সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বলিউড সিনেমার রিলিজের জন্য প্রেক্ষাগৃহ থেকে বাংলা সিনেমা সরানোর চাপ দেওয়া হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এমনই অভিযোগ প্রিয়া সিনেমার কর্ণধার অরিজিৎ দত্তর (Arijit Dutta)। এর জন্য বাংলার এক নামী প্রযোজনা সংস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। হিন্দি ছবি রিলিজের জন্য অনৈতিক শর্ত দেওয়া হয়েছিল, সেকথা জানান নবীনা সিনেমার ডিরেক্টর নবীন চৌখানিও। বিষয়টিকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন প্রযোজক-পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (Shiboprosad Mukherjee)। করোনা পরবর্তী সময়ে বাংলা সিনেমার উপরে এমন আঘাত করা কি উচিত? প্রশ্ন তোলেন তিনি।
এই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রণবীর-আলিয়া অভিনীত ছবি ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ (Brahmastra) এবং শিবপ্রসাদ-নন্দিতা জুটির উইন্ডোজ প্রোডাকশন প্রযোজিত ‘লক্ষ্মী ছেলে’ (Lokkhi Chele)। গত ২৬ আগস্ট মুক্তি পায় ‘লক্ষ্মী ছেলে’। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছেন উজান গঙ্গোপাধ্যায়, ঋত্বিকা পাল, পূরব শীল আচার্য। দর্শকদের পাশাপাশি সমালোচকদেরও প্রশংসা আদায় করে নিয়েছে এই ছবি। এরপর গত ৯ সেপ্টেম্বর মুক্তি পায় করণ জোহর প্রযোজিত ‘ব্রহ্মাস্ত্র’।
সোমবার সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রিয়া সিনেমা হলের কর্ণধার অরিজিৎ দত্ত লেখেন, “দিনকাল খুবই খারাপ। বাংলার একটি প্রযোজনা সংস্থা তাদের বলিউড রিলিজের জন্য একটি চলতি বাংলা ছবিকে প্রেক্ষাগৃহ থেকে সরানোর চাপ দিচ্ছে। পাশাপাশি পরের সপ্তাহের বাংলা রিলিজও বাতিল করে দিতে বলা হচ্ছে! আমরা কি এতটাই নিচে নেমে গিয়েছি?”
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে ফোনে অরিজিৎ দত্ত আরও বলেন, “বলা হয়েছে এই সপ্তাহে যদি ছবিটি চালাতে হয় তাহলে সমস্ত শো দিতে হবে। ‘লক্ষ্মী ছেলে’ একেবারেই ছাড়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। পরের সপ্তাহে আরও একটি বাংলা ছবি কনফার্ম করা ছিল। সে সময়ও সমস্ত শো চাওয়া হয়। তাই বললাম অসম্ভব। দুর্ভাগ্যের বিষয় একটি বাংলা প্রযোজনা সংস্থা এটি বলেছে। বাংলা ছবি নামিয়ে দাও তাহলে আমাদের বড় হিন্দি ছবিটা দেব।”
সেই সপ্তাহে একটি সিনেমার মুক্তি ছিল বলেই এই সুবিধা প্রযোজনা সংস্থা পেয়েছে বলে মত প্রকাশ করেন অরিজিৎ দত্ত। তিনি বলেন, “সাধারণত এমন টুইট করি না। কিন্তু খুবই দুঃখ পেয়ে লিখেছি। সারা সপ্তাহে একটা শো চলছে। তাও বিকেল চারটের শো। ভাবুন ক্ষতির অঙ্কটা। ব্রহ্মাস্ত্র পেলে ভাল তো হতই। কিন্তু প্রিন্সিপাল ইজ প্রিন্সিপাল। বম্বে আর হিন্দি ছবির ডিস্ট্রিবিউটরের স্বৈরতন্ত্রের কাছে মাথা নত করব না।”
‘ব্রহ্মাস্ত্র’ মুক্তির ক্ষেত্রে প্রায় একই শর্ত দেওয়া হয়েছিল নবীনা সিনেমা হলের ডিরেক্টর নবীন চৌখানিকে। ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনটি শর্ত আরোপ করা হয়েছিল। প্রথমত, অস্বাভাবিকভাবে টিকিটের দাম বাড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত, ওরা মাল্টিপ্লেক্সের তুলনায় লভ্যাংশের বেশি পার্সেন্টেজ নবীনার মতো সিঙ্গলস্ক্রিনের কাছ থেকে চাইছিল। তৃতীয়ত, অন্তত দু’ সপ্তাহ সমস্ত শো ওই সিনেমাকেই দিতে হবে। এমন শর্ত তাঁর পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয় বলেই ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ সিনেমা নেননি বলে জানান নবীন চৌখানি। তবে এর জন্য তিনি বাংলার কোনও প্রযোজনা সংস্থাকে দায়ী করছেন না। কারণ এই বিষয়গুলি ও শর্তগুলি ছবির প্রযোজনা সংস্থাই ঠিক করে বলে জানিয়েছেন হলমালিক।
পুরো বিষয়টিকে খুবই দুঃখজনক আখ্যা দিয়েছেন পরিচালক-প্রযোজক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “আমার মনে হয় না আজকের দিনে কোনও প্রযোজক বা ডিস্ট্রিবিউটরের উচিত কোনও সিনেমা হল কর্তৃপক্ষর উপরে বাহ্যিক চাপ সৃষ্টি করা। নির্দিষ্ট কোনও ছবি নামিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ তৈরি করা কখনওই উচিত নয়। কোন সিনেমা চালাবে, কোন সিনেমা চালাবে না সেই সিদ্ধান্ত হলমালিকেই দেওয়া উচিত। বাংলা সিনেমার ক্ষেত্রে আমি শুধু একটিই কথা বলব যে আগে এগুলো যখন করা হত, তখন এগুলো মানা যেত। করোনা পরবর্তী সময়ে যেখানে সবাই লড়ছে, সেখানে দাঁড়িয়ে বাংলা সিনেমার উপরে এই আঘাতগুলো করা উচিত নয়। আট হাজারের উপর স্ক্রিন রয়েছে ব্রহ্মাস্ত্রর। তাতে তিনটে-চারটে করে শো। তাহলে তার কতগুলো শো তা বোঝাই যাচ্ছে। সেখানে কয়েকটা শো যদি কম হয় এই পশ্চিমবঙ্গে তাহলে কি খুব কিছু এসে যেত? এটা নিয়ে ভাবা উচিত।” উল্লেখ্য, যে প্রযোজনা সংস্থার কথা অরিজিৎ দত্ত উল্লেখ করেছেন তাঁর অন্যতম কর্ণধার এই বিষয়ে পালটা টুইটও করেছেন। তিনি লেখেন, “টিপিক্যাল অরিজিৎ দত্ত টুইট! কেউ আপনাকে চাপ দিতে পারে না। ইনফ্যাক্ট, এর একটা অন্যদিকও রয়েছে। হলের ভাড়া কম করার বদলে আপনি গরীব বাঙালি প্রযোজকদের শর্ত দেন যেন তাঁদের ছবিতে আপনাকে অভিনেতা হিসেবে নেওয়া হয়। আর এক্ষেত্রে তো বাংলা সিনেমার জয় হয়। আপনার এই পরিষেবার জন্য ধন্যবাদ দাদুলদা।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.