শরতে নয়, এবার বরং শীতেই আসছেন ‘অসুর’। হঠাৎ মর্তে আসার ঋতু পরিবর্তন করলেন যে! আসলে পরিচালকের ইচ্ছেয়। ওই যে কর্তার ইচ্ছেয় কর্ম। ‘অসুর’ আসলে পরিচালক পাভেলের পরবর্তী ছবি। ঝাঁ চকচকে কাস্টিং- নুসরত জাহান, জিৎ, আবীর চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার প্রকাশ্যে এল সেই ছবির প্রথম ঝলক। সেই সুবাদেই সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-এর সঙ্গে টলিউড এবং তাঁর বলিউডের কাজ নিয়ে অকপট ভাবে কথা বললেন পাভেল। শুনলেন সন্দীপ্তা ভঞ্জ
জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা আয়ুষ্মান আপনার গল্পে অভিনয় করছেন। ‘বালা’র গল্পটা মাথায় এল কীভাবে?
ছোটবেলায় পাড়ায় ক্রিকেট খেলত সন্তুদা, তারপর বড়দা বলে আমাদের একজন আর্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর আছে, চুল নিয়ে হতাশাগ্রস্থ এরকম অনেককেই দেখেছি। কিন্তু প্রথম আইডিয়াটা আমায় দিয়েছিল আমার স্ত্রী স্মৃতি। সেখান থেকেই ‘বালা’র গল্পটা ডেভেলপ করি আমি।
মাঝখানে ‘বালা’র স্ক্রিপ্ট চুরির অভিযোগও তো আনা হয়েছিল..
আমি নিজেকে ‘কন্ট্রোভার্সির ফেবারিট কিড’ বলে মনে করি। লেগেই থাকে কিছু না কিছু। কমলকান্ত নামে একজন ভদ্রলোকের মনে হয়েছিল ‘বালা’র গল্পটি তাঁর দেখে কপি করা। কিন্তু মজার ব্যাপার, স্ক্রিপ্ট রাইটার অ্যাসোসিয়েশনে আমার চিত্রনাট্য রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছিল ২০১৬ সালে, আর ভদ্রলোকেরটি ২০১৮ সালে। মুম্বই পুলিশ স্টেশনে আমি যাবতীয় নথিপত্র দেখালে তাঁরা আমায় পালটা মানহানির মামলা করতে বলেন ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে। কিন্তু ওসবে আমি নেই!
[আরও পড়ুন: মানবিক মীর, এগিয়ে এলেন ওঁদের জন্য যাঁরা কোনও দিন শিল্পীকে শোনেননি ]
আবীর-জিৎ দু’জনেই প্রথম আপনার পরিচালনায় কাজ করছেন, যেহেতু দু’জনে দু’রকম ওদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা একটু শুনব
‘অসুর’-এর শুটিংয়ের আগে অনেকেই বলেছিল আবীর-জিৎ-নুসরত একসঙ্গে আছে, দেখ টইমিং নিয়ে প্রচুর সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। কেননা আমি যেহেতু ১৭-১৮ ঘণ্টা শুট করি, সেজন্য সমস্যা হতে পারে। সেটাই ভেবেছিল সবাই। কিন্তু সত্যি বলব, ওরা খুবই কোঅপারেটিভ। ভোর ৬টা অবধি আবীরদা-জিৎদা হাসিমুখে শট দিয়ে যাচ্ছেন। জিৎদার একঘণ্টা ধরে মেক-আপ চলে। আবীরদারও অন্য লুক আছে। আর নুসরতের ক্ষেত্রে সবাই বলেছিল, ‘ও এখন সাংসদ’ সমস্যা হবে ভাই। কিন্তু কোনও ঝামেলা নেই। বিশ্বাস কর!
নুসরতকে অনেকদিন পর বড়পর্দায় দেখা যাবে, তাছাড়া বিয়ের পরও ওর প্রথম কাজ, পরিচালক হিসেবে নুসরতের প্রসঙ্গে কী বলবেন?
আমি নুসরতের কিছু লোকসভার স্পিচ শুনেছিলাম। যেভাবে প্রথম দিনই সংসদীয় এলাকায় কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় গড়ার দাবি-সহ আরও কিছু মন্তব্য রেখেছে, খুব সেনসিবল লেগেছিল। অত্যন্ত প্রফেশনাল এবং সেনসিবল নুসরত। নিজের প্রত্যেকটা কমিটমেন্ট পালন করতে হয় কীভাবে, ও জানে। পরিচালক হিসেবে নুসরতের পারফরমেন্সে আমি ভীষণ ইমপ্রেসড।
নুসরতের চরিত্রটা তো মিমির করার কথা ছিল না?
