‘বুমেরাং’ মুক্তি নিয়ে আড্ডায় রুক্মিণী মৈত্র। তাঁর ন্যাড়া লুক দর্শককে চমকে দিয়েছে। লিখছেন, বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
বাঘ আর হরিণ নিয়ে আপনার সোশাল মিডিয়া পোস্ট দারুণ হিউমারাস!
– আমরা ‘বুমেরাং’ নিয়ে কথা বলি?
এটাও তো একধরনের ‘বুমেরাং’! ভোট গণনার দিন সকালে কি একটু টেনশনে ছিলেন?
– ৫ বছর অন্তর এই দিনটা যখন আসে, তখন শুধু আমি কেন, প্রত্যেকের এটা মনে হয়, কী হতে চলেছে।
ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা সকলেরই থাকে। এবারের ভোট দেখিয়ে দিয়েছে জনগণের ভরসা কোথায়।
‘বুমেরাং’-এ ‘নিশা’-র ন্যাড়া মাথার লুকে আপনাকে ‘স্টার ওয়ারস’-এর নায়িকার মতো লাগছে।
বাংলা ছবিতে মহিলা রোবট দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। আপনি কতটা কনফিডেন্ট ছিলেন এমন একটা চরিত্রে অভিনয় করতে?
– প্রথমে ডাবল রোল শুনে খুব এক্সাইটেড হয়েছিলাম। ‘বুমেরাং’, ফাল্গুনী চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় ‘পুনরায় রুবি রায়’ নাটক থেকে অনুপ্রাণিত। কিন্তু নাটকটা দেখার পর একটা মানুষ, অন্যটা রোবট– এটা নিয়ে ভাবনা হয়েছিল। কারণ অত সহজ নয়। মোনালিসা এবং পরিচালক সৌভিকের সঙ্গে ওয়ার্কশপ করি। আইবলের স্ট্যাটিক মুভমেন্ট মেনটেন করা, হেড মুভমেন্ট– প্রচুর অঙ্ক আছে। তবে এই যে নতুন একটা এক্সপিরিয়েন্স, এটা ছাড়তে চাইনি। আর রোবটের চরিত্র সচরাচর অফার করে না কেউ।
জিতের ছবি মানেই নায়ক সর্বস্ব। এবারে কি একটু অন্যরকম বলেই রাজি হয়েছিলেন ছবিটা করতে?
– জিতের সঙ্গে আমার প্রথম ছবি। আর এটার উত্তর জিৎ নিজেই দিয়েছেন মঞ্চে দাঁড়িয়ে। তিনি বলেছেন, ‘ছবি দেখার পর কাউকে নিয়ে বাড়ি ফিরে গেলে সেটা নিশা, এটা আমার ছবি নয়, এটা রুক্মিণীর ছবি।’ আমি নিজেই খুব ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলাম এটা শুনে।
মেনস্ট্রিম ছবিতে নায়িকার ন্যাড়া মাথা– রাজি হলেন কেন?
– শুটিং শুরু হওয়ার পর একদিন সৌভিক আমাকে এসে অফারটা দেয় এবং এটা কেন দরকার বুঝিয়ে বলে। আমি রাজি হয়ে যাই। ওকে বলেছিলাম, মেনস্ট্রিম ছবিতে নায়িকাকে ন্যাড়া দেখাবে, আমার আপত্তি নেই। বুমেরাং হয়ে ফিরে এলে দায়িত্ব তোমার (হাসি)। রাজি হয়েছিলাম বিকজ হি কনভিনসড মি। আমার কোনও ভয় ছিল না। আর এই লুকটা ছবিতে অল্প কিছু অংশের জন্য রয়েছে।
লুক টেস্ট করে প্রথমে আয়নায় নিজেকে দেখে কী মনে হয়েছিল?
