আদৌ ভাবেননি ‘মুখার্জিদার বউ’ এমন হিট করে যাবে৷ ‘ফিল্মমেকিং আই দিয়ে হয় না, উই দিয়ে হয়’ শম্পালী মৌলিকের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনায় এমনটাই জানালেন পরিচালক পৃথা চক্রবর্তী।
‘মুখার্জিদার বউ’ আপনার প্রথম ছবি। ২৫ দিন অতিক্রান্ত। এতটা হিট করে যাবে ভেবেছিলেন?
একদম ভাবিনি। যখন আমি কাজ করি, তখন শুধুমাত্র কাজটাতে মনোনিবেশ করি। এটা ছোটবেলা থেকেই। যখন ‘মুখার্জিদার বউ’ বানিয়েছিলাম, এটা থেকে আমার কোনও প্রত্যাশা ছিল না। কাজটা ভালবেসে করে গেছি, ব্যস। আমার খুব উইয়ার্ড ফেজ চলে কাজের সময়-একটা সময় মনে হয় ঠিক করছি। আবার কখনও মনে হয় এর থেকে খারাপ কাজ আমি করিনি। নানারকম চলে। আমার পুরো টিম সারাক্ষণ আমার পিছনে লেগে থেকে পজিটিভিটি দিতে থাকে।
শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়ের প্রোডাকশনে কাজের সুযোগ পাওয়াটা কীভাবে?
আবার যেটা বলব, কোনও প্রত্যাশা ছাড়াই আমি আমার দু’জন বন্ধুর সঙ্গে মিলে কয়েকটা শর্টফিল্ম করেছিলাম। একজন ক্যামেরা করেছিল, একজন মিউজিক করেছিল। আমি স্ক্রিপ্ট, ডিরেকশন আর এডিট করে, নিজেরা টাকাপয়সা দিয়েই করেছিলাম। একটা হচ্ছে ‘মায়েরা মিথ্যে কথা বলে’, মীরদার সঙ্গে। তারপরে মীরদা এবং পরান জেঠুকে নিয়ে ফাদার্স ডে-তে আর একটা করেছিলাম। এই ফাদার্স ডে’র ফিল্মটা কোনওভাবে শিবুদার কাছে পৌঁছয়। তো তারপর শিবুদা মীরদাকে ফোন করে, আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। আমার এখন মনে আছে ১৮ জুন ওটা রিলিজ করেছিল, আর ১৯ জুন আমি শিবুদার ফোন পাই। ডেকে পাঠান আমাকে। বলেন যে, আমার কাজ দেখে ওঁদের ভাল লেগেছে। ফিচারফিল্ম করার ইচ্ছে আছে কি না। যখন শর্ট ফিল্ম করেছিলাম, তখনও ভাবিনি কী জন্য বানাচ্ছি। বা এটার থেকে কী পেতে পারি। বানিয়েছিলাম নিজের ভাললাগা থেকে। তারপরে এটা ঘটে। একই কথা প্রযোজ্য ‘মুখাার্জিদার বউ’-এর ক্ষেত্রেও, আমি এত কিছু ভাবিইনি। যে কোনও মানুষই যখন বিশ্বাস করে টাকা লগ্নি করছেন ছবিটার জন্য, ব্রেক ইভেন্টটা হওয়া দরকার। আমি শুধু এটা চেয়েছিলাম। শিবুদা-নন্দিতাদিকে যেন লেট ডাউন না করি। সেই চিন্তাটা ছিল। ওই একটা ফোন থেকেই আমি সুযোগ পাই। যেটা হয়তো সচরাচর ঘটে না। আমি ওঁদের পার্সোনালি চিনতাম না, ওঁরাও আমাকে চিনতেন না। এটা পিওরলি কাজের ভিত্তিতে ঘটেছে।
শুরু থেকেই কি ছবি বানানোর ইচ্ছে ছিল? আগে কি কয়েকজনকে অ্যাসিস্ট করেছিলেন?