‘অসুর’-এর গল্প ডেভেলপ করার সময়ে মিমিকে ভেবেছিলাম। আবীরদার ক্ষেত্রেও তাই। প্রথমে আবীরদার ডেট পেতে সমস্যা হওয়ায় অন্য কাউকে ভাবা হয়েছিল। কিন্তু পরে সব ম্যানেজ হয়ে যায়। সেরকমভাবেই মিমিকেও ভাবা হয়েছিল। যেমন- বরুণ চন্দ যে চরিত্রে অভিনয় করছেন ‘অসুর’-এ, ওঁর জায়গায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে ভাবা হয়েছিল। কিন্তু উনি অসুস্থ হওয়ায় পরিকল্পনা বদলাতে হয়েছে।
নুসরতকে যেহেতু টিপিক্যাল কমার্শিয়াল ছবিতেই দেখা যায়, তো এরকম ভিন্ন স্বাদের একটা ছবিতে ওকে কাস্ট করার কথা ভাবলেন কী করে?
জিৎ আর আবীরের পাশে সমানভাবে মানাবে টলিউড ইন্ডাস্ট্রির এরকম একজন অভিনেত্রীর নাম বলুক কেউ আমাকে। আমার কাছে অভিনেতার দু’রকম সংজ্ঞা- ভাল আর খারাপ। এরা প্রত্যেকেই নিজেদের চরিত্রে অসাধারণ পারফরম্যান্স দিচ্ছে। আমি মনে করি, অভিনেতার থেকে কাজ নিংড়ে বের করার সবটাই পরিচালকের উপরে নির্ভর করে।
‘অসুর’-এর কাস্টিং তো হাইফাই, বাজেটও নিশ্চয় মোটা?
‘রসগোল্লা’-র থেকে অনেকটাই বেশি। আমি ইদানিং যেই ছবিতেই হাত দিচ্ছি, বাজেট একটু বেশিই হয়ে যাচ্ছে! প্রযোজক নিয়ে আমার কোনও দিন সমস্যা হয়নি। জালানজি নিজে এসে আমায় ‘বাবার নাম গান্ধিজি’ বানানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
পরের জুলাই অবধি এত ব্যস্ত, কোন কোন প্রজেক্ট রয়েছে ঝুলিতে, শুনি?
ওটা জুলাই থেকে বেড়ে আগস্ট হয়েছে। টানা কাজ করে বড় ব্রেক নেব। ‘বাবার নাম গান্ধিজি’র পরও বড় ব্রেক নিয়েছি। ঘরে বসে লিখেছি আর প্রি-প্রোডাকশন করেছি। এই মুহূর্তে দুটো হিন্দি ছবির চিত্রনাট্য লিখছি।
তুমি ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’ নিয়ে একটু অন্যভাবে ভাবছেন, শুনলাম।
হ্যাঁ। ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’-এর পরবর্তী প্রজন্ম নিয়ে গল্প। গুপী-বাঘার ছেলেদের গল্প।
[আরও পড়ুন: জন্মদিনে অনন্য ঋতুস্মরণ অমিতাভের, প্রকাশ্যে আনলেন ‘সিজনস গ্রিটিংস’-এর ফার্স্টলুক]
বলিউডের যে দুটো স্ক্রিপ্ট লিখছেন, কোন হাউসের জন্য?
একটা দীনেশ বিজনের ম্যাডক ফিল্মসের জন্য লিখছি। আরেকটা ডার মোশন পিকচারসের জন্য।
সাধারণত চিত্রকররা ইন্ডিয়ান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ব্রাত্য, রাজা রবি বর্মাকে নিয়ে ‘রং রসিয়া’র পর সেভাবে আর কোনও প্রজেক্ট দেখা যায়নি। সেদিক থেকে ‘অসুর’ তো রামকিঙ্কর বেইজকে শ্রদ্ধার্ঘ্য দিয়ে তৈরি করছেন..
ময়রার বায়োপিক, একটা ফুটপাথের ছেলের পৃথিবী পরিচয়ও তুলে ধরেছি দর্শকদের কাছে। যেমন ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’-এর পরবর্তী প্রজন্ম নিয়েও ভেবেছি।
অনেকেই হয়তো ‘গুপি-বাঘা’র পরবর্তী প্রজন্ম নিয়ে ভাবলেও সাহস পায়নি! সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্টির লেজ টেনে কাজ করাটা একটু ঝুঁকি হয়ে গেল বলে মনে হয় না?
সত্যজিৎ-রবীন্দ্রনাথের প্রতি বাঙালির যা আবেগ, তাতে পান থেকে চুন খসলেই, এই সাহস দেখিয়ে যে আমাকে গালাগাল খেতে হবে, জানি। আমি প্রথমদিন থেকেই প্রস্তুত। কিন্তু আমার একটা দায়বদ্ধতা আছে। এই ছবিটা আমি কেন করছি, তা ৪ মিনিটের একটা শর্ট ফিল্ম করে উত্তর দেব। লোকে স্বপ্নে দেবদেবী পায়, কিন্তু আমি এই ভাবনাটা পেয়েছি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.