Advertisement
Advertisement

Breaking News

Rituparna Sengupta

‘আমার জীবনটাই প্রেশার কুকারের মতো’, কেন বললেন ঋতুপর্ণা?

ইন্ডাস্ট্রিতে তিন দশক পার, 'পুরাতন' হয়েও নতুন হয়ে রইলেন কীভাবে? জানালেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।

Rituparna Sengupta Shares her work experince with Sharmila Tagore in Puratan
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:March 28, 2025 9:37 pm
  • Updated:March 28, 2025 9:37 pm  

অভিনয়ের সঙ্গে প্রযোজনার চাপ। শর্মিলা ঠাকুরের সঙ্গে কাজ। সবকিছু নিয়ে অকপট ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। কথোপকথনে শম্পালী মৌলিক।

নিজস্ব প্রযোজনায় ‘পুরাতন’ নিয়ে আসছেন। টলিউডে সাধারণত নায়কদের প্রযোজনা করতে দেখা যায়। হাতে গোনা নায়িকা প্রযোজনা ও অভিনয়ের চাপ নেন। এত দীর্ঘদিন এই চাপ নিয়েছেন কীভাবে?

Advertisement

– আসলে, আমার জীবনটাই প্রেশার কুকারের মতো। আমার কেরিয়ারের শুরু থেকেই চাপ নিয়েছি সবসময়। যদিও ছোটবেলা থেকে এই প্রফেশনে আসার জন‌্য গ্রুমড হইনি। তবে যখন থেকে এলাম, দ‌্য প্রেশার ওয়াজ অন। প্রেশারের মধ্যে কাজ করলে ভালো কিছু হয়। বলে না, লট অফ গুড থিংস হ‌্যাপেনস আউট অফ কেওস! কিন্তু আমার কাছে কেওসটা একটু অন‌্যভাবে আসে। আমি একজন ইন্ডিপেনডেন্ট অ‌্যাক্টর, ইন্ডিপেনডেন্ট প্রোডিউসার, ইন্ডিপেনডেন্ট পার্সোনালিটি- সব মিলিয়ে প্রেশারটা বেশি। তার পরে অবভিয়াসলি, সংসার-বাড়ি সব কিছু। এই প্রযোজনা প্লাস অভিনয়ের প্রেশারটা আমার কাছে ইউনিক। ‘পুরাতন’ ফিল্মটাও আমার কাছে ইউনিক। আমি যে চাপটা নিতে পেরেছি সেটাও আমার কাছে বড় বিষয়। ওই, হোয়‌্যার দেয়ার ইজ আ উইল দেয়ার ইজ আ ওয়ে।

বোঝা গেল…
– প্রায় গড সেন্ট-ই বলব। যখন শর্মিলা ঠাকুর নিজের ইচ্ছেপ্রকাশ করেন, আমার সঙ্গে একটা ছবি করার। আমার সঙ্গে ওঁর ফোনে কথা হত মাঝে মাঝে বিভিন্ন বিষয়ে। একদিন বললেন, ‘জানো, আমার না, একটা বাংলা ছবি করতে ইচ্ছে করছে। অনেকদিন করিনি। যদি তুমি করো, তা হলে খুব খুশি হব। আর আমাকে একটা সাবজেক্ট দাও, যাতে আমার মনে হবে আবার বাংলা ছবি করার মতো।’ শুনে আমার খুব ভালো লাগল। আমি ভাবিনি, উনি এরকম একটা কথা বলবেন। তারপরে এক-দুবার কথা হয়েছে। বলতাম, ‘ভাবছি, ভালো কিছু পাঠাব।’ এর পরে সুমন ঘোষ এসেছিল, আমার সঙ্গে কথা বলতে, অপর্ণা সেনের ডকুমেন্টারি নিয়ে। আমি ওর সঙ্গে আগেও কাজ করেছি। সুমন বলল, যে আমেরিকায় যাচ্ছে, ওখানে শর্মিলা ঠাকুর আর মমতা শঙ্করের চ‌্যাট আছে। সত‌্যজিৎ রায়-এর সেন্টেনারি উপলক্ষে‌। তখন আমি সুমনকে বলি, শর্মিলা ঠাকুরের কথা। আমরা কি ওঁকে নিয়ে একটা গল্প ভাবতে পারি? এই ভাবে জিনিসটা শুরু হয়। তার পর সকলেই বলে, এইটা আমাদের ‘ভাবনা আজ ও কাল’-এর থেকে হলে দারুণ হবে। বিশেষ করে শর্মিষ্ঠা (মুখোপাধ‌্যায়) বলে। এই ভাবে ‘পুরাতন’ প্রযোজনা করার ব‌্যাপারটা আরও বেশি করে এল। মনে হচ্ছিল যে, আমি এত বড় একটা প্রোজেক্ট করতে পারব তো! অনেকটা টাকার বিষয়, নানা লোকেশনে শুটিংয়ের ব‌্যাপার। সুমন সাহস দিয়েছিল যে, ঠিক পেরে যাব। আমি সন্দিহান ছিলাম যে, আমি তো অত বড় প্রযোজক নই। প্রায় ছয়-সাত মাস ধরে আমরা প্রি-প্রোডাকশন করেছি।

