ছবি রিলিজের আগেই ‘টেক্কা’র নেপথ্য ম্যাজিক বলে দিলেন রুক্মিণী মৈত্র(Rukmini Maitra) ! লিখছেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়
কেমন আছেন? ‘টেক্কা’র রেসপন্স কেমন পাচ্ছেন?
– খুব ভালো আছি। যখন প্রথম আমার লুকটা বেরোয় তখন থেকেই ভালো সাড়া পেয়েছি। যদিও ছোট চুলের লুকটা নিয়ে টেনশনে ছিলাম!
আপনি ‘বুমেরাং’-এ চুল ছাড়াই কাঁপিয়ে দিয়েছেন, এখানে তো তাও ছোট চুল!
– (হাসি) আমার মাও সেম কথা বলেছে। আগের ছবিতে নেড়া, এই ছবিতে তাও মাথায় চুল আছে। এটাই আমার কিক যে, প্রতিটা ছবিতে নতুন কিছু করব। মেনস্ট্রিম ছবির নায়িকারা হয়তো আমার ছন্দে হাঁটবে না, বা আমি যে ধরনের ছবি নির্বাচন করি সেগুলো করবে না।
বক্স অফিসের সাফল্যের নিরিখে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের নাম প্রথম সারিতে। তাঁর সঙ্গে প্রথম কাজ, কতটা এক্সাইটেড?
– সারপ্রাইজিংলি, সৃজিত এর আগেও আমাকে ছবি অফার করেছিল, ২০১১ সালে। আমি তখন খেয়ালও করিনি। আই মিন, অভিনয় নিয়ে তেমন মাথাব্যথা ছিল না। তাই মেসেজের উত্তরও দিইনি তখন।
ওহ! তাই নাকি?
– হ্যাঁ, আমি এরকম করতে পারি। ‘টেক্কা’র আগেও গত পুজোয় একটা ছবি অফার করে, যেটা ‘বুমেরাং’-এর সঙ্গে ডেট ক্ল্যাশ করায় আমি করতে পারিনি।
কোন ছবি?
– আমার মনে হয়, সেটা ছিল ‘দশম অবতার’। যখন আবার ‘টেক্কা’র অফার এল এক মাসের মাথায় আমি ওকে ‘না’ বলেছিলাম। কারণ, মনে হয়েছিল যেহেতু ‘দশম অবতার’ করতে পারিনি, এটা তার কমপেনসেশন অফার। আমাকে অভিনেতা হিসাবে দরকার পড়লে, তখনই ডাকুক- এটা আমার সবসময়ের স্ট্যান্ড। বাট দেন হি কনভিন্সড মি। বলেছিল, আগে শোন, তারপর ‘না’ বলিস। যখন আমি গল্পটা শুনি, স্ক্রিপ্ট-এর শেষ পাতা পড়ার আগেই ‘হ্যাঁ’ বলেছিলাম। কারণ গল্পটা আমার দারুণ লেগেছিল।
‘মায়া’ কেমন?
– ‘মায়া’ আমার কেরিয়ারের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং চরিত্র, মোস্ট ডিফিকাল্ট। সাইকোলজিকালি এতটা কষ্ট বা স্ট্রেস আগে কখনও কোনও চরিত্র করতে গিয়ে অনুভব করিনি। মায়ার ভিতর যে যুদ্ধটা চলে, সেটা আমাকেও চালাতে হচ্ছিল। কারণ ‘মায়া’ একা নয়, তার মধ্যে পাঁচটা মানুষ বাস করে। চরিত্রটা খুবই জটিল। মায়া ইজ ভেরি অ্যাওয়ার, ভেরি ক্যালকুলেটিভ, ম্যানিপুলেটিভ, স্ট্রং এবং কোথাও আবেগপ্রবণ । ওপরে শান্ত, কিন্তু ভিতরে অনেক কিছু চলছে।
নিজের সঙ্গে রিলেট করতে পারেন?
– খুব একটা না। কিছু মিল আছে। যেমন আমি খুব ওপিনিয়েনেটেড। আমিও আবেগপ্রবণ। অতটা ক্যালকুলেটিভ, ম্যানিপুলেটিভ না হলেও আমার মধ্যে ঝড় বয়ে গেলেও বাইরে বুঝতে দিই না। খুব রেগে গেলে হয়তো চোখের চাহনিতে বুঝিয়ে দিই, তবে সেটা বছরে একবার হবে (হাসি)।
সেটা হয়তো দেব বুঝতে পারে, তাই তো?
