অরূপ বসাক, মালবাজার: দু’ চাকার অ্যাম্বুল্যান্সে মুমূর্ষু রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে সকলের কাছে তিনি আজ প্রিয় ‘অ্যাম্বুল্যান্স দাদা’। জলপাইগুড়ি জেলার মাল ব্লকের ক্রান্তির রাজাডাঙা এলাকার একজন সামান্য চা শ্রমিক করিমুল হকের মানবসেবার মুখ হয়ে ওঠার গল্প আজ কারওই অজানা নয়। রোগী পরিষেবায় অসামান্য অবদানের জন্য ২০১৭ সালে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হন করিমুল হক। যাঁর বায়োপিকে অভিনয় করার কথা ছিল স্বয়ং ইরফান খানের। সেই পদ্মশ্রী করিমুল হক-ই এবার করোনা ত্রাসের মাঝে সচেতনতা প্রচারে নেমে পড়েছেন পথে
করোনার হাত থেকে বাঁচতে এবার রাস্তায় নেমে গান গেয়ে, অভিনয়ের মাধ্যমেই সাধারন মানুষকে সচেতন করছেন পদ্মশ্রী করিমুল হক। মালবাজার মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সচেতনতা প্রচার অভিযানের জন্য রাস্তাকেই মঞ্চ বানিয়ে নিয়েছেন সবার প্রিয় ‘অ্যাম্বুল্যান্স দাদা’। রবিবার সকাল থেকে মালবাজার, চালসা, ক্রান্তি থেকে ওদলাবাড়ির বিভিন্ন এলাকায় যান করিমুল হক। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সেখানকার নাম করা গায়ক ‘কোকো’ ওরফে শুভঙ্কর চক্রবর্তী। করোনা নিয়ে তাঁর লেখা এবং বাঁধা গানের মধ্য দিয়েই রাস্তায় রাস্তায় অভিনয় করে জনগণকে বোঝান কোরনা ভাইরাসের ভয়াবহতা। কী করে এই মারণ ভাইরাসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে, বাঁচতে হবে এই নরখেকো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভাইরাসের হাত থেকে, সেকথাও গানের মাধ্যমেই জনসাধারণের কাছে তুলে ধরলেন করিমুল হক।
এপ্রসঙ্গে করিমুল হক বলেন, “আমাদের জেলা এখনও রেড জোনে রয়েছে। তাই আমাদের সকলকে আরও বেশি করে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সাবধানে চলতে হবে। অযথা রাস্তায় ঘোরাঘুরি বন্ধ করতে হবে অবিলম্বে। বাইরে বেরলেও মুখে মাস্ক পরা বাঞ্ছনীয়। মালবাজার মহকুমার জনগণের কাছে সে সমস্ত বার্তা তুলে ধরতেই এই প্রয়াস।” এদিন করিমুলের এই প্রয়াসে উপস্থিত ছিলেন মালবাজার মহকুমা পুলিশ আধিকারিক দেবাশিষ চক্রবর্তী, মালবাজার থানার ওসি দেবাশীষ চক্রবর্তী এবং সমাজসেবী অনির্বান মজুমদার।
উল্লেখ্য, সচেতনতা প্রচারের মাঝেই এদিন জরুরী পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সকল কর্মীদের কুর্নিশ জানালেন করিমুল হক। পুলিশ, চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থকর্মী এবং সাংবাদিকদের প্রশংসাও করেন তিনি। তাঁর কথায়, “এই মানুষগুলির জন্যই আজ আমরা চিকিৎসা, সুষ্ঠ আইন-শৃঙ্খলা এবং সমস্ত খবর টিভি বা সংবাদপত্রে পেয়ে যাচ্ছি। তাই জরুরী পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের ওপর কেউ যেন আঘাত না হানেন, সেই আরজিও জানাচ্ছি সকলতে। গৃহবন্দি জীবনে মানুষের মনোবল বাড়াতে এবং বিশ্বাস জোগাতেই এই পদক্ষেপ নিয়েছি আমি। এই ভাবে চলতে থাকলে খুব তাড়াতাড়িই আমরা করোনা মুক্ত হব বলে আশা করছি।”
এই বিষয়ে মালবাজার মহকুমা আধিকারিক দেবাশিষ চক্রবর্তী বলেন, “পদ্মশ্রী করিমুল হকের জন্য আমরা গর্বিত। উনি যেভাবে করোনা নিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে সচেনতা প্রচার অভিযানে নেমেছেন, তা প্রশংসনীয়। আমরা সবসময়ে তাঁর পাশে আছি।” প্রসঙ্গত, এদিন করিমুল হকের এই প্রচারে তাঁর পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত হয়েছিলেন।
ছবি: অরূপ বসাক
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.