Rituparna Sengupta once again got ed summon for next week

তারপর?
– শর্মিলা ঠাকুরের কাছে গেলাম আমরা দিল্লিতে স্ক্রিপ্ট শোনাতে। ওঁর পছন্দ হয়। আমাদের গলৌটি কাবাব, আরও কত কী খাওয়ালেন। শুটিংয়ের ডেট নির্ধারণ করা হল। বম্বে থেকে ওঁর স্টাফেরা এল। পুরো পদ্ধতিটা আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল। উনি আমাকে খুব স্নেহ করেন। যাওয়ার আগে প্রযোজক হিসেবে আমাকে মার্কস দিয়ে গিয়েছেন (হাসি)। সেটা আমার খুব ভালো লেগেছে। আর শর্মিষ্ঠা ওঁর খুব টেক কেয়ার করেছে এই শুটিংয়ে।

শুটিংয়ে মানুষ হিসাবে শর্মিলা ঠাকুরকে কেমন লাগল?
– খুব ইউনিক একজন মানুষ। এত অ‌্যাকমপ্লিশড, এত কমপ্লিট, সব কিছুতে পারদর্শী। ওঁকে দেখে ভাবতাম, এই মানুষটাই ‘দেবী’ করেছেন, বা ‘কাশ্মীর কি কলি’, ‘আরাধনা’। আবার ‘অ‌্যান ইভনিং ইন প‌্যারিস’-এ ওইরকম ডায়নামিক ড্রেস পরেছেন। রাজেশ খান্না, ধর্মেন্দ্র, জিতেন্দ্র, অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে কাজ করেছেন, এবং এখানে ‘অপুর সংসার’ বা ‘আনন্দ আশ্রম’ করেছেন। রেঞ্জটা দেখলে অবাক হয়ে যাই। এতবড় পরিবারের দেখভাল করেছেন, পতৌদির স্ত্রী- অমন লেগাসি বহন করছেন, সন্তানদের প্রতিপালন করেছেন, হয়তো অনেক এফর্ট দিতে হয়েছে। তবে আমরা যেটা চোখে দেখেছি, শি ডিড ইট সো এফর্টলেসলি! সাচ আ হিউজ লেগাসি। মনে হয় না, আর কোনও ভারতীয় অভিনেত্রী তৈরি করতে পেরেছেন। সেট-এ দেখতাম গ্র‌্যান্ডসনদের ফোন আসত। একদিন বললেন, ‘জানো তো আমার নাতির জন্মদিন। ওকে একটা বল গিফট করব।’ দেখলাম ফোনে কথা বলছেন, যে কী বল উপহার দেবেন। এই যে মাদার ইন্সটিংক্ট বা ঠাকুমার সত্তা- সেটাও খুব সুন্দর। ওই সেটেই আমার অ‌্যানিভার্সারি সেলিব্রেট করা হয়। সঞ্জয়কে ডেকে নিয়েছিলাম ওখানে, সবাই মিলে কেক কাটলাম। উনি কত আশীর্বাদ করলেন আমাকে। দেখলাম এই বয়সেও আদ‌্যন্ত প্রফেশনাল, একদম ঠিক সময়ে আসতেন সেট-এ। দেড় ঘণ্টা ট্র‌্যাভেল করে আসতেন, সকালে শর্মিষ্ঠা আনতে যেত ওঁকে। উনি রেডি থাকতেন একদম সাতটার মধ্যে। এই জন‌্যই উনি আজকেও এই জায়গায়, কী অ‌্যাক্টিভ, আর সুন্দর! হেঁটে গেলে সেই ‘অরা’ অনুভব করা যায়।

