সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে মহাবিপাকে পড়েছিলেন মধুমিতা সরকার (Madhumita Sarcar)! অভিনেত্রীর পোস্টের ক্যাপশনে ‘ভারতবর্শ’ এবং ‘দিবেস’ এই দুটি বানান ভুল দেখেই রে-রে করে ওঠে নেটপাড়ার একাংশ। সেই আবহেই মধুমিতার ‘শিক্ষা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে মারাত্মক কটাক্ষ করেছিলেন ঋদ্ধি সেন। যদিও সেই পোস্ট কিছুক্ষণের মধ্যেই মুছে ফেলেছিলেন অভিনেতা, তবুও সোশাল মিডিয়ায় প্রকাশ্যে একজন অভিনেত্রীকে এভাবে কাঠগড়ায় তোলার জন্য খানিকটা কটাক্ষের মুখে পড়তে হয়েছে ঋদ্ধিকেও (Riddhi Sen)। ঘটনার দিন দুয়েক বাদে এবার প্রকাশ্যেই ক্ষমা চেয়ে নিলেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা।
দীর্ঘ পোস্টের কোথাও মধুমিতা সরকারের নামোল্লেখ না করলেও ঋদ্ধি সেন যে অনুতপ্ত, সেটা তাঁর দীর্ঘ পোস্টের ছত্রে ছত্রে বোঝা গেল। অভিনেতা লিখেছেন, “বিশ্বাস করুন, এই মুহূর্তে মানসিক পরিস্থিতি কারোর ভালও নেই, তাই সেদিন স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করার কিছু প্রকাশভঙ্গি ক্ষনিকের জন্য এই মানসিক অবস্থানের ওপর সাংঘাতিক প্রভাব ফেলেছিল, যা এই মুহূর্তে আমাদের রাজ্যে অধিকাংশ মানুষেরই মানসিক অবস্থান। তবে আমাদের মানসিক অবসাদের দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে। আমার প্রকাশের ভাষা ছিল অসংযত। আমাদের মানব অস্তিত্বের মূলে রয়েছে আবেগ । সেই আবেগই আমাদের নিয়ে যায় মানবতার শীর্ষে এবং সেই এবং সেই একই কৃত্যে হয়ে দাঁড়ায় আমাদের পতনের কারণ। আমার প্রকাশের ভাষা এবং পদ্ধতি ছিল ভুল। আবেগতাড়িত, মন খারাপ এবং হতাশার প্রকাশ ছিল আমার বক্তব্যে। উদ্দেশ্য ছিল সেটাই। ছিল না কোনও ব্যক্তিগত কারণ বা নিজের ভাবনাচিন্তা বা মতবাদ চাপিয়ে দেওয়া বা জাহির করার ইচ্ছা। তবুও, প্রকাশভঙ্গির দ্বায়িত্বজ্ঞানহীনতার দায় সম্পূর্ণ আমার। আমার কথায় যারা যারা আঘাত পেয়েছেন, সকলের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। এই মুহূর্তে আমি চাই না নতুন করে কোনও ঘৃণার উদ্রেক ঘটুক। আমার তরফ থেকে এই ঘটনা সংক্রান্ত আমার যা বলার আমি বললাম। আশা করি আপনারা বুঝবেন। আমার কথায় আঘাত করার উদ্দেশ্যে আমার ছিল না, তবুও যারা যারা আঘাত পেয়েছেন, তাদের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমাদের ব্যক্তিগত ভাবনা চিন্তার থেকে এখন অনেক জরুরী এই হত্যার সুবিচার চাওয়া।”
