Advertisement
Advertisement
Sandhya Mukherjee

সুরের মৃত্যু হয় না, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গানের ‘ইন্দ্রধনু’ চিরকাল থেকে যাবে বাঙালির সঙ্গে

প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এ এক অমোঘ আবেদন।

Remembering legendary singer Sandya Mukherjee। Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:February 15, 2022 7:58 pm
  • Updated:February 15, 2022 7:58 pm  

বিশ্বদীপ দে: ‘… কোন সে স্বপ্নলোকে গেলে/ এই গান এই সুর মেলে/ এই গান শুনে পাখি মোর পানে চায়/ আমি জানি না কেন সে সুর ভুলে যায়।’ এই গান তিনি নিজেই গেয়েছিলেন। অনুপম ঘটকের সুরে গাওয়া গানটির কথাগুলি কেমন যেন মিলে যায় গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের (Sandya Mukherjee) স্বর্ণালী কণ্ঠস্বরের সঙ্গেও। নতুন বছরের শুরুতেই শোকস্তব্ধ বাঙালি। এই তো কয়েক দিন আগেই চলে গিয়েছেন নারায়ণ দেবনাথ। এমন সব সম্পদ তিনি উপহার দিয়ে গিয়েছেন যা তিনি না থাকলে বাঙালি পেত না। ঠিক তেমনই সন্ধ্যা। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বহমান এক সুরেলা মোহময় আবেশের স্রষ্টা তিনি। সেই আবেশ বাঙালির বড় নিজের, তার আত্মপরিচয়ের গহীনে লুকিয়ে থাকা এমন এক সম্পদ যা একান্ত ভাবেই সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের অবদান। এমন একজন মানুষের মৃত্যু তাই একসঙ্গে অনেক কিছুকেই যেন নাড়া দিয়ে যায়। একধাক্কায় স্মৃতির ঝাঁপিতে এমন দোলা দিয়ে যায়, যে অভিঘাতকে সামলানো সহজ নয়।

গত শতাব্দীর পাঁচের দশকে মুক্তি পেয়েছিল একটি ছবি ‘অগ্নিপরীক্ষা’। যে ছবিতে নায়ক-নায়িকার নাম উত্তম-সুচিত্রা। চিরকালীন এই জুটির এটাই প্রথম ছবি নয়। কিন্তু কার্যত এই ছবি থেকেই তাঁরা উত্তম-সুচিত্রা হয়ে ওঠেন। আর সেই ছবিতে সুচিত্রার নেপথ্য কণ্ঠে শোনা গেল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠস্বর। ‘অনুরোধের আসরে’ ফিরে ফিরে বেজে চলল ‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু’, ‘কে তুমি আমারে ডাকো’র মতো গান। ক্রমেই মহানায়িকা হয়ে উঠলেন সুচিত্রা। আর তাঁর কণ্ঠের নেপথ্যে ভেসে রইল সন্ধ্যার কণ্ঠস্বর। বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগের সূচনা থেকেই এর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে গেলেন তিনি।

Advertisement

[আরও পড়ুন: Sandhya Mukherjee: প্রয়াত গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়]

 

