সুব্রত বিশ্বাস: সুশান্ত সিং রাজপুতই তাঁদের কাছে ‘ধোনি’। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের টিকিট পরীক্ষক থেকে ক্রিকেট দুনিয়ার মহারথী এমএস ধোনি। আদপে ক্রিকেটার ধোনি রেলকর্মীদের কাছে অধরা থেকে গিয়েছেন। যাঁকে ধরা গিয়েছে তিনি ‘এমএস ধোনি-দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ ছবিতে ধোনির চরিত্রে অভিনয় করা সুশান্ত। সেই সুশান্ত নেই! এ কথা ভাবতেই পারছেন না খড়্গপুরের রেলকর্মীরা।
বছর পাঁচেক আগে, সেই ছবির শুটিংয়ের সহযোগী ডিআরএমের টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট অরুণকুমার দাসের কথায়, “একেবারে খোলা মনের মানুষ ছিলেন সুশান্ত (Sushant Singh Rajput)। কোনওরকম অহংকার বোধ না থাকা মানুষ বলতে যা বোঝায় তিনি ছিলেন সেরকমই। সদা হাস্য মানুষটা একেবারে মিশে যেতেন সকলের সঙ্গে। গরমের সময় তিনি একদিন হঠাৎ এলেন ডিআরএম অফিস দেখতে। খবর এল তিনি এসেছেন। বিশ্বাস হল না। কারণ, তখন ‘পিকে’, ‘ব্যোমকেশ বক্সী’র মতো ছবিতে অভিনয় করে গ্ল্যামার দুনিয়ার শিখরে তিনি। তবুও গেলাম। দেখি ভিজিটিং রুমে একা বসে। চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আবেগে বলে ফেললাম, আরে আপনি এখানে বসে একা! হেসে উত্তর দিয়েছিলেন, কোনও ব্যাপার নয়।”
খবরটা ছড়িয়ে পড়তেই ডিআরএম অফিসে যেন সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ল। সবার সঙ্গে পরিচয় করলেন। ডিআরএমের চেম্বার, বাংলো, অফিস ঘুরে গেলেন। খাবার খেলেন সবার সঙ্গে বসে। গ্রুপ ফটো তোলা হল।তিন-চার মাস বাদে শুরু হল শুটিং। অত্যন্ত অধ্যাবসায়। তাঁর সঙ্গে টানা ছ’দিন কাটিয়ে ছিলেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রাজেশ সিং। তিনি বলেন, কাজে নিষ্ঠা যে কতখানি তা দেখে শিক্ষা নিতে হয় সুশান্তের থেকে।
এক দৃশ্যে ডিআরএমের চেম্বারে ঢুকে আবার বেরিয়ে আসবেন ধোনি। এই ঢোকা আর বেরিয়ে আসার দৃশ্যটা অন্তত ষাটবার রি-টেক নিয়েছিলেন। নিজের কাজেই যেন সন্তুষ্ট হতে পারছিলেন না। রাত দুটো পর্যন্ত চলেছিল সেই শুটিং পর্ব। একইরকম ভাবে স্টেডিয়ামেও কাটাছেঁড়া হয়েছে অসংখ্য দৃশ্য। ধৈর্য্য, অধ্যাবসায়, প্রচেষ্টার পর সন্তুষ্টির হাসি দেখেছেন রেলকর্মীরা। এই প্রাণবন্ত মানুষটা এভাবে চলে যেতে পারেন, তা যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না তাঁরা।
মহেন্দ্র সিং ধোনি পূর্ব রেলে ক্রিকেটার হিসেবে কাজে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এই রেলে ক্রিকেট টিম না থাকায় তিনি পরে দক্ষিণ-পূর্ব রেলে যোগ দেন। ভারতীয় দলে জায়গা করে নেওয়ার পর তিনি দক্ষিণ-পূর্ব রেলে নিয়ম অনুযায়ী আর পদত্যাগ করেননি। এ কথা শুনে সুশান্ত হেসেই বলেছিলেন, আমি খড়গপুর ছাড়ার সময় সবার থেকে বিদায় নেব। শুভেচ্ছার বিনিময়ে তিনি খড়গপুর ছেড়েছিলেন। কিন্তু ইহলোক ছেড়ে চলে গেলেন কাউকে না জানিয়েই। এখন এটাই আক্ষেপ রেলকর্মীদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.