দীপালি সেন: ফের বিতর্কের মুখে পড়লেন রূপঙ্কর বাগচী। এবার তাঁর বিরুদ্ধে উঠল ‘গান চুরি’র অভিযোগ। বৃহস্পতিবার রূপঙ্কর বাগচী ও সুরকার পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে নিউটাউন থানায় অভিযোগটি দায়ের করেন এক গায়িকা ও ইউটিউবার। মনোরমা ঘোষাল নামের এই শিল্পীর অভিযোগ, ছ’মাস আগে তাঁর গাওয়া গান অনুমতি ছাড়াই গেয়েছেন রূপঙ্কর বাগচী। একাজে সুরকার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও যুক্ত বলে অভিযোগ তাঁর।
অভিযোগপত্রে মনোরমা ঘোষাল জানিয়েছেন, ‘সাগর তুমি কেন ডাকো…’ নামে তাঁর গাওয়া গানটির ভিডিও গত বছর ১২ ডিসেম্বর নিজের ইউটিউব চ্যানেলে (মনোরমা’স মিউজিক) আপলোড করেছিলেন। গানের কথা, সুর ও প্রচারের জন্য সুরকার পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ২৮ হাজার টাকাও দিয়েছিলেন। গানটি রেকর্ড করেছিলেন পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেহালার সরশুনার স্টুডিওতে। অভিযোগ, প্রায় ছ’মাস তাঁর ইউটিউবে গানটি চলার পর হঠাৎ গত ২৫ জুন তাঁর সঙ্গে ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ করে সুরকার পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় অনুরোধ করেন গানটি আপাতত তুলে নিতে। কারণ জানতে চাইলে পার্থবাবু জানান, গানটা রুপঙ্কর বাগচী গাইছেন। কিন্তু, তাতে রাজি হননি মনোরমা।
অভিযোগ, গত বুধবার মনোরমা দেখেন তাঁর গাওয়া সেই গানই গেয়ে রুপঙ্কর বাগচী রিলিজ করেছেন। তারপরই তিনি দেখেন, ইউটিউবে তাঁর গানটি তিনি ছাড়া আর কেউ দেখতে পাচ্ছে না। অর্থাৎ, গানটি স্ট্রাইক করে দেওয়া হয়েছে। মনোরমার বক্তব্য, ২৫ জুনই তাঁর অভিভাবক গানটি তুলে নেওয়ার জন্য পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধের কথা জানিয়েছিলেন রূপঙ্কর বাগচীকে। ফোনে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন তাঁর অভিভাবক। পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর গানের ভিডিও-র লিঙ্ক।
ঘটনায় রূপঙ্কর বাগচীর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে, সুরকার পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘গানটা আমার গুরু পীয়ূষ ঠাকুরের লেখা। গানটি মনোরমা ঘোষাল গেয়েছিলেন। তাঁকে লিখিত কোনও চুক্তির মাধ্যমে গানটির স্বত্ত্ব দেওয়া হয়নি। গানটি উনি ভালো গাইতে পারেননি। তারপর আমরা রূপঙ্কর দার সঙ্গে যোগাযোগ করি। উনি গানটা গাইতে রাজি হন। রূপঙ্কর দার ভূমিকা এটুকুই।’’ মনোরমা ঘোষালের থেকে ২৮ হাজার টাকা নেওয়ার কথাও অস্বীকার করেন পার্থবাবু। বলেন, ‘‘গানটা আয়োজনের খরচ বাবদ সাত হাজার টাকা পেয়েছিলাম। সেটাও দিয়েছিলেন ওনার গানের শিক্ষিকা।’’ যেহেতু, গানের কপিরাইট তাঁর কাছে নেই তাই এরকম একটা কিছু হতে পারে, সেসম্পর্কে মনোরমাকে সতর্ক করা হয়েছিল বলেও জানাচ্ছেন পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, হু ইজ কেকে! ফেসবুক লাইভে এসে জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী রূপঙ্কর বাগচীর এই মন্তব্য এবং কলকাতায় অনুষ্ঠান করতে এসে কেকের মৃত্যকে টেনে কয়েকদিন আগেই তোলপাড় হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়া। সংবাদ বৈঠক ডেকে পুরো বিষয়টা নিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন রূপঙ্কর। তবুও যেন বিতর্ক থামছিল না। বিতর্কের জেরে মিও আমোরের বিজ্ঞাপনী গান থেকে বাদ গিয়েছেন রূপঙ্কর। আসন্ন এক বাংলা ছবি থেকেও বাদ দেওয়া হয়েছে তাঁর গান। এখন রূপঙ্কর যাই করেন, নেটিজেনরা তাঁকে কটাক্ষ করতে ছাড়েন না। ঠিক এমন সময়ই ইউটিউবারের গান চুরির অভিযোগে ফের বিপাকে পড়লেন রূপঙ্কর। এই নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি রূপঙ্করের কাছ থেকে।
কয়েকদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় রূপঙ্কর জানিয়ে ছিলেন, ভারত সরকারের হয়ে একটি গান রেকর্ড করেছিলেন। ভারতের অর্থমন্ত্রকের তরফ থেকে এই গানটি আয়োজন করা হয় যেখানে রূপঙ্কর, সৌমজিৎ, সুরেশ ওয়াদেকর, সোনু নিগম সহ একাধিক শিল্পীরা রয়েছেন। বাংলা ছাড়াও এই গানটি রেকর্ড করা হয়ে মারাঠী, তামিল, তেলুগু, মালয়লম, গুজরাটি, পাঞ্জাবি, হিন্দি, ওড়িয়া, অসমিয়া ভাষায়। ফেসবুকে সেই গানের ভিডিওই শেয়ার করেছিলেন রূপঙ্কর। ক্যাপশনে লিখেছিলেন, ‘এরকম একটা সুযোগ পেয়ে সম্মানিত বোধ করছি।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.