তারপর কেটে গিয়েছে কয়েক প্রজন্ম। সেদিনের বাঙালি জীবন ইতিমধ্যেই ডাইনোসরের বিচরণের মতোই প্রাগৈতিহাসিক হয়ে গিয়েছে যেন। তবু… কিছু কিছু টাইম মেশিন আমাদের চৌহদ্দিতে আজও রয়ে গিয়েছে। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গান তেমনই এক অমোঘ সময়গাড়ি। যা নিমেষে কালের সীমানা পেরিয়ে আমাদের পৌঁছে দিতে থাকে এমন এক সময়ে যা হারিয়ে গিয়েছে কবেই। টিভি বস্তুটা তখনও বাঙালির কাছে প্রায় কল্পবিজ্ঞান। সেটা রেডিওর যুগ। ঢাউস রেডিওয় গমগম করে বেজে উঠত ‘অনুরোধের আসর’। যার বাড়িতে রেডিও নেই সেও সেই সময় বাড়িটির নিচের রাস্তায় ঘুরে ঘুরে সেই গান শুনত। ছিল জলসা। তেমন সব অনুষ্ঠান আজও হয়তো হয়। কিন্তু সেই যুগে তার যে আবেদন তা অবিশ্বাস্য। যাঁরা প্রবেশাধিকার পেতেন না, তাঁদের জন্য রাস্তায় টাঙানো হত সামিয়ানা। লাগানো হত অতিরিক্ত মাইক। সেই মাইকে একে একে ভেসে আসত হেমন্ত-মান্না-সন্ধ্যা-শ্যামল-মানবেন্দ্রর কণ্ঠ। নাই বা দেখা গেল, সেই অদৃশ্য স্বরই তখন দখল নিত রাজপথের।

‘আধুনিক গান’ গেয়ে খ্যাতি অর্জন করলেও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় দীর্ঘকাল উচ্চাঙ্গ সংগীত শিক্ষা করেছিলেন। ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খাঁর মতো কিংবদন্তি ‘গুরু’র তালিমের সুফল পরবর্তী সময়ে পেয়েছেন শ্রোতারা। প্লেব্যাকের সময়ও সেই উচ্চাঙ্গ সংগীতের পারদর্শিতা বারবার ফুটে উঠেছে। সন্ধ্যার কণ্ঠস্বরের স্বাতন্ত্রও তাঁকে আলাদা করে চিনিয়ে দিয়েছে শ্রোতাদের। সেই পরিচয় কখনওই ফিকে হওয়ার নয়।

একে চলে গিয়েছেন সেই যুগের প্রতিনিধিরা। কণ্ঠশিল্পী হোন বা অভিনেতা-অভিনেত্রী কিংবা গীতিকার, সুরকার, পরিচালক- জাগতিক ভাবে সকলেই প্রায় বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু তিনি ছিলেন। তবে একেবারেই অন্তরালে। বাঙালি জনমানসে সরাসরি কোনও উপস্থিতি তাঁর ছিল না। কিন্তু প্রয়াণের ঠিক আগেই পদ্ম সম্মান ফেরানোকে ঘিরে নতুন করে তিনি ফিরে এসেছিলেন নিত্যদিনের আলোচনায়। সেই আলোচনার রেশ কাটতে না কাটতেই চলে গেলেন শিল্পী। কিন্তু একথা তো সত্যিই যে জাগতিক মৃত্যু অনতিক্রম্যই। তবু শিল্পীর সৃষ্টি অমোঘ। যদি তা চিরকালীন হয়ে গিয়ে থাকে।

[আরও পড়ুন: ফিরছে বিভূতিভূষণের অপু ও দুর্গা, মুক্তি পেল ‘আমি ও অপু’র টিজার]

আজ আর গান শুনতে জলসার বাইরের ফুটপাথে বসে থাকতে হয় না। হাতের মুঠোয় থাকা অ্যাপে ইউটিউব বা অন্য যে কোনও অ্যাপে আঙুল ছোঁয়ালেই বেজে ওঠে গান। সেই প্লে লিস্টে সন্ধ্যা যেমন ছিলেন, তেমনই থাকবেন। হয়তো কেউ কেউ তাঁকে সামনাসামনি শুনেছেন। পরের প্রজন্ম জিনের মধ্যেই খুঁজে পেয়েছে নস্ট্যালজিয়ার মুগ্ধতা। তারপর ক্রমে মজে গিয়েছে সুরের আবেদনে। সেই আবেদনের মৃত্যু হয় না। মনকেমনের হাওয়া কিংবা ছোটবেলার স্মৃতির মতোই অমোঘ সুরও হারায় না। সময়ের নানা প্রান্তে থেকেই থেকেই ঝিলিক দিয়ে ওঠে।

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement