Advertisement
Advertisement
Hobu Chandra Raja Gobu Chandra Mantri

রূপকথার মোড়কে বর্তমান সময়ের প্রতিফলন ‘হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী’

বড়দের জন্যই প্রায় সবটাই লেখা।

Review of Bengali movie Hobu Chandra Raja Gobu Chandra Mantri | Sangbad Pratidin
Published by: Suparna Majumder
  • Posted:October 10, 2021 8:09 pm
  • Updated:October 10, 2021 8:32 pm  

নির্মল ধর: ছবির প্রযোজক দেব (Dev) এবং পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায় কাজ শুরুর শুরুতেই বলেছিলেন, সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ ও ‘গুগাবাবা’ তাঁদের অনুপ্রেরণা। দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের দু’টি গল্পের মিশেল ঘটিয়ে ‘হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী’র (Hobu Chandra Raja Gobu Chandra Mantri) চিত্রনাট্য লিখেছেন অনিকেত। অন্ত্যমিল দিয়ে সংলাপ লেখার কাজটি বেশ রসাল। আজকের সময়ের প্রতিফলন দর্শক খুব সহজেই বুঝতে পারবেন, এবং মজাও পাবেন।

Hobu Chandra Raja Gobu Chandra Mantri

Advertisement

অতিমারী পরিস্থিতিতে শিশুদের সিনেমা হলে যাওয়া ঠিক নয়। সেই কারণেই হয়তো টেলিভিশনে কিন্তু যে কচিকাঁচাদের ভেবে এই ছবি, তারা কতটুকু বুঝবে বা মজা আদৌ পাবে কিনা বলা মুশকিল। সত্যজিত রায়ের (Satyajit Ray) চিত্রনাট্যে যে স্তরগুলো ছিল এখানে সেটি প্রায় নেইই। আসলে চিন্তা, ভাবনা প্রকাশের সঠিক সিনেমাটিক প্রতিফলন চিত্রনাট্যে নেই। প্রায় সবটাই বড়দের জন্যই যেন লেখা এবং ছবি তোলার ভঙ্গিও।

গল্প নিয়ে বলার কিছু নেই, বহুপঠিত, বহুল চর্চিত। ধাপ্পাবাজ, ফেরেববাজ মন্ত্রী গবুচন্দ্রের পাল্লায় পড়ে বোম্বাগড়ের রাজা হবুচন্দ্রের সুখের রাজ্যে প্রজাদের যে হয়রানি শুরু হয়, সেটাকেই পরিচালক রূপকের আকারে উপস্থিত করেছেন। রূপকথার আদলে ‘হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী’র কাহিনি বর্তমানকে ধরতে চায়। যেমনটি আমরা তাঁর আগের ছবি ‘শংকর মুদি’তেও দেখেছিলাম।

[আরও পড়ুন: Golondaaj Review: ফুটবল ও দেশপ্রেমের যুগলবন্দি ‘গোলন্দাজ’, মাইলফলক দেবের]

গবুচন্দ্রের কূট কার্যকলাপ এখনকার আমলা এবং মন্ত্রীদের কথাই মনে করিয়ে দেয়। শুরুটা বেশ জমাটি ভঙ্গিতেই, বৃদ্ধ মন্ত্রীকে (শুভাশিস মুখোপাধ্যায়) সরিয়ে গবুর (খরাজ মুখোপাধ্যায়) কূটিল চালে মন্ত্রীর চেয়ারে বসা পর্যন্ত তরতরিয়ে এগিয়েছে ছবি। গবুর ‘ঘড়িদার’ হওয়া, ইঁদুর তাড়ানো, সমুদ্রের ঢেউ গোনা পর্বগুলো ছোটদেরও মন্দ লাগবে না। কিন্তু বৃদ্ধ মন্ত্রী বিদায় মুহূর্তে যে কথা বিড়বিড়িয়ে বলেছে, “… রাজ্যে সুখ থাকবে তো! কোকিল গাইবে তো! বাচ্চাগুলো খেলার মাঠ পাবে তো! মানুষ মানুষকে বিশ্বাস করবে তো…”, সে কথাই শেষ পর্যন্ত ফলে গেল।

HCRGCM

মন্ত্রীর বিদায় মুহূর্তটি সুন্দর তুলেছেন অনিকেত। রাজার পালকি ছেড়ে তিনি তখন পদাতিক, পেছনে চলেছে খালি পালকি। গবু মন্ত্রী হওয়ার কিছু পর থেকে চিত্রনাট্য যেন একই জায়গায় আটকে যায়। বিশেষ করে বিশু চোর সিঁধ কাটতে গিয়ে দেয়াল চাপা পড়ে মারা গেলে সেই দায় কার ঘাড়ে চাপাবে গবু, সেটা নিয়ে দীর্ঘ টানাপোড়েন কচি দর্শকদের তেমন ভাল লাগতে নাও পারে।

যদিও উপস্থাপনার কৌশলে ও প্রকরণে, আবহের ব্যবহারে কৌতুক রস বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়েছে (এখানে অন্তত দু’টি জায়গায় সত্যজিতের আবহ সঙ্গীতের আভাস মেলে)। অবশ্য এক্কেবারে শেষে গবু জানিয়ে গিয়েছে “আমি ফিরে আসব।” অর্থাৎ সিক্যুয়েল হওয়ার ইঙ্গিত। হ্যাঁ, এটাতো সত্যিই গবুচন্দ্রদের যাওয়া-আসা চিরকালই চলছে, চলবেও। পরিচালক অনিকেতকে ধন্যবাদ দিতে হয় সিন্ডিকেট রাজ, কমিশন খাওয়া, অর্থনৈতিক স্ক্যাম জাতীয় ঘটনাগুলো সুন্দরভাবে জড়িয়ে দিয়েছেন চিত্রনাট্যে। হয়তো কিছুটা উচ্চকিতভাবেই।

ছবিতে গান আছে ঠিকই, কিন্তু ছোটদের কান বা মনে লাগার মতো কোনওটাই নয়। একমাত্র বোম্বাগড়ের জাতীয় সংগীত গায়নের মাধুর্য কানে ভাল লাগে কিছুটা। ছবির সেট পরিকল্পনা, কম্পিউটার গ্রাফিক্সের কাজ ভাল নয়, তবে সহনীয়। আর অভিনয়! বিশেষ করে দুই মুখুজ্জ্যে খরাজ ও শুভাশিস জমিয়ে রেখেছেন। খরাজ তো পুরো ছবি জুড়েই নিজের ছন্দে কাজ করেছেন। হবুরাজা হয়েছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, তিনিও একেবারে নিজস্ব সিরিওকমিক স্টাইলে উপস্থিত। রানি কুসুমকুমারীর চরিত্রে অর্পিতা অন্ত্যমিল সংলাপে কোনও হোঁচট খাননি, বেশ সাবলীল। গুরুর চরিত্রে বরুণ চন্দকে তাঁর নিজস্ব ব্যারিটোন কণ্ঠস্বরে যেন পেলাম না। 

  • ছবি – হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী
  • পরিচালনায় – অনিকেত চট্টোপাধ্য়ায়
  • অভিনয়ে – শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়, খরাজ মুখোপাধ্যায়, শুভাশিস মুখোপাধ্যায়

[আরও পড়ুন: F.I.R Movie Review: এবার ‘সিংহম’ অবতারে অঙ্কুশ, কেমন হল এফআইআর?]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement