শম্পালী মৌলিক: প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের (Prosenjit Chatterjee) নতুন ছবি ‘নিরন্তর’ মুক্তি পাচ্ছে টেলিভিশনে। প্রথমবার নায়কের ফিচার ফিল্মের প্রিমিয়ার হবে ছোটপর্দায়। ২৮ জুন রবিবার ‘জি বাংলায়’ ছবির মুক্তি। একই সঙ্গে প্রসেনজিৎ অভিনীত ও প্রযোজিত ছবিটি আসবে ‘জি ফাইভ’-এ।
কিন্তু প্রসেনজিতের ছবির মুক্তি টেলিভিশনে! মোবাইলে ধরতেই তিনি জানালেন, ‘‘নিরন্তর’ যখন বানিয়েছিলাম, আমার পার্সপেকটিভটাই ছিল যে, রিলিজ করলে নন্দনে করতাম। কারণ এটা ফেস্টিভ্যাল ওরিয়েন্টেড ছবি। আমার সঙ্গে জি-এর এমনই চুক্তি ছিল যে, এখন ছবিটা ছাড়তেই হত। আমরা ছবিটা চ্যানেলকে গত ডিসেম্বরে ডেলিভারি করে দিয়েছিলাম। আর একটা জায়গা থেকে আমার মনে হল, ছবিটা জি-বাংলায় দেখানো হবে, তাছাড়া ‘জি ফাইভ’-এ থাকবে, মানুষ দেখুক ফিল্মটা। চ্যানেলের জায়গা থেকে ওরাও ঠিক যে, দে হ্যাভ ইনভেস্টেড মানি। ছবিটা পড়ে আছে। আমি বলতে পারি না যে, কয়েক মাস অপেক্ষা করো। সবচেয়ে বড় কথা হল যে পর্দাটা লোকের ঘরে ঘরে যায়। লকডাউনের সময় দেখলাম পুরনো ছবিগুলো মানুষ কীরকম দ্যাখে! শেষ দু’মাস ধরে অল ইন্ডিয়াতে হায়েস্ট রেটিং দিয়েছে আমারই পুরনো দুটো ছবি। তো মানুষ কিন্তু টেলিভিশন দ্যাখেন। একসময় ঋতুর ‘উৎসব’ দূরদর্শনে দেখানো হয়েছিল, তারপরে সিনেমাটা ওইরকম চেহারা নেয়! আরেকটা ছবির কথা মনে আছে, বাসুদার ‘হঠাৎ বৃষ্টি’। বাংলাদেশে বি-টিভি-তে দেখানো হয়। তারপরে ছবিটা বাংলাদেশে সুপারডুপার হিট হয়। তাও বলছি, সিনেমা হলের ম্যাজিক থাকবেই। সেইজন্যই চ্যানেলকে বলেছি, দেখিয়ে দাও, তবে যখন হল খুলবে স্পেশ্যাল পারমিশন দিতে হবে ছবিটা দেখানোর জন্য। তখন আরও কিছু মানুষ দেখবেন। মনে হয় যারা ভাল ছবি দেখতে চায় তারা ‘নিরন্তর’ দেখবে।”
ছবিটির ট্রেলার প্রকাশ্যে আসতেই সকলের প্রশংসা আদায় করে নিয়েছে। চন্দ্রাশিস রায়ের এটি প্রথম ফিচার ফিল্ম। চন্দ্রাশিস এর আগে পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে ১৭-১৮টি ছবিতে কাজ করেছেন। প্রথমদিকে অ্যাসিস্ট করতেন, তারপরে সহযোগী পরিচালক। ওঁর তৈরি ‘দুগ্গা’ নামক ছোট ছবিটি এর আগে বহু ফেস্টিভ্যালে প্রশংসিত হয়েছে। ‘নিরন্তর’-এর ট্রেলারের কাব্যময়তা দর্শকের নজর টেনেছে ইতিমধ্যেই। জীবন ছোঁয়া এই ছবি। মূলত, দু’জন মানুষের যাত্রাপথ এই ছবির গল্প। একই সঙ্গে প্রকৃতির কথা বলে, যে কীভাবে প্রকৃতি মানুষের জীবন পালটে ফেলতে পারে। যার মধ্যে দিয়ে এখন আমরা যাচ্ছি। গল্পে একজন মধ্য বয়স্ক সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বিপ্লব সেন (প্রসেনজিৎ) পাহাড়ে গিয়েছে একটি রিসর্টের জন্য লোকেশন খুঁজতে। সঙ্গে তার সহকারী ভাস্কর (সত্যম ভট্টাচার্য)। এমন একটা জায়গা যেখানে মোবাইলে নেটওয়ার্ক নেই। দুই প্রজন্মের দু’টি মানুষ। তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। দিনের শেষে সব হারিয়ে যাওয়ার পরেও মানুষকে চলতে হয়, এই ছবির এমনই বার্তা। প্রসেনজিৎ, সত্যম ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন অঙ্কিতা মাঝি, একাবলী খান্না ও প্রণয় নারায়ণ। ক্যামেরায় সৌমিক হালদার। উত্তরবঙ্গের একেবারে ভার্জিন লোকেশনে শুটিং হয়েছে।
প্রসেনজিৎ আরও বলছিলেন, ‘‘এন আইডিয়াজ থেকে যখন ছবি করি, সবসময় নতুন প্রতিভা খুঁজে বেড়াই। চন্দ্রাশিসের একটা শর্টফিল্ম দেখেছিলাম। খুব ট্যালেন্টেড ছেলে। ওকে একটা ছবি ভাবতে বলেছিলাম। ও যে স্ক্রিপ্টটা শোনায় সেটা যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। আমার দারুণ ভাল লেগেছিল। সিনেমার ভাষাটাই আলাদা! ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, প্রস্তুত কিনা। ও বলেছিল, প্রথম ছবি করলে এটা নিয়েই করবে। আর আমাকে নিয়েই করবে।’’
অন্যদিকে নিজের প্রথম ছবি মুক্তির আগে চন্দ্রাশিস রায় বেশ উত্তেজিত। ফোনে বললেন, ‘‘এখন তো আমরা সম্পূর্ণ নতুন একটা পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। যখন ‘নিরন্তর’ বানাচ্ছিলাম, ভেবেছিলাম বড়পর্দায় রিলিজ করবে। এখন পুরোটাই টেলিভিশন এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়িয়েছে। একটা টেনশন আছে যে, হল-এ বসে দেখলে তো লোকে টানা ছবিটা দেখত, আর বাড়িতে বসে দেখলে ‘ক্যাজুয়াল ওয়াচিং’-এর বিষয়টা এসেই যায়। যে কোনও নতুন পদক্ষেপে ঝুঁকি থেকেই যায়। তবে দেখাই যাক না।’’
প্রথম ছবিতে নায়ক ও প্রযোজক হিসেবে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে পাওয়া খুব সহজ নয়। সে প্রসঙ্গে চন্দ্রাশিস বললেন, ‘আমি বুম্বাদার সঙ্গে তিনটে ছবিতে সহযোগী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছি। সেখানে আমাকে আগেই দেখেছিলেন। এবং নিজে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ছবি করতে চাই কিনা। আগে ওঁর সঙ্গে কাজ করার সুবাদে, জানতাম ছবি বানানোর ব্যাপারে কতটা মেটিকিউলাস কতটা পার্টিকুলার উনি। বুম্বাদার জন্যই প্রস্তুতিটা অত ভাল হয়েছিল। উনি বলেই এই ছবিতে অমনভাবে বিশ্বাস করতে পেরেছিলেন’। এখন অপেক্ষা ২৮ জুনের, যেদিন ছবির মুক্তি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.