ছবি: ইনস্টাগ্রাম
রাহুলের সঙ্গে রিইউনিয়ন প্রসঙ্গে কথা বললেন প্রিয়াঙ্কা সরকার। মুক্তি পেল তাঁর অভিনীত নতুন ছবি ‘অহল্যা’। শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়
নতুন বছরের শুরুটা একটা রিইউনিয়ন দিয়ে হল। ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতেই আমরা দেখলাম, রাহুলের কভার ফোটোতে আপনারা তিনজন। ২০১০ সালে বিয়ে হয়েছিল, ২০১৭-এ বিচ্ছেদ আবার ২০২৪-এ মিলিত হওয়া। সাত বছরের ব্যবধান দু’ক্ষেত্রেই। আপনি কী বলবেন বছরের শুরু নিয়ে?
-এটা নিয়ে আমি আর কী বলব, যে বিষয়টার কথা তুমি বলছ, সেটা একটা ছোট্ট সময়ের পরিসর দিয়ে ডিফাইন করা যায় না। খুব ডিফিকাল্ট হবে। এই মাঝের ছয় থেকে সাত বছর সময়টা কম নয়। আর আমি রাহুলকে যখন স্কুলে পড়তাম সেই সময় থেকে চিনি। তখন প্রায় বাচ্চা ছিলাম। তারপর টেলিভিশনেও ৫ বছর কাজ করেছি। তখন তো আমরা সম্পর্কের কথা ভাবিনি, তখন একটা পারস্পরিক শ্রদ্ধা আর বন্ধুত্বের জায়গা ছিল আর সেটা কখনও ক্ষুণ্ণ হয়নি। তারপর সম্পর্ক, বিয়ে, আলাদা হওয়া আবার একসঙ্গে- এই বিষয়ে গুছিয়ে কিছু বলা আমার পক্ষেও ডিফিকাল্ট। হ্যাঁ, মানে সম্পর্ক তো শেষ হয় না, বদলে যায়।
নতুন বছরে দাঁড়িয়ে আপনাদের এই জোড়া লাগার ক্ষেত্রেও নতুনভাবে নিজেদের আবিষ্কার করেছেন?
– একদমই তাই, গত চোদ্দো-পনেরো বছরে আমরাও বদলেছি, অনেক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছি- আর গোটা সময়টা ধরে নিজেরাও পরিণত হয়েছি, বয়স বেড়েছে। বাবা-মা হয়েছি। অল্পবয়সে দাঁড়িয়ে যেটা বুঝতাম না, অভিভাবক হওয়ার পর কিছুটা বুঝেছি। দেখো, বন্ধুত্বটা আমাদের চিরকালই ছিল। হ্যাঁ, কাপল হিসাবে একটা সময় হয়তো ওয়ার্ক করেনি। সেই সময় আমরা একসঙ্গে বড় হচ্ছিলাম। ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন হওয়ার সময় নিজস্ব স্ট্রং মতামত থাকে। আর আমার বেড়ে ওঠা, শেখা সবটাই রাহুলের সংস্পর্শে। সেইটা আমি অস্বীকার করতে পারি না। হয়তো রাহুলও কোথায় গিয়ে আমার মতো করেই ভাবে। তাতে দুজনেরই এই সিদ্ধান্তটা নিতে সুবিধে হয়েছে, এবার দেখা যাক এটা নিয়ে আমরা কীভাবে এগতে পারি। আমরা এখন দুজনেই প্রস্তুত আরও একবার এফর্ট দিতে।
এই যে মানসিক অবস্থান যেখানে দুজনেই রেডি, এই সময়টা কেমন?
– এটা দুজন মানুষের খুবই ব্যক্তিগত বিষয়। তবু আমার যেটা মনে হয়, আমাদের পরস্পরকে আরও বেশি সময় দেওয়া উচিত। নতুন করে চেনার চেষ্টা করা, বোঝার চেষ্টা করার প্রসেসটা ভালো লাগছে। আগে হয়তো খুবই ‘টু-দ্য পয়েন্ট’ কথা হত সেখানে এখন আমরা নানা বিষয়ে বিশদে কথা বলছি। আমাদের দুজনেরই একটু সময় দরকার, সেটা যেন সকলে বোঝে, এটা আমার রিকোয়েস্ট। এবং আপাতত আমরা একে অপরের সঙ্গে সময় কাটাতে রাজি আছি (হাসি)।
এই আবার একসঙ্গে থাকার মধ্যে কোনও নতুনত্ব আছে?