এরপরই ঋদ্ধি সেনের সংযোজন, “এই বছর ,অন্তত পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে স্বাধীনতা দিবসের দিনটা ছিল না উদযাপনের, সেই দিনটা ফেলে আসা বিগত সপ্তাহের সব কটা দিনের মতোই ছিলো সাংঘাতিক হতাশাজনক এবং লজ্জার। সাম্প্রতিক দেশ বা রাজ্যের অবস্থা নিয়ে গর্বিত হওয়া বা উদযাপন করার বদলে নাগরিক হিসেবে নিজেদের অপারগতা বা নাগরিক হিসেবে দায়িত্বের প্রতি নিজেদেরই নিজেদের প্রশ্ন করার দিন, আমরা কোন অর্থে স্বাধীন? এতো বছর পরেও এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটে চলেছে আমাদের দেশে, আমাদের রাজ্যে, অন্যের হাতে মৃত্যুর থেকে স্বাভাবিক আর কিছুই নেই, এই তাহলে আমাদের স্বাধীনতা? যে সমাজে হাসপাতালের ভিতরে বা বাড়ির ফেরার পথে আমাদেরই সহ-নাগরিকের রক্ত পরে থাকে, সেই দিন সত্যি পতাকা উত্তোলন করে দেশ বা রাজ্য নিয়ে কতটা গর্বিত হতে পারি আমরা? তবে মানুষ কি করবে সেটা ঠিক করে দেওয়ার আমরা বা আমি কেউ নই,ব্যক্তি স্বাধীনতা ,বাক স্বাধীনতায় সকলের সমান। আমার লেখার মূল বক্তব্য ছিল না শুধু মাত্র কোনও টাইপিং মিস্টেক। ছিল না কোনও ব্যক্তি আক্রমণের অভিসন্ধি বা প্রকাশভঙ্গি, মেধা, ব্যক্তি ইচ্ছের ওপর হস্তক্ষেপ করা। সেই অধিকার আমার কেন, কারওর নেই, থাকতে পারে না। সেদিনের বক্তব্য এই পরিস্থিতির মধ্যে থেকে এক সাংঘাতিক হতাশা, রাগ আর অসহায়ত্বের প্রকাশ।”
বুধবার রাতে যাদবপুরের রাত দখলের মিছিলে শামিল হয়েছিলেন মধুমিতা। তবে বৃহস্পতিবার সকালে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে তাঁর ফটোশুট দেখে ভ্রু বাঁকাতে ছাড়েনি নেটিজেনদের একাংশ। তাঁদের কথায়, আর জি কর হাসপাতালে তরুণী ডাক্তারের ধর্ষণ, খুন কাণ্ডে যেখানে গোটা রাজ্য উত্তাল। বাংলার আন্দোলন ছড়িয়েছে বাইরেও। যেখানে মহিলাদের নিরাপত্তা, সুরক্ষা না থাকার কারণে ৭৮তম স্বাধীনতা দিবসকে ‘কালো’ দিন বলে দাবি করেছেন অনেকে, সেই পরিস্থিতিতে নায়িকার এমন ফটোশুট! সেই আবহেই আবার মোক্ষম ভুল বানান নিয়ে ব্যকরণ বোঝাতে বসে নেটপাড়ার একাংশ। পালটা জবাব দিয়ে মধুমিতা বলেছিলেন, “আমি স্তম্ভিত! একটা পোস্টের ক্যাপশনে দুটো বানান টাইপিংয়ের ভুল দেখেই আমাকে কী করে চিনে গেল? ঋদ্ধি, আমি আপনার শিক্ষা নিয়ে কোনও প্রশ্ন তুলব না। কারণ আমি আপনার মা-বাবাকে ভীষণ শ্রদ্ধা করি। আর রেশমি আন্টিকে ভীষণ ভালোবাসি। ‘বোঝে না সে বোঝে না’ ধারাবাহিকে উনি আমার মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। আপনার শিক্ষা নিয়ে কথা বললে আপনার পারিবারিক শিক্ষার উপর প্রশ্ন ওঠে। আমি যত দূর গিয়েছেন, আমি ততটাও যেতে চাই না।” এবার ক্ষমা চেয়ে নিলেন ঋদ্ধি সেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.