Advertisement
Advertisement
Prosenjit Chatterjee

‘চরিত্রের রেলাবাজিটা দর্শকের মনে ধরেছে’, ‘দশম অবতার’ নিয়ে অকপট প্রসেনজিৎ

টলিউড ইন্ডাস্ট্রি থেকে সিনেব্যবসা নিয়ে মুখ খুললেন সুপারস্টার।

Prosenjit Chatterjee on Dawshom Awbotaar and Tollywood box office | Sangbad Pratidin
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:November 3, 2023 8:01 pm
  • Updated:November 3, 2023 8:01 pm  

শম্পালী মৌলিক: তাঁর ঘোরতর আপত্তি ‘ইন্ডাস্ট্রি’ সম্বোধনে। বরং তিনি অনেক স্বচ্ছন্দ‌ ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’ হিসাবে। ‘দশম অবতার’-এর হাইভোল্টেজ বক্স অফিস সাফল্যের পরেও এটাই প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ‌্যায়ের স্টেটমেন্ট। “আমি বার বার বলছি, আমি চাই এবারে পুজোয় যে চারটে ছবি এসেছে, সব মিলিয়ে যেন আমরা ‘জওয়ান’-এর পাশে থাকতে পারি পশ্চিমবাংলায়। যেটা আমি পুজো রিলিজের আগেও বলেছিলাম। আমাদের ক্ষেত্রে অবাঙালি দর্শক হয়তো আসবে না, ‘জওয়ান’-এ বাঙালি-অবাঙালি সবাই গিয়েছে। শাহরুখ খান অনেক বড়। কিন্তু তাও চারটে ছবি মিলিয়ে ভালো বক্স অফিস হবে বলেই আমি মনে করি।”

নিজের ছবির সাফল্যের ঝলকানির মাঝেও তিনি শেষপর্যন্ত সকলের ‘বুম্বাদা’। তাঁর বাড়ির বিজয়ার পার্টিতে টলিউডের সব পক্ষ হাজির। পুজোর ছবির সমস্ত লড়াই ভুলে। কী করে পারলেন? “কোথায় আর পারলাম, তাও দুজন আসেনি। না, দেবের সঙ্গে পরদিন কার্নিভালে দেখা হয়েছে। ও সত্যি শুটিংয়ে আটকে গিয়েছিল, নয়তো আসত। আর শিবুকে কতবার বললাম, ‘আয়, আয়’। আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। কারণ একটাই, যখন ওরা প্রথম দিকে ছবি করছে তখন আমি কিন্তু প্রত্যেকটা ছবির সময়ে গিয়ে দাঁড়াতাম। তখন আমি না ছিলাম প্রযোজক, না ওদের ছবির অভিনেতা। পরে ‘প্রাক্তন’ করেছি আর ‘হামি টু’-র গেস্ট অ‌্যাপিয়ারেন্স। আমি সবাইকে বলি, এতদিন সৌমিত্রকাকু ছিলেন আর আমি যতদিন আছি, আয়। শুধু ফিল্ম নয়, যে কোনও জিনিসে প্রতিযোগিতা থাকে। সেটা যদি হয়ে যায়, তারপর তো আমরাই। আমার কাছে ঈশ্বর, মা, দর্শক- এই তিনটে জিনিস ম‌্যাটার করে, তারপর কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না।”

Advertisement

‘দশম অবতার’ রিলিজের আগে খুব টেনশনে ছিলেন। এবার কি একটু স্বস্তি? সেই প্রসঙ্গ তুলতেই প্রসেনজিৎ হেসে বললেন, “ছবিটা নিয়ে টেনশনের কারণ ছিল যে, এটা বড় ব্র‌্যান্ড। সৃষ্টিটা সৃজিতের কিন্তু আমরা দুজনে মিলে প্রবীরের চরিত্রটা তৈরি করেছিলাম, সেটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আমাদের। দিল্লি-বম্বে-হায়দরাবাদের যা কালেকশন, তাতে বোঝা যায় মানুষ মনে রেখেছে এই প্রবীর রায়চৌধুরিকে বারো বছর ধরে। লোকে তো চরিত্র করে হারিয়ে যায়। খুব কম অভিনেতার চরিত্র থাকে, যেগুলো লোকে পনেরো-কুড়ি বছর মনে রাখে। এমনই একটা চরিত্র আমি আর সৃজিত তৈরি করেছিলাম। যেখানে সৃজিতের কৃতিত্ব বেশি। আমি অভিনেতা হিসাবে চেষ্টা করেছিলাম সেটাকে রূপ দেওয়ার। আমার দায়বদ্ধতা দর্শকের কাছে। ‘বাইশে শ্রাবণ’ যখন রিলিজ করেছিল, সেই সময় যারা কলেজে ছিল, আজকে তারা হয়তো বিয়ে করে সংসারী। আর তখন যারা স্কুলে ছিল, তারা আজকে কলেজ পড়ুয়া। আমার ছেলে তো ‘বাইশে শ্রাবণ’ দেখেনি তখন, কিন্তু ও ‘দশম অবতার’ নিয়ে এক্সাইটেড। যে বাবা একটা অন‌্যরকম কিছু করেছে। এটা শুধু আমার ছেলের প্রতিক্রিয়া নয়, ও তো এই জেনারেশনকে রিপ্রেজেন্ট করছে। অর্থাৎ আমাদের নতুন প্রজন্মকেও কেটার করতে হত প্রবীরকে। এত বড় দায়িত্ব ধরে রাখা এবং প্রিকুয়েল করা খুব কঠিন কাজ। আমার আর সৃজিতের পক্ষে এই কাজটা অত‌্যন্ত চাপের ছিল।”