– রাহুল আসলে আমার এত ভালো বন্ধু যে বহুদিন কথা না বললেও আমরা বুঝতে পারি যে ও কী বলতে চাইছে, বা আমি কী বলতে চাইছি। আর এতদিন ধরে নানা ফেজের মধ্য দিয়ে গিয়েও সেই বোঝাপড়াটা আছে। ফলে ব্যালান্সটা আছে। নিজেদের ইগো বা যা ঘটেছে সেটা নিয়ে অভিমান করার ক্ষেত্রে আমরা প্রচুর সময় দিই। তো নতুন বলতে এই ইগো, অভিমান সরিয়ে রেখে আমরা ধৈর্য ধরতে চাইছি। লেট’স সি।
২০২৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘মানবজমিন’, ‘আবার বিবাহ অভিযান’ বা ‘কুরবান’ হয়তো সেভাবে চলেনি, কিন্তু ওয়েব সিরিজ ‘ছোটলোক’ দারুণ সাফল্য পেয়েছে। কাজের নিরিখে ২০২৩ কী ভাবে দেখবেন?
– আমার মনে হয়, দারুণ ভালো বছর কেটেছে। এবং ছবিগুলো চলেনি সেটার সঙ্গে আমি একমত নই। ভিন্ন-ভিন্ন স্বাদের ছবি ছিল, এবং নিজের মতো করে প্রশংসা পেয়েছে। আর ডেফিনিটলি ‘ছোটলোক’-এর সঙ্গে অন্য অনেকগুলো ইমোশন জড়িয়ে। কবিদার (ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরি) সঙ্গে কাজ করার সুযোগ এবং দুর্দান্ত একটা চরিত্র পাওয়া খানিকটা ভাগ্যের ব্যাপার। কাজটা করতে গিয়ে আমি এত কিছু পেয়েছি, শিখেছি এবং তার সঙ্গে এত প্রশংসা, সেটা যেন উপরি পাওনা।
‘ছোটলোক’-এ যেমন বহুস্তরীয় চরিত্র তেমন চরিত্রর জন্য অপেক্ষা করতে রাজি আছেন?
– অপেক্ষা নয়, আমি খুব এক্সাইটেড এমন কাজ করতে। কেরিয়ারের এই পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আমি একটু অন্যরকমের কাজ করতে চাই। এমন কাজ করতে চাই যেটা আরও বেশি চ্যালেঞ্জ করবে, ভাবাবে বা যে কাজ আমাকে আরও ইনভলভ করবে।
‘অহল্যা’ প্রসঙ্গে কী বলবেন?
– এটা থ্রিলার। তার মধ্যে থেকেই নানা সামাজিক প্রশ্নও তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। যার মধ্যে কুসংস্কার একটা বড় জায়গা। এই ছবিতে আমি ‘জিনিয়া’। কথা বলতে, কমিউনিকেট করতে ভালোবাসে। অন্যদিকে বনির চরিত্রটা বিপরীতধর্মী। তার কিছু ব্যক্তিগত ট্রমা আছে, যা থেকে বেরতে পারে না। কিন্তু জিনিয়া তার ভালো বন্ধু হয়ে ওঠে। পরে জানা যায়, জিনিয়ারও কিছু গোপন কথা আছে। আর একটা কথা বলব, এই ছবির ট্রিটমেন্ট এবং গল্প বলার যে ধরন, সেটা দর্শকদের ভালো লাগবে বলেই মনে করি।
ব্যক্তিগত জীবনে সম্পর্কের ওঠাপড়া, কেরিয়ারে কতটা প্রভাব ফেলেছে?
– না না, ব্যক্তিগত জীবনে যাই হোক না কেন, আমার যা কিছু সিদ্ধান্ত বা চয়েস, সেটা নিয়ে কোনও অনুতাপ নেই। বেটার অপারচুনিটি হতেই পারত কিন্তু সেটা যদি আমি মিস করে থাকি বা সেটা থেকে যদি কিছু নেগেটিভ হয়েও থাকে- সমস্তটাই আমি খুব পজিটিভভাবে নিতে চাই। আমার মনে হয়, সব কিছুই খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল, না হলে আজকের দিনে আমি এই ইমোশন বা উপলব্ধির মধ্যে থাকতাম না। অ্যাম কোয়াইট কনটেন্ট।
আপনাদের ছেলে সহজ কতটা খুশি দুজনকে একসঙ্গে পেয়ে?
– অফকোর্স হি ইজ হ্যাপি। আমিও খুব হ্যাপি। গত বছর আমার বাবা-মা আমার সঙ্গে শিফট করার পর থেকে আই ক্যান শেয়ার মাই রেসপনসিবিলিটিজ। রাহুলও এখন দায়িত্ব নিয়েছে। আর সহজ, ঠাম্মির সঙ্গে সময় কাটাতে পারে। দাদু-দিদা, ঠাম্মি সকলের মধ্যে বড় হওয়াটা খুব দরকার।
নতুন কী আসছে?
– ‘অহল্যা’-র পর ‘হইচই’-এ ওয়েব সিরিজ ‘লজ্জা’ মুক্তি পাবে। বনির সঙ্গে আরেকটা ছবি “রবিন’স কিচেন” রেডি হয়ে আছে। আরও কিছু কাজের কথা রয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.