নির্মল ধর: সকাল থেকেই আকাশের মুখ ঘোমরা। ঝিরঝিরে বৃষ্টি। দিনটা যেন মন খারাপের। আর হবে নাই বা কেন, দেখতে দেখতে এক বছর কেটে যাওয়া। ‘অপু’র অভাব এখনও যেন নাড়া দিয়ে ওঠে বাঙালির মননে। এখনও বাংলা সিনেমা তথা ভারতীয় চলচ্চিত্রের রাজপুত্রকে ভুলতে পারেননি আপমর বাঙালি। আর তাই তো ১৫ নভেম্বর সকাল সকালই অনুরাগীরা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের (Soumitra Chattetjee) স্মৃতিচারণায় হারিয়ে গেলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক শেয়ার করলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে নানা কথা, নানা গল্প। গত বছরে ঠিক এ দিনই তো বাংলার সাংস্কৃতিক জগৎ হারিয়েছে কিংবদন্তি সৌমিত্র চট্টোপাধ্য়ায়কে। এই এক বছরে বাবাকে হারিয়ে কেমন কাটছে সৌমিত্রকন্যা ও নাট্য ব্যক্তিত্ব পৌলমী বসুর (Poulomi Basu) জীবন?
‘কাজ করে যাও’… সৌমিত্র চট্টোপাধ্য়ায় তাঁর মেয়েকে একথাই বার বার বলতেন। তাই কাজের মধ্যেই বাবার স্মৃতিচারণায় ভেসে গেলেন পৌলমী। তাঁর নাটকের দল মুখোমুখির তরফ থেকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে শ্রদ্ধা জানাল হল নাটক টাইপিস্ট-এর মধ্য়ে দিয়েই।
বাবাকে হারিয়ে কতটা শূন্যতা পৌলমীর জীবনে?
কিছুটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে পৌলমী বললেন, ‘গত এক বছরের মধ্যে শুধু বাবাকে হারাইনি, মাও তো চলে গেলেন কয়েকমাস বাদেই! গভীর শূন্যতা এসেছিল আমার জীবনে, বলতে গেলে আমার এবং ভাই (সৌগত) দুজনের জীবনেই। তারপর একে একে দুর্ঘটনার শেষ নেই। মা, বাবাকে নিয়ে একটু যে বসে ভাবব তার সময়ই পাইনি। ছেলে রণদীপ, মেয়ে মেখলার কোভিড হল, রণদীপের হল দুবার, একবার হাসপাতালেও ভর্তি করতে হল। কতটা ভয়ানক সময়ের মধ্য়ে দিয়ে গিয়েছি, সেটা আমি ছাড়া কেউ বুঝবে না। কিন্তু বাবার শিক্ষা ছিল লড়াই করেই বাঁচতে হবে। না, এটা কোনও রাজনীতির বুলি নয়, এটা বাবাও মেনে চলেছেন, আমিও মান এবং মেনে চলি। আমার এখন শান্তির জায়গা একটাই কাজ, শুধু কাজ করে যাওয়া। এতো ঝড় ঝাপটা সামলেও নাটক করে গিয়েছি। এই যে গতকাল বাবার লেখা দুটো নাটক অভিনয় করলাম – এটাই তো তাঁকে শ্রদ্ধা জানানো। বাবা দীর্ঘ জীবন বেঁচে ছিলেন, কিন্তু প্রায় আমৃত্যু কাজ করে গিয়েছেন। বলতেন, কোনও বাধার কাছে মাথা নীচু করবে না। লড়াই করে এগিয়ে যাবে। জীবনে হারজিৎ থাকবে, তাতে পিছিয়ে আসা নয় কখনও, হারলেও এগিয়ে যাবার চেষ্টায় যেন কোনও খামতি না থেকে। বাবার সেই কথা মনে রেখেই সংসারের সব ঝক্কি সামলে ও তাঁর লেগাসিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য আমার।তাঁর নাটক নিয়মিত অভিনয় করার চেষ্টা চালিয়ে যাবও। বাবার নামে একটা ট্রাস্ট তৈরির করার চেষ্টা করছি, দেখি কত দূর এগোতে পারি। চাইছি বাবার সব কাজ – লেখা, আঁকা ছবি, নাটক, ভাল সিনেমাগুলো সংরক্ষণের চেষ্টা করব। এটাও জানি অনেক বাধা আসবে, তবুও থামার পাত্রী আমি নই, লড়াই আমার থামবে না। বাবাও আমৃত্যু লড়াই করে গিয়েছেন, আমিও লড়ব।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.