নতুন প্রজন্মের কাছে নিজেকে কীভাবে প্রাসঙ্গিক রাখতে হয় শিখতে হয় এই মানুষটার কাছে। যখন নেতিবাচক কথা ক্রমাগত তাঁর দিকে ধেয়ে আসে, তিনি জানেন ধৈর্য রাখতে। আর ঠিক সময়ে খেলা ঘুরিয়ে দিতে। ভেবেছিলেন ‘দশম অবতার’ এমন রেকর্ড ব‌্যবসা করবে? প্রথম বারো দিনে সাড়ে পাঁচ কোটি। সেই প্রসঙ্গ তুলতেই প্রত‌্যয়ী প্রসেনজিৎ, ‘ব‌্যবসা যে ভাল করবে সেটা বোঝা যাচ্ছিল। কারণ টিমটা সলিড। বাঙালির কাছে এই টিমটা ওয়ার্ক করে। সৃজিত, অনুপম এদের শুরুয়াত তো আমার সঙ্গে। রূপম, আইডি (ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত), এবং সৌমিক হালদার- কাকে ছেড়ে কার কথা বলব! তার সঙ্গে যোগ হয়েছে অনির্বাণ, যিশু, জয়া। যিশু আর অনির্বাণের কথা বেশি বলব, কারণ সৃজিতের সঙ্গে ওদের কম্বো জমে যায়। তাই মনে হচ্ছিল ছবিটা একটা জায়গায় যাবে। ছবিটা শিক্ষিত দর্শকের জন‌্য নিশ্চয়ই, মানে যারা মাল্টিপ্লেক্সে ছবি দেখে। তার পরেও বলব, আমার যে ড্রাইভার, কুড়ি বছর ধরে আমার গাড়ি চালাচ্ছে, তাকে কিন্তু ইদানীং কালে আমার কোনও ছবি নিয়ে এইরকম উত্তেজিত হতে দেখিনি। মানে মারামারি যেমন ওদের ভালো লাগে তেমন, চরিত্রের রেলাবাজিটা ওদের মনে ধরেছে। আর সেদিন যেটা বললাম, আমাদের এখানকার সিবিআই হেড যিনি, রাত সাড়ে এগারোটায় ফোন করেছেন আমাকে। হল থেকে বেরিয়ে বলছেন, ‘ফোন না করে থাকতে পারলাম না, কারণ বহুদিন পরে দুটো জীবন্ত পুলিশ দেখলাম। আমাদের সাধারণত দেখলেই মনে হয়, ধুর, এ তো সিনেমার পুলিশ। কিন্তু আপনাদের জ‌্যান্ত দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে, এ তো আমরাই।’ এটা বড় পাওনা।”

Dawshom-Awbotaar-1

অনির্বাণের সঙ্গে তাঁর জুটি দারুণ ক্লিক করে গিয়েছে। প্রবীর-পোদ্দার দর্শকের মুখে মুখে ঘুরছে। “এটা বিগেস্ট জুটি। আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। অনেস্টলি বলছি, কাজ করতে করতে মানুষকে চেনা যায়। আমি তো এর আগে ওর সঙ্গে বড় কাজ করিনি। যিশু-পরম যেমন আমার গায়ে গায়ে বড় হল, এদের আমি জানি, কারা কীরকম। অনির্বাণ তুলনায় অনেক পরে এসেছে। ‘গুমনামী’-তে অল্প কাজ ছিল ওর। এটা করতে গিয়ে ভীষণ ভালো লাগল, ওকে আমি রেসপেক্টও করি। ভালোবাসা হয়েছে বলেই, শেষ দৃশ্যে ওকে যখন বলি- ‘ঠিক আছিস?’ হাততালিটা পড়ে।” হেসে বললেন বুম্বাদা।

এভাবেই বহুদিন হিটের খরার পর এসআরকে ফিরেছিলেন ‘পাঠান’, ‘জওয়ান’ নিয়ে। কাজেই তাঁর সঙ্গে তুলনা আসা স্বাভাবিক। প্রসেনজিতেরও ‘কাবেরী অন্তর্ধান’ বা ‘শেষ পাতা’ প্রশংসা পেলেও সে অর্থে হিট নয়। যেটা হল ‘দশম অবতার’-এ এসে। একটু চুপ থেকে প্রসেনজিৎ বললেন, “হ্যাঁ, আমি এটা বলেছি। কমার্শিয়াল ছবি তো আমি করি। যেমন– ‘কাকাবাবু’ বা ‘প্রাক্তন’। এক্ষেত্রে দুবছরের গ‌্যাপ ছিল, কারণ সঠিক স্ক্রিপ্ট পাচ্ছিলাম না। ‘কাকাবাবু’-র মতো ব‌্যবসা কটা ছবি দিতে পারে? আর বলব, ‘শেষ পাতা’ আমার জীবনের থেকে যাওয়া একটি ছবি। এর পাশে আমি ‘জুবিলি’-ও করেছি। যখন ‘কাকাবাবু’, ‘দৃষ্টিকোণ’ বা ‘প্রাক্তন’-এর মতো ছবি করি, ব‌্যবসা মাথায় থাকেই। আর শাহরুখ খানের ফেরা নিয়ে বলব, শুধু নিজের জন‌্য করেনি। ইন্ডাস্ট্রিকে দেখিয়ে দিল- ভাই আমরা এখন এটা করতে পারি।”

Srijit Mukherji helmed Dawshom Awbotaar review

সেই জন‌্যই আপনার সঙ্গে তুলনা আসবে। বলতেই স্মিত হেসে সুপারস্টার বলছেন, “সেটা হলে আমি খুব খুশি হব। সানি দেওল আমার চেয়ে বয়সে অনেক বড়। প্রায় ৯-১০ টা ছবি তার টানা চলেনি। সেখান থেকে ‘গদর টু’ করল তো। বা রজনীস‌্যর, যিনি আমাদের অনেক সিনিয়র, ‘জেলর’ নিয়ে এলেন। আর শাহরুখ তো করে দেখালই। এটা আমাদের ‘কিক’ দেবে। যদি আমি সত্তরেও বেঁচে থাকি, ওরকম কিছু করতে চাইব, ঈশ্বর চাইলে সেই ‘ওয়াও’ ফ‌্যাক্টর তৈরি হবে। আর অবশ‌্যই বলব, যে দুজন সবসময় আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন তাঁদের কথা। অমিতাভ বচ্চন, যিনি এই বয়সে এসে ‘পিকু’-র মতো ছবি করেছেন। আর সৌমিত্রকাকু, যাঁর কোনও বয়স নেই। ওই সময়েও ‘বেলাশুরু’, ‘বেলাশেষে’, ‘ময়ূরাক্ষী’ করে বক্স অফিস দিয়ে গিয়েছেন।”

ছবির সাফল‌্য ব‌্যবসার নিরিখে দেখা হয় অনেক সময়েই। সেটা মেনে নিতে অসুবিধা হয় কখনও? নায়কের স্পষ্ট উত্তর “কখনও কখনও হয়। আবার এটাও ভাবিনি ‘শেষ পাতা’ রমরম করে সবাই দেখবে। কিন্তু ওটা অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ ছবি আমার জীবনের। ‘শঙ্খচিল’, ‘শেষ পাতা’ বা ‘নিরন্তর’-এর মতো ছবি কিন্তু আমি করেই যাব বাণিজ্যিক ছবির পাশাপাশি। নয়তো নিজের কাছে নিজে স্বস্তি পাব না। আমাকে নিয়ে এই ছবিগুলো করলেও, প্রযোজক কিন্তু লসে নেই। প্রি-সেল হয়ে যায়। তারা তাদের টাকা কভার করে নিতে পারছে।” এরপর কি কৌশিক গঙ্গোপাধ‌্যায়ের ছবি শুরু করছেন? ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর সঙ্গে? ‘ইয়েস, ওটাও আমার কাছে ঐতিহাসিক ছবি। আমাদের ৫০তম ছবি হবে।’ হেসে বললেন প্রসেনজিৎ।

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement