যাপি। রাইট ডিসিশন না রং ডিসিশন, সেটা নিয়ে আমি কিছু বলব না। তবে এই সিদ্ধান্তটা নিতে পেরে আমি খুশি।

Advertisement

জুহি চতুর্বেদির এই গল্পটার মধ্যে আপনার সবচেয়ে কী ভাল লেগেছিল?
– এই যে মির্জা এবং বাঁকের পৃথিবী, খুব সাধারণ জীবন, নিম্ন মধ‌্যবিত্ত স্তরে বেঁচে থাকা, আর জীবন যাপন করতে করতে তারা যে ধরনের মানুষ হয়ে ওঠেন, যে বিহেভিয়ার প‌্যাটার্ন দেখি, হাজারো ভুল-ঠিকের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলে। এবং শেষে গিয়ে দেখি একটা পোয়েটিক জাস্টিস হয়েই যায়। এই যে স‌্যাটায়ার অ‌্যান্ড আইরনি অফ লাইফ- সেটা নিয়ে ছবি করতে বা এই পৃথিবীটা এক্সপ্লোর করতে চেয়েছিলাম।

মিস্টার বচ্চনকে আপনি প্রথাভাঙা কোনও একটা চরিত্র দিলেও, তিনিও দারুণ পারফরম‌্যান্স দেন। এই যে অভিনেতা-পরিচালকের কেমিস্ট্রি, সেটা এত বছর ধরে কীভাবে গড়ে উঠেছে?
– আমার আর মিস্টার বচ্চনের সম্পর্কটা এখন অনেক ম‌্যাচিওর। এবং সেই কারণেই আমার প্রতি তাঁর বিশ্বাসটা তৈরি হয়েছে। তিনি আমার সব ছবি দেখেছেন। আমার মনে হয় মিস্টার বচ্চনের যা এক্সপিরিয়েন্স, তা জীবনের হোক বা এই ইন্ডাস্ট্রিতে থাকার অভিজ্ঞতাই হোক না কেন, সেটা আমাদের চাইতে অনেক বেশি। তিনি সামনের লোকটাকে দেখলেই বুঝতে পারেন তার মধ্যে কতটা ইন্টিগ্রিটি আছে। আর এই এত বছর ধরে আমার সঙ্গে কাজ করতে করতে আমার ভিশনে সারেন্ডার করে দেওয়ার ব‌্যাপারটা তৈরি হয়েছে। অ‌্যান্ড হি ইজ ভেরি হ‌্যাপি অ‌্যাবাউট দিস ফিল্ম। আমাদের এটা-সেটা নিয়ে প্রায় রোজই কথা হয়। তাতেই বুঝতে পারি হি ইজ হ‌্যাপি।


অমিতাভ বচ্চনের লার্জার দ‌্যান লাইফ ছবি দেখে আমরা বড় হয়েছি। ইদানীং আমরা ওঁকে নানান ধরনের ইন্টারেস্টিং চরিত্রে দেখতে পাই। সেটা থেকে আপনার কী মনে হয়? বা মির্জার চরিত্রটা শুনে ওঁর কী রিঅ‌্যাকশন ছিল?
– দেখো, মানুষ তো ধাপে ধাপে একটু একটু করে জীবনে ম‌্যাচিওর হয়, বড় হয়। এই যে ওঁর মধ্যে একটা ম‌্যাচিওরিটি এসেছে বা এখনকার ফিল্মমেকারদের প্রতি একটা বিশ্বাস তৈরি হয়েছে- আমি, সুজয় (ঘোষ) বা অনুরাগের (কাশ‌্যপ) ওপর তা এসেছে ওঁর কৌতূহল এবং নতুন কিছু এক্সপেরিমেন্ট করার অদম‌্য নেশা থেকে। ‘গুলাবো সিতাবো’তেই (Gulabo Sitabo) দেখো নিজের ইমেজকে একেবারে ভেঙে দিয়েছেন। ‘অমিতাভ বচ্চন’ ইমেজটাকে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। এইটা করা কোনও একজন সুপারস্টারের পক্ষে খুব কঠিন। ‘আমি’টাকে ভেঙে দেওয়া অত সহজ নয়। সবাই পারে না। এখানে ‘অমিতাভ বচ্চন’ কোথায়? ‘আমি’ কোথায়? মির্জা’র চরিত্রে, ‘অমিতাভ বচ্চন’ তো কোথাও নেই। আমরা তো ‘মির্জা’কেই দেখতে পাই। এই যে ফিয়ারলেস একটা ব‌্যাপার সেটা আস্তে আস্তে তৈরি হয় নানান অভিজ্ঞতা পেরিয়ে।

[আরও পড়ুন: ‘এখানে কেউ চ্যারিটি খুলে বসেনি’, টলিউডে স্বজনপোষণের অভিযোগ উড়িয়ে মন্তব্য স্বস্তিকার!]