না, আমি ফিল্ম এডিটিং নিয়ে পড়াশোনা করেছি ‘এসআরএফটিআই’ থেকে। শ্রীকর প্রসাদকে অ্যাসিস্ট করার খুব ইচ্ছে ছিল আমার। আমি প্রায় বাইবেলের মতো ওঁর আর মণি রত্নমের ছবির এডিটিং দেখতাম। আমি যে সময় পড়াশোনা শেষ করছি, সেই সময় শ্রীকর স্যর কোনও একটা দক্ষিণি ছবি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। ফলে আমার আর ওঁর সঙ্গে কাজ করা হয়নি। সেই দুঃখে আমি ঠিক করেছিলাম আমি নিজে নিজেই কাজ করব, কাউকে অ্যাসিস্ট করব না। তারপরে দু’টো ছবি এডিট করেছিলাম। আমি ছোট থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম কলকাতা ছেড়ে কোথাও যাব না। তো কলকাতাতে শুধু এডিটিং করে, সারভাইভাল একটা ইস্যু। একটা সময় আমাকে এত বেশি কাজ করতে হচ্ছিল যে, কাজের প্রতি ভালবাসাটা হারিয়ে যাচ্ছিল। এর সঙ্গে আমার ডিরেকশনের ন্যাক ছিল। কারণ এডিট তো আল্টিমেটলি গল্প বলারই কাজ। যার ফলে আমি ‘সায়লেন্ট ভয়েসেস’ বলে একটা ডকুমেন্টারি বানাই একসময়। ওটাই আমার হাতেখড়ি। সেটা প্রায় এই একই বিষয় নিয়ে ছিল। বিয়ের পর মেয়েদের আত্মপরিচয়ের সন্ধান নিয়ে। ওটা মূলত আমার মায়ের উপর ছিল। প্রচুর ফেস্টিভ্যালে গিয়েছে ওটা। এটা আমাকে আত্মবিশ্বাসী করেছিল। তারপর নিজস্ব প্রোডাকশন ইউনিট খুলে অ্যাড ফিল্মের কাজ করা শুরু করি। পড়াশোনার পরে অ্যাড ফিল্ম আর শর্টফিল্ম করি।
‘মুখার্জিদার বউ’-এর কাহিনিকার সম্রাজ্ঞীর সঙ্গে কী আগে থেকে বন্ধুত্ব? মানে জানতে চাইছি সংযুক্তিটা কীভাবে?
না, বন্ধু আমরা ঠিক ছিলাম না। যেটা হয়েছিল সম্রাজ্ঞীর লেখা আমার খুব ভাল লাগত। ফেসবুকে ওর লেখা পড়তাম। মনে হত, কাজের ক্ষেত্রে আমাদের চিন্তাভাবনাগুলোয় মিল আছে। আমার বন্ধুর কাজে সম্রাজ্ঞী স্ক্রিপ্ট করেছিল। তখন ওকে প্রথম মিট করি। তারপরে বহুদিন ধরে কথা হয়েছে, যে একসঙ্গে যদি একটা কাজ করা যায়। তখন হয়নি। পরে শিবুদা যখন মেয়েদের আইডেনটিটি ক্রাইসিস নিয়ে ছবি করার কথা বলেন, তখন আমি সম্রাজ্ঞীকে শিবুদার কথা বলি। তখন সম্রাজ্ঞীই শাশুড়ি-বউমার আইডিয়াটা নিয়ে আসে। ওই বলে, সাইকোলজিস্টের বিষয়টাও। আমার ব্রিলিয়ান্ট মনে হয়। সেই শুরু। এই প্রসঙ্গে বলি, একজনের নাম না নিলে পাপ হবে। তিনি হলেন নন্দিতাদি। শি প্লেড আ বিগ রোল। সম্রাজ্ঞী যদিও লেখালিখির সঙ্গে যুক্ত। আমার ক্ষেত্রে একটা ফিচার ফিল্মের স্ক্রিপ্ট লেখা খুব ডিফিকাল্ট কাজ। আমরা যে স্ক্রিপটা নিয়ে গিয়েছিলাম, নন্দিতাদি দেখে বলেছিলেন, এটা কি উপন্যাস হবে? (হাসি)। তারপর নন্দিতাদি বসে পুরোটা ট্রিম করেন। উনি অল থ্রু হেল্প করেছেন।
এরপর কী?
ভাবছি। ফাইনালাইজ হয়নি। শিবুদার সঙ্গেই কথা চলছে।
আবারও কি আপনি আর সম্রাজ্ঞী জুটি বেঁধে করবেন? নাকি ইনডিপেনডেন্টলি?
সেটাও এখনও অবধি কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। অ্যাজ অফ নাউ হয়তো ইনডিপেনডেন্টলি কাজ করব।
এই সাফল্যের জন্য সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব কাকে দেবেন?
বাবা-মা রয়েছেন জন্মানোর পর থেকে। তাঁরা আমার ছবি করার ভাবনাটাকে শেপ দিতে সাহায্য করেছেন। এই ছবিটার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব দেবো শিবুদা এবং নন্দিতাদিকে। এঁরা দু’জন, বিশ্বাস করে সুযোগ দিয়েছিলেন। ওঁরা যে আস্থা রেখেছিলেন এবং প্রতি মুহূর্তে পাশে ছিলেন সেটাই সবচেয়ে বড় কথা। আর বলব আমার টিমের কথা। ওরা আমার ইমোশনাল অ্যাংকর। ফিল্মমেকিং একা হয় না। যেটা শিখেছি বলতে চাই, ফিল্মমেকিং ‘আই’ দিয়ে হয় না, ‘উই’ দিয়ে হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.