অর্ণব আইচ: মৃত্যুর আগের দু’দিন বাড়ি থেকে বের হননি পল্লবী ও সাগ্নিক। শেষ ৭২ ঘণ্টা ফ্ল্যাটে দু’জনের মধ্যে কোনও গোলমাল হয়েছিল কি? শেষ তিনদিনেই কি লুকিয়ে পল্লবী মৃত্যুর কারণ? তা জানতে চাইছে পুলিশ। কারণ, পল্লবীর পরিবারের লোকেদের অভিযোগ, তাঁদের মেয়ের উপর শারীরিক অত্যাচার করতেন প্রেমিক সাগ্নিক চক্রবর্তী (Sagnik Chakraborty)। এই বিষয়টি পুলিশের পক্ষে বিশেষভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শনিবার সাগ্নিক চক্রবর্তীর মা ও বাবাকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গড়ফা থানার পুলিশ।
গত রবিবার সকালে দক্ষিণ কলকাতার গড়ফার গাঙ্গুলি পুকুরের ফ্ল্যাট থেকে সিরিয়ালের অভিনেত্রী পল্লবী দে’র (Pallavi Dey) ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হওয়ার পর থেকে বেশ কিছু তথ্য পুলিশের সামনে এসেছে। পরিবারের অভিযোগ অনুযায়ী, খুনের অভিযোগে পল্লবীর প্রেমিক সাগ্নিক চক্রবর্তীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। জেরার মুখে সাগ্নিক পুলিশকে জানান, পল্লবী সম্প্রতি একটি সিরিয়ালেই অভিনয় করতেন। সেই সিরিয়ালটি প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। তাই নতুন সিরিয়ালে কাজ খোঁজার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন পল্লবী। তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, গত ১২ মে শেষ শুটিংয়ের কাজ ছিল এই অভিনেত্রীর। এরপর হাতে কাজ না থাকায় বাড়িতেই ছিলেন তিনি। গত ১৩ ও ১৪ মে, শুক্র ও শনিবার পল্লবী একাধিক পরিচালক ও টিভি সিরিয়ালের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিত্বকে ফোন করেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে কোনও চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ রয়েছে কি না, তা জানার চেষ্টা করেন। কয়েকজন তাঁকে আশ্বাস দেন বলে জানা গিয়েছে।
এই ব্যাপারে জেরার মুখে সাগ্নিক জানিয়েছেন, পল্লবীর হাতের টাকা ফুরিয়ে আসছিল। বেশ কয়েকটি মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা লগ্নি করেছিলেন পল্লবী। এ ছাড়াও ইএমআই দিয়ে কিনেছিলেন গয়না। অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে টাকা রোজগারের রাস্তা বের করার চেষ্টা করছিলেন তিনি। এদিকে, সাগ্নিককে টানা জেরার পর পুলিশ অনেকটাই নিশ্চিত যে, সল্টলেকে ভুয়ো কলসেন্টারের কারবারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ওই যুবক। যেহেতু সল্টলেক ও রাজারহাটে কলকাতা পুলিশ, সিআইডি ও বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ ক্রমাগত তল্লাশি চালায় কলসেন্টারগুলিতে। তাই বেগতিক বুঝে সাগ্নিক সাতদিন আগেই নিজের কলসেন্টারটি বন্ধ করে দেন। মূলত বাড়িতেই ছিলেন এই ক’দিন। বৃহস্পতিবার রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত ফ্ল্যাটে টানা এক সঙ্গেই ছিলেন পল্লবী ও সাগ্নিক। ওই সময়টুকুর জন্য দু’জনের মধ্যে কোনও গোলমাল হয় কি না, সেই তথ্য বাড়ির কেয়ারটেকার ও অন্যান্য বাসিন্দাদের পরিচারিকা সেলিমা সর্দারের কাছ থেকেও পুলিশ জানার চেষ্টা করছে। পল্লবীর পরিবারের লোকেদের অভিযোগ, মাঝেমধ্যেই প্রচণ্ড রাগারাগি করতেন সাগ্নিক। মারধর করতেন পল্লবীকে। আহত অবস্থায় কান্নাকাটি করতে করতে পল্লবী মাকে জানাতেন বিষয়টি।
এদিকে সাগ্নিকেরও পালটা দাবি, রাগারাগিতে পল্লবীও কম ছিলেন না। রেগে গেলেই জিনিসপত্র ছোঁড়াছুড়ি করতেন। আবার পরিচারিকার দাবি, পল্লবী নিজে নিজের গালে চড় মারতেন। রবিবার সকালে এই পরিচারিকাকে কেন্দ্র করেই গোলমাল হয়। এর আগেও দু’দিনে অন্য কোনও গোলমাল হয়েছিল কি না, পুলিশ তা জানার চেষ্টা করছে। যদিও সাগ্নিকের দাবি, তাঁদের মধ্যে এই দু’দিন বিশেষ কোনও সমস্যা হয়নি। এমনকী, মৃত্যুর আগের রাত অর্থাৎ শনিবার তাঁরা পাটুলির একটি নামী রেস্তোরাঁয় গিয়ে খাবার খান। অনেকক্ষণ গল্প করে তারপর বাড়ি ফেরেন। এই তথ্যগুলি যাচাই করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.