সোমনাথ লাহা: সমাজজীবনে চিত্ররূপের ‘প্রতিফলন’ও বটে এই গল্প! প্রযুক্তি ও আধুনিকতার ছোঁয়া সমাজজীবনে যতই পড়ুক না কেন আজও সমাজের সর্বত্র তার প্রতিরূপ সেভাবে পরিলক্ষিত হয় না। সমাজের একাংশের মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে আজও তাই অন্ধকারাচ্ছন্নতা ও পুরনো ধারণা বদ্ধমূল হয়ে বসে রয়েছে। কাজের ক্ষেত্রেও সেখানে রয়েছে শ্রেণিগত প্রভেদ। নতুন ধ্যানধারণা ও বিষয়ভাবনা তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এহেন বিষয়ভাবনাকে কেন্দ্র করেই পরিচালক অর্পণ বসাকের ছবি ‘প্রতিফলন’। এক অর্থে যেখানে এই সমাজজীবনের প্রতিফলিত চালচিত্র বুনেছেন পরিচালক। ছবির কাহিনিতে রয়েছে স্বপ্নপূরণের গাথাচিত্রের পাশাপাশি এক পরিণত প্রেমের চিত্ররূপও।
প্রসঙ্গত, এটিই পরিচালকের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবি। ইতিপূর্বে বেশ কয়েকটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি তথা শর্টফিল্ম তৈরি করেছেন এই তরুণ পরিচালক। সুপ্রতিম সাহা প্রোডাকশনসের ব্যানারে নির্মিত এই ছবির মুখ্য চরিত্রে রয়েছেন সুপ্রতিম সাহা ও নবাগতা সায়ন্তনী দেব। ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি এই ছবির প্রযোজনার দায়িত্বভার সামলাচ্ছেন সুপ্রতিম। এর আগে দর্শকরা সুপ্রতিমের অভিনয় দেখেছেন কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘গুড নাইট সিটি’ ও জি বাংলা সিনেমা অরিজিন্যালসের ছবি ‘গুপি গাএন’-এ। অন্যদিকে মডেলিংয়ের দুনিয়া থেকে এই ছবির হাত ধরে সিনে আঙিনায় পা রাখছেন সায়ন্তনী।
[আরও পড়ুন : বড়পর্দায় জুটি বাঁধলেন সৌরভ-পায়েল, এইপ্রথম মুখ্য চরিত্রে অভিনেতা ]
ছবির কাহিনি আবর্তিত হয়েছে এমন একটি গ্রামকে কেন্দ্র করে যেখানকার বাসিন্দারা এখনও পুরনো ধ্যানধারণায় বিশ্বাসী। এহেন পিছিয়ে পড়া গ্রামের ১৮ বছর বয়সি ছেলে আর্য (সুপ্রতিম), ছোটবেলা থেকেই সে তার মাকে দেখে আসছে গ্রামের বিয়েতে কনে সাজাতে। এই কাজে মাকে সাহায্য করতে করতে কখন এই কাজটিকে ভালবেসে ফেলে আর্য। সে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে মেকআপ আর্টিস্ট হওয়ার। কিন্তু আর্যর বাবা যিনি একজন কৃষক, তিনি মনে করেন কোনও পুরুষের এইরকম মেয়েলি কাজ করা উচিত নয়। বাবার এহেন আপত্তিতে আর্যর সঙ্গে তার বাবার অশান্তির সৃষ্টি হয়। এমনকী আর্যর এহেন ইচ্ছার কথা গ্রামে জানাজানি হওয়ার পরে গ্রামের লোকেদেরও চক্ষুশূল হয়ে ওঠে সে। গ্রামের লোকজনও তাকে কথা শোনায়। এমতাবস্থায় আর্যর স্বপ্নপূরণের পথে তার পাশে দাঁড়ায় পাশের গ্রামের এক চুড়ি বিক্রেতা মেয়ে রিমি (সায়ন্তনী)। রিমির সাহচর্যে জীবনে উন্মুক্ত বাতাসের তথা অক্সিজেনের ছোঁয়া পায় আর্য। পরস্পরের পরিপূরক হয়ে ওঠে তারা। আর্য কি পারে আদৌ মেকআপ শিল্পী হয়ে উঠতে? আর্য-রিমির সম্পর্কের পরিণতিই বা কী হয়? উত্তর মিলবে ছবির পর্দায়।
নিজের প্রথম ছবি প্রসঙ্গে পরিচালক অর্পণ বসাকের অভিমত, ‘‘প্রতিফলন’ আসলে এই সমাজজীবনের চালচিত্রের আয়না। এটা শুধুমাত্র একটা স্বপ্নপূরণের কাহিনি নয়, এতে রয়েছে একটি পরিণত প্রেমের গল্পও। তবে এই ছবির সমাপ্তিতে কৃতজ্ঞতা স্বীকারের তালিকায় একটা ভয়েস ওভার রয়েছে। যেটি আগে কোনও ছবিতে দেখা যায়নি। সেটা চমকে দেবে দর্শকদের।”
সুপ্রতিমের মতে, “আর্য শুধুমাত্র একটা চরিত্র নয়। এটা প্রতিটি মানুষের ভিতরে থাকা এমন একটা অন্তরাত্মা যার সঙ্গে প্রত্যেকে নিজের মিল খুঁজে পাবেন।” সায়ন্তনীর মন্তব্য, “রিমি শুধুমাত্র একজন সাধারণ গ্রামের মেয়ে নয়। তার মতাদর্শ আর পাঁচজনের থেকে আলাদা। যে সবসময় ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ায়।”
[আরও পড়ুন : এবার মালায়ালি ভাষায় হবে ‘কন্ঠ’র রিমেক, মুক্তির আগেই স্বত্ব কিনলেন পরিচালক]
ছবিতে অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন স্বপ্না দেব, বিপাশা ও অন্য শিল্পীরা। ছবির কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছেন পরিচালক স্বয়ং।সংগীত পরিচালনায় পীযূষ দাস। সিনেমাটোগ্রাফার রাহুল মণ্ডল। ছবির শুটিং হবে মুর্শিদাবাদ ও কলকাতায়। তবে প্রযোজক ও পরিচালকের ইচ্ছা ছবিটি তৈরি হওয়ার পর কিছু ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে পাঠানোর। তারপরে ছবিটিকে প্রেক্ষাগৃহে রিলিজের পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ছবির ফার্স্ট লুক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.