‘গুলাবো সিতাবো’-র শুটিং-এর গল্প বলবেন! কীভাবে মিস্টার বচ্চন, ‘মির্জা’-তে বদলে যেতেন, সেটে?
– আমরা যখন প্রথম ওঁকে গল্পটা বলি এবং তারপরে ওঁর সঙ্গে কথা বলে এই লুকটা আমরা ডিজাইন করি। সেই তখন থেকেই উনি গোটা প্রসেসটার মধ্যে ঢুকে গিয়েছিলেন। মুম্বইয়ে নিজের ঘরে বসে এই লুকটা দেখেই বলেছিলেন, ‘এই লুকটাই চাই সুজিত, কী করে হবে?’ তারপর আমি ওঁকে অনেক ভয় পাওয়ানোর চেষ্টাও করেছিলাম। কারণ পরে লোকেশনে এসে কোনও গন্ডগোল না হয়। আমি মিস্টার বচ্চনকে বলতাম, ‘এই মেক-আপ করাটা কিন্তু বেশ সময়সাপেক্ষ হবে। ভেবে দেখুন, পারবেন কি না! লখনউয়ের গরমে প্রত্যেক দিন এতটা সময় ধরে মেক-আপ! পারবেন তো?’ উনি বলতেন, ‘আলবাত পারব, আমার এই লুকটাই চাই, তুই চিন্তা করিস না।’ তারপর আমি সুইডেন থেকে একজন মেক-আপ আর্টিস্ট নিয়ে এলাম। তাঁর সঙ্গে আমি আগেও কাজ করেছি।

ও সব দেখেশুনে বলেছিল, মেক-আপের পুরো বিষয়টা সারতে সাড়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা লাগবেই। এরপর শুটিং কখন করবেন! মিস্টার বচ্চনের (Amitabh Bachchan) এক গোঁ, ‘না আমি করবই।’ আমি আবার ভয় পাওয়ালাম, ‘চলুন শীতকালে করি শুটিং, গরমকালে কষ্ট হবে।’ উনি বলেছিলেন, ‘আমি গরমকালেই শুটিং করতে চাই, তোর কোনও অসুবিধে আছে?’ আমি বললাম, ‘নাহ‌, আমার কোনও অসুবিধে নেই।’ তারপর মির্জার ম‌্যানারিজম নিয়ে ডিসকাশন হল। আমি লখনউতে গিয়ে অনেক ধরনের ম‌্যানারিজম শুট করলাম সাধারণ লোকের। ল‌্যাঙ্গোয়েজ এবং ম‌্যানারিজম। সেখান থেকে উনি ডেভলপ করলেন এই যে আস্তে আস্তে নিজের মনে কথা বলার ব‌্যাপারটা। প্রায় বোঝাই যায় না কীসব বলে যাচ্ছে! সেটা চরিত্রের জন‌্য জরুরি ছিল, কারণ এই লোকটা মনেপ্রাণে বাড়িটা চায়। তাই সারাক্ষণ সেটাই চলে মনের মধ্যে। এইভাবে মিস্টার বচ্চন নিজেকে তৈরি করেছিলেন।
সমালোচকরা ‘গুলাবো সিতাবো’কে ‘কমিক স‌্যাটায়ার’ বলছে, কিন্তু আমার মনে হয়েছে ছবি জুড়ে রয়েছে বেদনার ভার। এটা কি ইচ্ছে করেই রাখা হয়েছে?
– হ্যাঁ, এই মেলানকলি খুব সচেতনভাবেই রাখা হয়েছে। যে অর্থনৈতিক শ্রেণির মানুষের কথা ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে, তাদের কাছে প্রতিদিনকার বেঁচে থাকার লড়াইটা ছাড়া যেন আর কিছুই নেই। আর জীবনের ট্র‌্যাজেডি হল এই প্রতিদিনকার বেঁচে থাকার লড়াইয়ের মধ্যেও আমাদের কিছু ইচ্ছে, লোভ, এটা যে আমাদের কোথায় নিয়ে যায় আমরা ভাবতেও পারি না। কাজেই বেদনা তো থাকবেই।

লখনউতে শুট করার কোনও বিশেষ কারণ?
– একটা পুরনো শহরে শুট করতে চাইছিলাম। প্রথমে দিল্লির কথা ভেবেছিলাম। দিল্লিতে যদিও আমি অনেক শুটিং করেছি, তাই নতুন শহর হলে ভাল হয়। আর জুহি (চতুর্বেদি) লখনউয়ের মেয়ে, তাই নিজের শহর এক্সপ্লোর করাটা ওর পক্ষে সহজ ছিল।

এই শহরেই তো সত‌্যজিৎ রায় ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’র শুটিং করেছিলেন?

– যা, আমি ঠিক করেছিলাম মিস্টার রায় যে হোটেলে সেই সময় ছিলেন, সেই ‘ক্লার্ক আওয়ধ’-এই থাকব। আমি আর অভীকদা (মুখোপাধ‌্যায়) হোটেলে ঢোকা এবং বেরনোর সময় রোজ একবার বলতাম, ‘এই সেই হোটেল যেখানে সত‌্যজিৎ রায় ছিলেন, এখন আমরাও আছি (হাসি)।’

[আরও পড়ুন: সুশান্ত মৃত্যুতে নয়া মোড়! এবার মামলা দায়ের বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে]

‘গুলাবো সিতাবো’র মহিলা চরিত্ররা স্বল্পসময়ের জন‌্য ছবিতে থাকলেও প্রত্যেকেই শক্তিশালী, এবং প্রত্যেকেরই একটা ভয়েস রয়েছে। আপনার অন‌্যান‌্য ছবির ক্ষেত্রেও এটা হয়।
– খুব কনশাসলি না হলেও, আমি এইভাবেই ভাবি। মহিলারা স্ট্রং, এটা ভাবতে আমার অসুবিধে হয় না। একজন আমাকে বলল, ‘আয়ুষ্মানের বোনের চরিত্রে গুড্ডুকে কেন এইরকম চরিত্রহীন দেখিয়েছ?’ আমি বললাম, ‘চরিত্রহীন কোথায়? নিজের জীবন নিজের মতো বাঁচতে চায়, এতে অসুবিধে কোথায়? এটা তো প্রোগ্রেসিভ তাই না? আমার মতে গুড্ডু একজন আধুনিক নারী। ছোট শহরে গুড্ডুর মতো অনেক মেয়েও রয়েছে যারা নিজেদের মতো করে বাঁচতে জানে। যারা বলতে পারে, দাদা তুমি যাও আমি চালিয়ে নেব।’ আর আমার বাড়িতে স্ত্রী এবং দুই মেয়ের মধ্যে আমি আছি। তাই আমি বুঝতে পারি (হাসি)।

কী মনে হয়, আপনার পরবর্তী ছবি ‘উধম সিং’-এর ভবিষ‌্যৎ কী হতে চলেছে? জানুয়ারিতে রিলিজ হওয়ার কথা ছিল। আর এই ছবি নিশ্চয়ই ওটিটি-তে দেওয়ার কথা ভাববেন না?
– মনে হয় না জানুয়ারিতে মুক্তি পাবে। অলরেডি তিনমাস পিছিয়ে আছি আমরা। আর এখনও কাজের স্পিড তেমন আশানুরূপ নয়। এখনও পর্যন্ত আমাদের ইচ্ছে আছে ‘উধম সিং’ বড় পর্দাতেই মুক্তি পাক। তখন কী সিচুয়েশন হবে বলা মুশকিল। তবে এটাও শুনছি যে পরপর অনেক ছবি ওটিটি-তে মুক্তি পেতে চলেছে।

বর্তমান যা পরিস্থিতি, তাতে কি সিনেমার ভাষা বদলে যাবে?
– দেখো, নিয়মকানুন, সোশ‌্যাল ডিসট্যান্সিং মেনে একটা-দুটো ছবি তৈরি হয়তো হবে, কিন্তু এইভাবে কাজ চালিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না। ফিল্মে হিউম‌্যান ইন্টার‌্যাকশন এত বেশি এবং এটা কোনও সোলো পারফরম‌্যান্স ভিত্তিক শিল্প নয়। ইটস এ কোলাবোরেটিভ আর্ট। দেখা যাক, কী হয়!

আপনি এই অবস্থায় নতুন ছবি করবেন?
– অ‌্যাট দিস মোমেন্ট, আমি নতুন ছবিতে হাত দেব না। তবে যদি করতেই হয় তাহলে সেইরকমই স্ক্রিপ্ট করব, যেখানে একটা নতুন ল‌্যাঙ্গোয়েজ তৈরি করে কিছু করা যাবে। কোনও রেগুলার গল্প এই নতুন পদ্ধতিতে শুটিং করা সম্ভব নয়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement