সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাণিজ্যিক বনাম ইন্ডি সিনেমার চর্চা নতুন নয়। এই দুই ছবির অভিনেতা কিংবা নায়কদের নিয়েও আলোচনা-সমালোচনা বহাল। বর্তমানে ওটিটির যুগে সেই চর্চা আরও বেড়েছে বই কমেনি। তবে চিরকালই বাণিজ্যিক সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের দেখে নাক সিঁটকানোর বিষয়টা রয়ে গিয়েছে তথাকথিত ইন্ডি ছবি নির্মাতাদের! বাংলা সিনে ইন্ডাস্ট্রিতেও তার অন্যথা হয়নি। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, চিরঞ্জিত চক্রবর্তীদের সংলাপ বলার ধরণ নিয়ে যেমন ঠাট্টা-মশকরা হয়েছে, তেমনি দেবের অভিনয়-বাচনভঙ্গী নিয়েও ব্যঙ্গ কম হয়নি। প্রশ্ন উঠেছিল, জিৎকে নিয়েও। উপরন্তু অভিনয়ের বিবর্তন। তাতে কি কোথাও ক্যামেরার সামনে শিল্পীদের নিজস্বতা হারিয়ে যাচ্ছে? সেই প্রসঙ্গেই এবার খোলামেলাভাবে কলম ধরলেন ঋদ্ধি সেন।
জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতার কথায়, “বাংলা বাণিজ্যিক সিনেমা যতই সেকেলে, পুরোন আর বোকা বোকা হোক না কেন সেটা কলকাতার আঁতেল ইন্ডি সিনেমার থেকে ঢের বেশি উৎকৃষ্ট। বাংলার বেশিরভাগ ইন্ডি সিনেমা বা সিনেমা নির্মাণের জন্য পয়সা পাচ্ছি না বলে কাঁদুনি গাওয়া কিছু পরিচালক সিনেমার নামে দিনের পর দিন যে আঁতলামির ভান করে চলেছেন সেটা অসহ্য। তারা এই মুহূর্তে সারা বিশ্বের ইন্ডেপেন্ডেট সিনেমা দেখেন না। বা দেখেও না দেখার ভান করেন। তারা এখনও মৃণাল সেন বা শ্যাম বেনেগাল বা আদুর গোপাল কৃষ্ণান বা তারকোভস্কি বা গোদার বা বার্গম্যানের খুব বাজে প্রিন্টের জেরক্স করে চলেছেন। না আছে কোনও নতুনত্ব না আছে ভাল করে অনুকরণ করার বা টোকার দক্ষতা। আছে শুধু নিজেদের জীবনের প্যানপ্যানে ফ্রাসট্রেশন আর আছে ‘আসলে আমিই সব জানি’র ভাব। আর শুরু হয়েছে এই কিছু বাংলা ইন্ডি ছবির ইন্ডি অভিনয়ের শৈলী। এতদিন ছিল ‘ভাল অভিনয়’ আর ‘খারাপ’, এখন এই ছবিগুলোতে অভিনয় নতুন গাইডলাইন হচ্ছে ‘নো অ্যাক্টিং’।”
কারও নাম করেই বিঁধে ঋদ্ধির মন্তব্য, “এই পরিচালকদের ছবিতে সব চরিত্রদের বাচন ভঙ্গি, কণ্ঠস্বর একরকম। কেউ ঠোঁট খুলে কথা বলে না। কারুর ভ্রু নড়ে না। কারুর চোখে কোনও ভাষা নেই। কপালে নেই কোনো ভাঁজ। গালগুলো অকেজো। সবাই নো অ্যাক্টিং, থুড়ি স্বাভাবিক অভিনয় করছেন। অভিনেতা চরম আনন্দের মুহূর্ত থেকে বুক ভাঙা দুঃখ থেকে আদিম পাশবিক রাগ, সবই ব্যক্ত করেন ন্যাচরালি। কারণ পরিচালকদের নিজেদের অভিনয় নিয়ে কোনো ধারণা না থাকায় কঠোর নির্দেশ, “আমার ছবিতে কেউ লাউড অভিনয় করবেন না”। আরে অভিনেতা বা মানুষ কি স্পিকার নাকি যে একবার ভলিউম লাউড হবে একবার লো হবে?”
এখানেই অবশ্য থামেননি ঋদ্ধি সেন। চরিত্রর সঙ্গে দর্শকরা কেন একাত্ম হতে পারেন না এইসব ছবির ক্ষেত্রে, সেই কথাও উল্লেখ করলেন তিনি। অভিনেতার মত, “এরা যে মানুষদের দেখে চরিত্র গঠন করেন এবং দাবি করেন যে তাঁরা বাস্তববাদী সিনেমার প্রতিনিধি, বাস্তবের সমস্ত চিত্র তারা হুবহু তুলে ধরতে চায় তাদের সিনেমায় , তাহলে সেই বাস্তব সমাজে মানুষ হতাশা, রাগ, দুঃখ, খুশি পরিমিতি বোধ মেনে প্রকাশ করে? মানুষের আবেগ প্রকাশের কোনও নিয়মাবলি আছে? আছে কোনও ঠিক ভুল? তাহলে অভিনেতার আবেগ প্রকাশের ক্ষেত্রে দ্বায়িত্ব একটাই, চরিত্রের সামাজিক , রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত পরিসরের অবস্থানের প্রতি সততা। নিশ্চয় ক্যামেরার সামনে বা মঞ্চে অভিনয় করার কয়েকটি নিয়ম আছে। কিন্তু সেই নিয়ম যদি অভিনেতার সততায় ব্যাঘাত ঘটায় এবং তার টেকনিকাল সচেতনতা যদি তাকে চরিত্রের কাছে যাওয়ার পথে বিরোধ সৃষ্টি করে তাহলে বিপদ আছে। পরিচালকের দেওয়া আন্ডার অ্যাক্টিং করার নির্দেশ যদি সিনেমার গল্পের পাঁচু থেকে পঞ্চানন ভট্টাচার্য সবাই শঙ্খ ঘোষের মতো করে কথা বলতে শুরু করেন তাহলে মুশকিল আছে। কারণ সেটা সিনেমার নিয়ম না, সেটা ভণ্ডামি।”
এরপরই টলিউডের দুই সুপারস্টার নায়ক দেব-জিতের প্রশংসা করে ঋদ্ধি বলেন, “ভাল-খারাপ অভিনয় বলেও কিছু হয় না। এটা একজন অভিনেতা বা পরিচালকের ব্যর্থতা যদি তিনি দর্শকের স্পন্দন বুঝে চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে না পারেন। এরা আবার দেব, জিৎকে নিয়ে খিল্লি করে। তারা কীরকম অভিনয় করেন, সেটা নিয়ে দ্বিমত বা সমালোচনা অবশ্যই থাকবে, কিন্তু এদের অভিনয়ের মধ্যে এই নতুন তৈরী হওয়া ‘no acting’ ব্রিগেডের ভন্ডামিটা নেই।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.