সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গ্ল্যামার ইন্ডাস্ট্রি মানেই যে আলো ঝলমলে তারকাদের জীবন, এমনটা ভাবার কিন্তু কোনও কারণ নেই! ক্যামেরার ফ্ল্যাশ, খবরের শিরোনামের বাইরে তাঁরাও রক্তমাংসে গড়া মানুষ। তাঁদের ইমোশন, অনুভূতি রয়েছে। মন খুলে কথা বলার লোক তাঁরাও চান। সুশান্ত সিং রাজপুতের (Sushant Singh Rajput) মৃত্যুর পর এই বিষয়গুলো যেন আরও জোরালো হয়ে উঠল। প্রাণ খুলে কথা বলা কিংবা মনের কথা বলা যে কতটা জরুরী, সেটাই বোধহয় স্মরণ করিয়ে দিয়ে গেলেন অভিনেতা। সেই সূত্র ধরেই ‘মনের স্বাস্থ্য’ নিয়ে মুখ খুললেন অভিনেত্রী পার্ণো মিত্র। বললেন, তিনিও একটা সময়ে আত্মহত্যাপ্রবণ ছিলেন। কয়েকবার নিজেকে শেষ করে দেওয়ার কথাও তাঁর মাথাতে এসেছিল। কিন্তু বর্তমানে সেই হতাশা-অবসাদ কাটিয়ে উঠেছেন অভিনেত্রী।
সোমবার সকালে পার্ণো (Parno Mitra) সোশ্যাল মিডিয়ায় ৩টি টুইট করেছেন। সেখানেই তিনি বুঝিয়েছেন যে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলাটা আজকের দিনে কতটা জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে রোজ আমরা ছুটে চলেছি যন্ত্রের মতো। কারও জন্যে কারও সময় নেই। আমরা পাশের লোকের সঙ্গে কথা বলার চেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকি বেশি।
কী বললেন অভিনেত্রী? “আমিও আত্মহত্যাপ্রবণ ছিলাম এবং চূড়ান্ত মানসিক অবসাদে ভুগেই কয়েকবার সেই সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেছিলাম। অবসাদের কষ্টটা কিন্তু এত সহজে চলে যায় না! আর সেই কারণেই বোধহয় আমরা নিজেদের চারপাশে একটা শক্ত খোলস সৃষ্টি করি। যা ভেঙে ফেলা কঠিন। তখন কিন্তু কারও সঙ্গে মন খুলে কথা বলা কঠিন হয়ে পড়ে। আর অবসাদটা অজান্তেই আমাদের জীবনের সঙ্গী হয়ে ওঠে”, মন্তব্য পার্ণোর।
পরের টুইটে অভিনেত্রী লেখেন, “আমি চাই, যে কেউ এই সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা যেন অতি সত্ত্বর এই বিষয়টি নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করেন। আমিও লড়াই লড়েছি একটা সময়ে, এখনও লড়ছি। যদিও খুব একটা সহজ নয় বিষয়টা, কিন্তু আমার পাশে আমার পরিবার এবং বন্ধুরা সকলেই রয়েছেন। আমার চিকিৎসকরা আমাকে খুব সাহায্য করেন। তাই বলব, দয়া করে মানসিক অবসাদের বিষয়টিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ড করার বাইরেও প্রতিটা মানুষের পাশে দাঁড়ান। প্রিয়জনদের যত্ন নিন।”
অবসাদ নিয়ে মুখ খুললেন অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়ও। বললেন, ডিপ্রেশন যে ঠিক কী, তা নিজে ভুক্তভোগী না হলে কেউ বুঝতে পারবেন না। গতবছর আমি নিজেও অবসাদের মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। ২০১৯ সালের অনেকটাই আমার কাছে খুব যন্ত্রণাদায়ক। আমি নিয়ম করে শুটিংয়ে যেতাম। সারাদিন কাজ করতাম। সেটে সবার সঙ্গে হাসি ঠাট্টা করতাম। কিন্তু বাড়িতে ফিরে এসেই চরম নিঃসঙ্গতায় ভুগতাম। অন্ধকার ঘরে একা বসে থাকতাম। কিছু ভাল লাগত না। একবার মনে হয়েছিল ১৪ তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে জীবনটাকে শেষ করে ফেলি। এই ভাবনা নিয়ে ৯টা মাস কাটানো পরে আমি মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। তাঁকে বললাম, আমি বাঁচতে চাই।”
প্রসঙ্গত, পার্ণোর এই পোস্টে সাড়া দিয়েছেন মিমি চক্রবর্তী। যিনি কিনা নিজেও একটা সময়ে অবসাদে ভুগেছিলেন। গতকালই সাংসদ-অভিনেত্রী জানিয়েছিলেন যে অবসাদ কতটা ক্ষতিকর হতে পারে মানুষের জীবনে। ক্যানসারের মতোই গুরুতর রোগের তকমা দিয়েছেন তিনি অবসাদকে। সেই মিমিই পার্ণোর পোস্টের উত্তরে লিখেছেন, “আমি জানি মানসিক দিক থেকে তুমি কতটা স্ট্রং। কালই তো বললাম, যে তোমার পাশে আছি।” রাজনৈতিক মতাদর্শে পার্থক্য থাকলেও মিমি এবং পার্ণো যে বেশ ভাল বন্ধু, তা ইন্ডাস্ট্রির অন্দরের সবাই জানেন। সমস্ত মতভেদ, পার্থক্য ভুলে এগিয়ে আসাই তো বর্তমান ‘যান্ত্রিক’ দুনিয়াতে সবচাইতে বেশি প্রয়োজন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.