রিংকি দাস ভট্টাচার্য: সন্ত্রাস-উগ্রপন্থী অধ্যুষিত নাগাল্যান্ডের বাসিন্দাদের নির্বাচনের আগে ঠিক কী কী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়? ভোটের আর্থ-সামাজিক প্রভাবই বা কী? কিংবা সুদূর লাক্ষাদ্বীপের জাসারি উপজাতির মানুষ কীভাবে মোকাবিলা করে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের?
বিশাল এই দেশে বিভিন্ন কোণে ছড়িয়ে থাকা এমন আঞ্চলিক সমস্যাগুলিই বন্দি হয়েছে চলচ্চিত্রে। শুধু নাগা বা জাসারি নয়, ভারতবর্ষে লুপ্ত হতে বসা এমন আটটি আঞ্চলিক ভাষার ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের ‘রেয়ার ল্যাঙ্গুয়েজ ইন্ডিয়ান ফিল্ম’ বিভাগে। প্রসঙ্গত, দেশীয় কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে বাঁচাতে সম্প্রতি লুপ্তপ্রায় ভাষাগুলি নিয়ে ছবি তৈরিতে এগিয়ে এসেছেন বহু পরিচালক। তিন বছর ধরে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। “কিন্তু শুধু ছবি তৈরি করলে তো হবে না। চাই প্রদর্শনের মঞ্চ। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দীর্ঘদিন আবেদন জানিয়েও সাড়া মেলেনি। আশাহত হতে শুরু করেছিলাম, ঠিক তখনই সাড়া মেলে কলকাতার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে। মূলত তাঁর উদ্যোগেই আঞ্চলিক ভাষায় ছবি তৈরিতে গতি এসেছে। ছবি প্রদর্শনের আন্তর্জাতিক মঞ্চ মেলায় অজানা নানা ভাষায় ছবি তৈরি হচ্ছে।”-মন্তব্য ‘রেয়ার ল্যাঙ্গুয়েজ ইন্ডিয়ান ফিল্ম’ বিভাগের কিউরেটর শান্তনু গঙ্গোপাধ্যায়ের।
[ পরিণতি পেল প্রেম, প্রকাশ্যে দীপিকা-রণবীরের বিয়ের ভিডিও ]
মঙ্গলবার নন্দনে এক সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত হয়েছিলেন এই বিভাগে মনোনীত ছবির পরিচালক ও কলাকুশলীরা। লুপ্তপ্রায় আঞ্চলিক ভাষার ছবিকে প্রদর্শনের এমন একটা মঞ্চ দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে কুর্নিশ জানান সকলে। পাশাপাশি তুলে ধরেন লুপ্তপ্রায় আঞ্চলিক ভাষার ছবি তৈরির করার নানা সমস্যার কথাও। “এই ধরনের ছবি তৈরিতে কোনও প্রযোজক এগিয়ে আসে না। স্ত্রীকে ছবি তৈরিতে সাহায্য করতে নিজের বাড়ি বন্ধক দিয়েছি। প্রদর্শনের মঞ্চ না পেলে পথে বসতে হত।”-মন্তব্য বানজারা ভাষায় তৈরি ছবি ‘শাকিবাই’-এর প্রযোজক প্রেমালতা এন জোসির। তাঁর কথায়, “বানজারা উপজাতি একসঙ্গে ২৫-৩০জন বাস করে। তাদের ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য কোনও অভিনেতা রাজি হয়নি। সেই কারণে সাধারণ মানুষকে শিখিয়ে পড়িয়ে পাঠ করাতে হয়েছে।” অন্যদিকে নাগা পরিচালক টিয়াকুমুক আয়ার তুলে ধরলেন এই ধরনের ছবি তৈরির নানা সমস্যার কথায়। ‘নানা আ টেইল অফ আস’ ছবির এই পরিচালকের কথায়, “নাগাল্যান্ডে কোনও ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি না থাকায় জুতো-সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সবই নিজেকে করতে হয়েছে।”
চলতি বছর উৎসবে কুর্মি, লাম্বানি, নাগা ও জাসারি-র মতো নতুন চারটি ভাষার ছবি দেখানো হচ্ছে। প্রসঙ্গত, কুর্মি ভাষায় এই প্রথম কোনও ছবি তৈরি হয়েছে। রয়েছে কোডাভা, বানজারা, খাসি ও টুলুও। এর মধ্যে জাসারি উপজাতিদের নিয়ে তৈরি ছবিটি ইতিমধ্যেই স্বর্ণকমল সম্মানে ভূষিত হয়েছে। লাম্বানি ভাষায় তৈরি ছবি ‘ব্রাইড নাভরেলি’-র প্রযোজক এমডি কৌশিকের কথায়, “এই উপজাতির বাসিন্দারা পেশার তাগিদে দীর্ঘদিন ধরেই ভবঘুরে। ফলে এই অঞ্চলের ভাষা হারিয়ে যাচ্ছিল। ভাষাকে বাঁচাতে ছবি তৈরির উদে্যাগ নিয়েছি আমরা।” কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চ এমন লুপ্তপ্রায় আরও ভাষাকে বাঁচিয়ে তুলছে বলে এদিন একমত হয়েছেন উপস্থিত সকলেই।
[ পর্দায় ‘রক্ত রহস্য’ উন্মোচনের পথে প্রাণোচ্ছ্বল কোয়েল ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.