‘পুরাতন’ ছবির অন‌্যতম ফোকাস মা-মেয়ের সম্পর্ক, আপনিও কয়েকমাস আগে মাকে হারিয়েছেন…
– ফলে এই ছবিটা আরও প্রাসঙ্গিক, আরও প্রিয় হয়ে গেছে আমার কাছে। মা জানতেন, যে ছবিটা আমি শুরু করেছি। শর্মিলা ঠাকুর আমার মা-বাবা দুজনেরই খুব প্রিয় অভিনেত্রী, মা ফোনে কথা বলেছিল ওঁর সঙ্গে, দেখা হয়নি তখন। মা এই ছবিটা দেখে গেলে খুব খুশি হত। দুর্ভাগ‌্য আমার। মা যখন হাসপাতালে, উনি বলতেন, ‘তুমি মায়ের সঙ্গে কথা বলবে, তোমার মা শুনতে পাচ্ছেন।’ এই ছবিতে মা-মেয়ের সম্পর্কটা আমার মনে হয় মাতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ‌্য। ছবিটা আমি মাকেও উৎসর্গ করব।

ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তর সঙ্গে আপনার অনেকদিনের যোগাযোগ। এই ছবিতে আপনারা স্বামী-স্ত্রীর রোলে।
– ইন্দ্রনীলের সঙ্গে আমার খুব সুন্দর একটা কমফোর্ট জোন আছে। অনেক কাজ আমরা একসঙ্গে করেছি। এটা খুব স্পেশাল আমাদের দুজনের জন‌্যই। কারণ, শর্মিলা ঠাকুর, সুমন ঘোষ, একটা লেগাসি, তার ওপর অলকানন্দা দাশগুপ্ত মিউজিক করেছেন, রবি আইগিরির ক‌্যামেরা, মেঘালয় কেভস, রুট ব্রিজ আরও নানা সুন্দর লোকেশনে শুটিং হয়েছে। আমার আর ইন্দ্রনীলের খুব পরিণত একটা সম্পর্ক দেখা যাবে ছবিতে। আমরা আগেও কাপলের চরিত্র অভিনয় করলেও এই রসায়ন একদম আলাদা। সুমন খুব সূক্ষ্ম সব জিনিস বুনে দিয়েছে আমাদের রসায়নে।

‘পুরাতন’ নামের নেপথ্যে কী?
– ‘যাহা পুরাতন তাহাই সনাতন’ কথাটা বলতে পারি। পুরাতনকে নিয়েই আমাদের জীবনের আসা-যাওয়া। পুরাতনকে উপেক্ষা করতে পারি না আমরা জীবনে। তাই নতুনকে অনুভব করতে পারি। পুরনো বন্ধু, বই, সম্পর্ক, স্মৃতি, সিনেমা আমাকে খুব নাড়া দেয় (হাসি)।

ইন্ডাস্ট্রিতে তিন দশক পার করে ফেলেছেন। এত দীর্ঘদিন ধরে স্টারডম ধরে রাখলেন কীভাবে? পুরাতন হয়েও নতুন হয়ে রইলেন কীভাবে?
– ওই যেটা বললাম। এটা চক্রের মতো। আমি কখনও মনে করি না পুরনো হয়ে গেছি। এই জার্নির মধ্যে আছি। প্রত্যেকটা দিন প্রাসঙ্গিক লাগে। হেরে যাওয়াতে ভয় পাই না। দুঃখ লাগে কিন্তু নতুন কিছু করার ইচ্ছে হারাই না। তবে স্টার তো আমাকে মানুষ বানিয়েছে। নিজের সৃষ্টির মধ্যে বেঁচে থাকতে চাই, প্রাসঙ্গিক থাকতে চাই।

এখন সোশাল মিডিয়াকে ইগনোর করা শক্ত। ইদানীং নানা কারণে ট্রোলিং সহ‌্য করতে হয়েছে। সেটা জীবনে কতটা প্রভাব ফেলে?
– প্রভাব ফেলে। কিন্তু সব সময় যে প্রভাবিত হই, তা নয়। প্রভাবিত হলে কোনও কাজ ঠান্ডা মাথায় করতে পারব না। খারাপ লাগলেও, নিজেকে ওটা থেকে আলাদা রাখার চেষ্টা করি। কারণ, আমি জানি, ট্রোলিংয়ের থেকে আমার কাজটা বড়। কার সঙ্গে যুদ্ধ করব সেটা আমার ব্রত নয়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
News Hub