– খুব কাছের মানুষের উপর রেগে গেলে, প্রথমে আমার তাকানোর একটা স্টেজ আছে, চেঁচামেচির একটা স্টেজ আছে, তারপর কান্নাকাটির স্টেজ আছে। হ্যাঁ, রেগে গেলে আমি বুঝিয়ে দিই। তবে হ্যাঁ, তারপর শান্তও হয়ে যাই। কিন্তু আমি ভার্বাল অ্যাবিউজ করি না। আমি কী বলব, মানে আমার মুখ দিয়ে কী বেরবে সেটা নিয়ে আমি সতর্ক থাকি।
দেব তো খুব ইয়ার্কি মারে, যা ইচ্ছে তাই নিয়ে মজা করে।
– আমিও মজা করি, ঠাট্টা করি, তবে রেগে গেলে সতর্ক হয়ে যাই। এমন কিছু বলতে চাই না, যেটা সে সারাজীবন মনে রেখে দিয়ে কষ্ট পাবে। সিনেমার প্রসঙ্গে ফিরি। আমার মনে হয়, সব নারীর মধ্যেই ‘মায়া’ আছে। মায়ার মতো মেয়েরা সব জায়গায় মন খুলে রিঅ্যাক্ট করতে পারে না। ক্যালকুলেটিভ হতেই হয়। উই চুজ আওয়ার ব্যাটল আফটার মাচ থট। আর এই ছবিতে মায়া নেগোশিয়েটর। আমি মনে করি, মহিলারা নেগোসিয়েশনের মধ্যেই সারাক্ষণ বাঁচে। বাড়িতে বাবা-মার ঝগড়া হলে, মেয়েই তাদের মধ্যে নেগোশিয়েট করে। সবদিক সামলানোর দায়িত্ব মেয়েদের উপরেই দেওয়া হয়েছে।
দেব আর আপনার ঝগড়া হলে সেতুবন্ধনে কে এগিয়ে আসে?
– বাপরে… (হাসি)। আমি আর দেব খুব বেশি ঝগড়া করি না। আর করলেও, ঝগড়ার সময় কেউ একজন বলে, অন্যজন শোনে। দেয়ার ইজ নো ফাইট। এবার কে বলে আর কে শোনে, সেটা কাগজে বলব না। আসলে যখন দুজন লজিকালি সাউন্ড মানুষের মধ্যে মতপার্থক্য হয়, সেটা ঝগড়া নয়, ইটস মোর অফ এ ডিসকাশন। মুড সুইং হলে আলাদা কথা। মা-বাবার থেকে শিখেছি, অযথা তর্ক এড়িয়ে, সমস্যা নিয়ে কথা বলা শ্রেয়। আরেকটা দারুণ উপায় আছে যেটা মা-বাবার থেকেই শেখা। কখনও ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে ঝগড়া হলে, মানে একে অপরকে সহ্য করতে পারছে না, চেঁচামেচি, তর্ক হচ্ছে- সঙ্গে সঙ্গে হাতটা ধরে ফেলো।
ওহ! এটা দারুণ তো…
– হ্যাঁ, মানে মুখে বললে হয়তো বোঝানো যাবে না, বাবা-মাকে দেখেছি। আসলে কী হয়, হাতটা ধরা মাত্রই বডির এনার্জির মধ্যে একটা পরিবর্তন হয়। বাবা-মা, বন্ধু-প্রেমিক যে কারও ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য। হাত ধরলেই একটা এনার্জি ট্রান্সফার হয়। কেউ না কেউ শান্ত হয়ে আসে। আর আমি যদি খুব রেগে যাই, পছন্দের খাবার নিয়ে এলে সব ভুলে যাই। ঝগড়ার মধ্যে খালি বলতে হবে, ‘আচ্ছা তর্কটা পজ করে একটা খাবার অর্ডার করি।’ দ্যাটস দ্য ট্রাম্প কার্ড।
যাহ! ‘টেক্কা’টা বলে দিলেন!
– এটুকু তো বলতেই হবে। না হলে আমার কাছের মানুষ আমার সঙ্গে থাকবে কী করে। তারা তো এতদিনে আমায় চিনে গিয়েছে।
স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি দৃশ্য আপনার। কেমন বন্ডিং ছিল দুজনের মধ্যে?
– স্বস্তিকার সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করব শুনে আমি প্রথমে খুব এক্সাইটেড ছিলাম, কিন্তু সেটে পৌঁছে বেশ নার্ভাস হয়ে যাই। শি ইজ আ ব্রিলিয়ান্ট অ্যাক্টর। যখন সামনে গিয়ে দাঁড়াই, বুঝতে পারি যে একেবারেই ঝামেলাবিহীন একজন মানুষ। অ্যান্ড শি ইজ সো সিকিওরড অ্যাজ এ পার্সন, যে স্টার বলে আলাদা করে কিছু টের পেলাম না। আমি যখন ভালো টেক দিচ্ছি তখন স্বস্তিকা সবার আগে প্রশংসা করছে।
সৃজিত-স্বস্তিকা দুজনেই বলেছেন, এটা দেবের বেস্ট। আপনি কী বলবেন?
– আমি সহমত। এটা নিয়ে আমি কিন্তু জেলাস! দেব এই পুরো সিনেমায় অ্যাকশন আর কাট-এর মাঝখানে একটু মন দিয়ে পারফর্ম করেছে। আর বাকি সময়টা সারাক্ষণ ‘খাদান’ নিয়ে পড়ে ছিল। মানে শুটিং-এও ‘খাদান’-এর টিমের সঙ্গে মিটিং করছে। স্ক্রিপ্টও ভালো করে পড়েনি। সংলাপ দেখে সিন করতে চলে যাচ্ছে। আর আমি খাটছি, স্ক্রিপ্ট বারবার পড়ছি, টেনশন করছি, আর দেব তুড়ি মেরে প্রতিটা সিন করে ফেলছে। মিনিমাম ইনপুট দিয়ে ম্যাক্সিমাম আউটপুট নিয়ে বেরিয়ে গেল। কী করে! নট ডান (হাসি)!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.