n আই লাভ মাইসেলফ ইন দ্য ব্যাল্ড লুক। কেউ বিশ্বাসই করছে না। নিজেকে সুপারমডেল মনে হচ্ছিল। আর যেটা ভালো লাগছে, সিনেমায় ন্যাড়া মাথা মানেই হয় স্বজন বিয়োগ বা কোনও অসুস্থতার ঈঙ্গিত। এখানে আমরা খুব পজিটিভিটি নিয়ে লুকটা করেছি, ওনারশিপ নিয়ে করেছি। আর আমার এই ন্যাড়া মাথার ছবি দেখে অনেক মহিলা সেটাকে কপি করছে।
‘ফ্লিব্যাগ’-এর সেই বিখ্যাত সংলাপ মনে পড়ে গেল– ‘হেয়ার ইজ নট এভরিথিং’।
– বিশ্বাস করো আজকের যুগের কনফিডেন্ট মহিলাদের কাছে হেয়ার ইজ নট এভরিথিং। এই যে লম্বা চুল মানেই ‘সমাজের চোখে’ একটা সিকিউরিটির জায়গা এবং সেটা ভেবে অঁাকড়ে ধরে থাকা এটা ভুল প্রমাণ করে দিচ্ছে মহিলারাই। লম্বা চুল ছাড়াও কনফিডেন্স পাওয়া যায়। অ্যাম সো গ্ল্যাড যে কোথাও না কোথাও আমি এই জার্নিতে কনট্রিবিউট করলাম।
দেব যখন প্রথম এই লুকের ছবি দেখে, কী রিঅ্যাকশন ছিল?
– দেব বলেছিল যে, হ্যাটস অফ টু ইওর কারেজ, আমি জানি না যে দর্শক কীভাবে নেবে, কিন্তু আমার এটা দারুণ লেগেছে।
ছবিতে তো ‘ইশা’কে ছাপিয়ে যেতে পারে ‘নিশা’!
– তার মানে তো আমিই আমার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছি!
তাই তো মনে হচ্ছে…
– তার মানে এটা সত্যি যে আই অ্যাম মাই ওনলি কমপিটিশন (হাসি)। আই লাভড ‘নিশা’।
দুই চরিত্রের মধ্যে যাতায়াতটা কতটা কঠিন ছিল?
– একটু হলেও তো একটা বাড়তি এফর্ট দিতে হয়েছে। তাছাড়া কমপ্লিট একটা মেকওভার। টাইম কনজিউমিং একটা ব্যাপার। কারণ রোবট-এর নর্মাল লুকটা করতেও দুঘণ্টা লাগত। আর কী বলো তো, একটা দৃশ্যে ইশার চরিত্রে, পরের দৃশ্যেই আবার রোবটের চরিত্রে। প্রত্যেকদিন সবার আগে সেটে ঢুকে, সকলের পরে বেরতাম। আর নিজের সবটা নিংড়ে কাজটা করি, যদি আমি কমিট করি। একদিন নিশার একটা দৃশ্যের কথা মনে পড়ছে। সেদিন সকাল সাতটা থেকে শুট করার পর রাতে ‘নিশা’র চরিত্রে সিলিং-এ হার্নেস পড়ে সিন করার কথা। রাত সাড়ে তিনটে পর্যন্ত কাজ চলেছে। এবং সিলিং-এ হাঁটার যে দৃশ্য আছে যেগুলো আমিই করেছি, ভিএফএক্স নয়।
কোন ম্যাজিকে আপনি দেব আর জিৎ- দুজনকেই নিজের কোর্টে রেখেছেন?
– সবাই আমাকে কেন এটা জিজ্ঞেস করছে। কই দেব আর জিতকে তো জিজ্ঞেস করা হয় না, তঁারা কী করে মাল্টিপল হিরোইনদের সঙ্গে কাজ করছেন। এটা সমাজের অদ্ভুত দৃষ্টিভঙ্গি। এনিওয়ে– এটা কোনও ম্যাজিক নয়। আমার মনে হয় তারা বিশ্বাস করে আমি দায়িত্ব নিতে পারি। সেই ভরসাটা দিতে পেরেছি। কাজ না পারলে কেউই জায়গা দিত না।
আমার মনে হয় সবাই এটাও বলে যে আপনি অনেক বেশি দেবের প্রোডাকশনে লিড রোল করেন!
