সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ঋত্বিক ঘটক জীবনের শুরুর সময়টা কাটিয়েছেন রাজশাহীর যে পৈতৃক বাড়িতে, অশান্ত বাংলাদেশে সেই বাড়িটিই ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল। যে মানুষটি দুই বাংলার ছিন্নমূল, বাস্তুহারাদের কষ্ট-যন্ত্রণার কাহিনি সিনেপর্দায় ফুটিয়ে তুলেছিলেন, পদ্মার সঙ্গে যাঁর আত্মিক যোগ ছিল, তাঁর বাংলাদেশের বাড়িই আজ নিশ্চিহ্ন! রবীন্দ্রনাথের মূর্তি, রোকেয়া বেগমের ছবির পর কিংবদন্তী পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক ভিটে ভেঙে ফেলা হল।
এই বাড়িতে থাকার সময় ঋত্বিক রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল ও রাজশাহী কলেজে পড়েছেন। রাজশাহী কলেজ ও মিঞাপাড়ার সাধারণ গ্রন্থাগার মাঠে কালজয়ী কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে নাট্যচর্চা করেছেন। ওই সময় ‘অভিধারা’ নামক সাহিত্যপত্রিকা সম্পাদনা করতেন তিনি। তাঁকে ঘিরেই তখন রাজশাহীতে সাহিত্য ও নাট্য আন্দোলন গতি পায়। এই বাড়িতে থেকে গিয়েছেন ঋত্বিক ঘটকের ভাইঝি তথা বরেণ্য লেখিকা মহাশ্বেতা দেবীও। বাংলাদেশের রাজশাহীতে বিশ্ববরেণ্য পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক ভিটে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘোড়ামারা মহল্লার মিঞাপাড়ায় এই বাড়ির উঠোনে এখন ইটের ধ্বংসস্তূপ। খবর প্রকাশ্যে আসতেই বুধবার দুপুরে রাজশাহীর সিনেকর্মীরা ভিড় করেন বাড়িটিতে। বাড়িটির পাশে থাকা হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁদের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ও হয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বাড়িটি ভেঙে ফেলা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ঠিকেদার। তবে কলেজের অধ্যক্ষ বলছেন, তাঁদের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাই এটা ভেঙে ফেলেছেন।
\এই বাড়ির পুরো ৩৪ শতাংশ জমি ১৯৮৯ সালে এরশাদ সরকার রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালকে ইজারা দেয়। কলেজটি বাড়ি ঘেঁষেই পশ্চিম পাশে রয়েছে। ২০১৯ সালে বাড়িটির একাংশ ভেঙে সাইকেল গ্যারেজ তৈরির অভিযোগ উঠেছিল কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তখন রাজশাহী-সহ সারা দেশে এই ঘটনার প্রতিবাদ ওঠে। পরে ২০২০ সালে বাড়িটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয় রাজশাহী জেলা প্রশাসন। ঋত্বিক ঘটকের বাড়ির আঙিনায় এখন ইটের স্তূপ পড়ে আছে। সেখানে বাড়ির কোনও চিহ্ন নেই।
বুধবার রাজশাহীর চলচ্চিত্রকর্মীরা বেলা সাড়ে ১২টার মধ্যে সেখানে জড়ো হন। কলেজ অধ্যক্ষের কাছে তাঁরা জানতে চান, ঋত্বিক ঘটকের বাড়িটি কারা, কীভাবে ভাঙল? কলেজ কর্তৃপক্ষ বলে, তারা জানেন না। দুষ্কৃতীরা ভেঙেছে। এই সময় চলচ্চিত্রকর্মী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে কলেজ কর্তৃপক্ষের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। সেখানে থাকা শ্রমিকেরা এদিনও বাড়ি ভাঙার কাজ করছিল। তাঁরা জানান, তাঁরা এখানে কলেজ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ভাঙার কাজ করছেন।কলেজের অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান বলেন, ৬ আগস্ট অফিস খোলার দিন তাঁরা আসেন। তখন বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এখানে আসেন। তাঁরা বলতে থাকেন বঙ্গবন্ধুর ছবিটা নামিয়ে নিতে। তখন তাঁরা ব্যানারগুলো নামিয়ে ফেলেন। শিক্ষার্থীরা তখন বলেন, “এই জায়গাটা ভেঙে ফেলতে হবে। তখন তিনি প্রশ্ন করেন, ‘এটা কেন ভেঙে ফেলতে হবে?’ পরে সেদিনের মতো শিক্ষার্থীরা চলে যান। তবে সেদিন রাত আটটায় তিনি ফোনে জানতে পারেন, এই বাড়িটি ভাঙা হচ্ছে। তৎক্ষণাৎ এসে দেখেন, ছয় থেকে সাত জন শ্রমিক বাড়ি ভাঙছেন। শ্রমিকেরা তাঁকে জানিয়েছেন, “কয়েকজন তাঁদের টাকা দিয়ে এটা ভাঙতে বলেছেন।” উল্লেখ্য, এই জায়গাটা হাসপাতালের আউটডোর ও ইনডোর হিসেবে ব্যবহারও করা হত। ঋত্বিক ঘটকের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে শামিল পদ্মাপারের চলচ্চিত্র ও সাংস্কৃতিকর্মীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.