– শুনতে হয়েছে আমি কিন্তু অন্যদের সঙ্গেও কাজ করেছি সেটা নিয়ে কেউ কিন্তু কথা বলে না। এই বছরটা আমার শুরু মুম্বইয়ে একটা ডান্স নাম্বার দিয়ে। ‘ক্র্যাক’ ছবিতে। লোকে চোখে কাপড় বেঁধেই থাকতে চায়। তাদের বুঝিয়ে, চোখে আঙুল দিয়ে দেখালেও দেখবে না। আমি কিন্তু আমার মতো কাজ করে যাচ্ছি, সেটাই আমার উত্তর।
আরও আছে, সকলে এটাও বলছে আপনাদের বিয়ে হয়ে গেছে।
– ওহ গড! এটা যে কোথা থেকে আসছে! গুগলেও পৌঁছে গেল। শুধু তাই নয়, একটা বাচ্চার কথাও আছে, সে আমার ভাগনি। যেহেতু ‘আমাইরা’-র সঙ্গে এত ছবি, ওকে আমার বাচ্চা বানিয়ে দিয়েছে।
আনুষ্ঠানিক বিয়েটা কবে করবেন?
– যে বছর মিডিয়া স্পেকুলেট করবে না, বোধহয়– সেই বছর বিয়েটা করে নেব। আর আমার মা জিজ্ঞেস করে না, তোমরা জানতে চাইছ কেন? দেখো যেদিন মনে হবে আই অ্যাম রেডি টু গেট ম্যারেড, করে নেব। আমি কিন্তু বিয়েতে বিশ্বাসী। এবং বিয়ে লুকিয়ে রাখতে একদমই বিশ্বাসী নই। আমি জীবনে যে পদক্ষেপই নিয়েছি সামনাসামনি নিয়েছি। সবে কাজ শুরু করেছি। এত ব্যস্ততা রয়েছে যে বিয়ের প্ল্যান করা সম্ভব নয়। যখন হবে, তখন হবে। আর আমার মনে হয় কমিটমেন্ট বেশি জরুরি। আজকাল অনেক বিয়েতেই দেখি, বিয়ে টিকে আছে, কিন্তু কমিটমেন্ট নেই। তাই আমাদের কমিটমেন্ট থাকুক, বাকিটা ক্রমশ প্রকাশ্য।
জীবনে কী বুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে?
– সবচেয়ে বড় বুমেরাং হল আমার অভিনয়ে আসা। এটা কোনওদিন প্ল্যানে ছিল না, ভেবেছিলাম কোনওদিন অভিনেত্রী হব না। সেটা হল না। সাত বছর হয়ে গেল এই প্রফেশনে।
আপনি ভোটে প্রচার থেকে দূরে থাকবেন এটা কি আপনার আর দেবের কনশাস ডিশিসন?
– এটা নিয়ে কখনও আলাদা করে কথা হয়নি। আমাকে যেখানে দরকার আমি সেইখানে নিজের প্রেজেন্সটা রাখতে পছন্দ করি– সেটা অভিনয়ের জায়গা। যেখানে আমাকে দরকার নেই সেখানে গিয়ে লাভ আছে বলে মনে করি না। এটা একেবারে ওর আলাদা কর্মক্ষেত্র। ওর একার জার্নি। আর একাই নিজেকে খুব পরিণত ভাবে সামলেছে। প্রচারে ওর পাশে আমি হয়তো নেই, কিন্তু ওর সঙ্গে আছি। আমার সাপোর্ট সবসময় দেবের সঙ্গে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.