শহরের মন বিষাদে আচ্ছন্ন। তার মধ্যেই পুজো রিলিজের প্রস্তুতি চলছে। ‘শাস্ত্রী’ ছবিতে ১৬ বছর পর ফিরছে দেবশ্রী রায়, মিঠুন চক্রবর্তীর জুটি। মুখোমুখি শম্পালী মৌলিক।
কেমন আছেন, হাতের এই অবস্থা কীভাবে?
মিঠুন: একটা মেজর অ্যাকসিডেন্ট ঘটে গিয়েছে মাঝে। কনুই প্রায় সাত-আট টুকরো হয়ে গিয়েছিল। ৭ ঘণ্টার অপারেশন হয়। প্রায় কোমায় ছিলাম, ভেন্টিলেটর থেকে বেরিয়ে এলাম। এরপর প্রায় সব ঠিকঠাক। বেঙ্গালুরুতে হয়েছিল, ওখান থেকে মুম্বই এলাম। দুপুরে আমার স্ত্রী আর দুজন সহকারী আমাকে ধরে বাইরে নিয়ে আসছিল, হঠাৎ আমার শরীর ছেড়ে যায়। পড়ে গেলাম। টেবিলের সঙ্গে ধাক্কা লাগল। এখন দেখা যাচ্ছে, এই হাতের তিনটে স্ক্রু আলগা হয়ে গেছে। দ্বিতীয়বারের আঘাতটা আরও মারাত্মক হয়ে গেল। এখন তো আর অপারেশন হবে না। চার থেকে ছসপ্তাহ এ ভাবেই থাকতে হবে। তিন-চার ঘণ্টা অন্তর পেনকিলার নিতে হচ্ছে। নয়তো দাঁড়াতে পারছি না।
দেবশ্রী: খুবই কষ্ট পাচ্ছে। আমি বসেই বুঝতে পারছি। আর আমাকে যেমন দেখছ তেমনই আছি, ভালোই। আর ‘শাস্ত্রী’র প্রচারও চলছে।
পুজো আসতে আর একমাস মতো। পথিকৃৎ বসুর পরিচালনায় আপনাদের ‘শাস্ত্রী’ আসছে। এ বছরটা আগের বছরগুলোর তুলনায় একেবারে আলাদা। পুজো রিলিজের যে উন্মাদনা সেটা কি এবার টের পাচ্ছেন?
মিঠুন : এই ব্যাপারটা আমি বুঝি না। যেমন, দেওয়ালিতেই ছবি রিলিজ করতে হবে এমন একটা ব্যাপার থাকে। আমি মনে করি, দেওয়ালিতে কেউ পিকচার দেখে না। মায়ের পুজো করে মানুষ তখন। বাড়ির পুজো ছেড়ে কেউ পিকচার দেখতে যায় না। দুর্গাপুজোতেও কেউ পুজো ছেড়ে বই দেখতে যাবে- এটা আপনাদের কনসেপ্ট। তুই ভালো বলতে পারবি (দেবশ্রী রায়ের দিকে ইঙ্গিত করলেন)।
দেবশ্রী : হ্যাঁ গো, পুজোয় ছবি দেখে। যারা বাইরে যেতে পারে না, তাদেরও তো ছুটিতে মনোরঞ্জন দরকার।
একসঙ্গে বেশ কয়েকটি ছবি রিলিজের প্ল্যান থাকে এই সময়। তবে শহরের মন ভারাক্রান্ত। পুজোর ছবি নিয়ে কি আগ্রহ থাকবে?
দেবশ্রী : সেটা নিয়ে একটা চিন্তা আছে অবশ্যই।
‘শাস্ত্রী’ ছবির আকর্ষণ, প্রায় ১৬ বছর পর আপনারা জুটিতে ফিরছেন।
দেবশ্রী : কত বছর, সেটা তো গুনিনি। সকলে বলছে ১৬ বছর। (হাসি)
মিঠুন : আমার মনে হচ্ছে ব্যবধানটা কিছুই নয়। কোনওদিন ফিলই করিনি যে আমরা এত বছর পর কাজ করছি। আমরা খুব ক্লোজ ফ্যামিলি। এখানে এসে তো ওর বাড়িতে থাকতাম। আমার সামনে ওরা দুজন বড় হয়েছে, মানে ও আর দিদি ঝুমা। এই দুজনকে নিয়েই আমার কত সময় কেটে যেত।
দেবশ্রী : এয়ারপোর্ট থেকে মিঠুনদা ফোন করে দিত যে, মাসিমা আসছি। এই রান্না করো। হই হুল্লোড়, নাচে গানে কেটে যেত। মিঠুনদার ফ্যামিলি, আমার ফ্যামিলি। আমার বাবা খুব পছন্দ করতেন মিঠুনদাকে। বাবা কম কথা বলতেন। এদিকে মিঠুনদা সাউথ থেকে এলেই খুব হাসাত বাবাকে। খুব এনজয় করত মিঠুনদার সঙ্গ।
চেনাজানা কি ছোটবেলা থেকে?
মিঠুন : না, না। ও আর ওর দিদি তো ছোট থেকেই রিয়্যাল সুপারস্টার। ওদের দেখার জন্য যা ভিড় হত চিন্তা করা যায় না। তারপরে ‘নদী থেকে সাগরে’ ছবিতে ফার্স্ট কাজ করলাম আমরা, সেখান থেকে সম্পর্কটা গভীর হয়।
তারপরে তো একসঙ্গে ‘ত্রয়ী’ করেন। যেটা ম্যাসিভ হিট হয়!
মিঠুন : ব্লকবাস্টার যাকে বলে। ওটা হল আজকের দিনের ‘শোলে’। এখনও ‘ত্রয়ী’-র গান হিট।
দেবশ্রী : প্রোগ্রাম হত না ‘ত্রয়ী’-র গান ছাড়া।
তারপরে জুটিতে আপনারা অসংখ্য ছবি করেছেন বলব না, উল্লেখযোগ্য কিছু ছবি করেছেন। যেমন- ‘চাকা’, ‘এমএলএ ফাটাকেস্ট’। এই ছবিগুলো মানুষের মনে গেঁথে আছে। রসায়নটা কী?
মিঠুন : আমার কোনও কেমিস্ট্রি নেই। আগে তো চুজি ছিলাম না। এখন চুজি ইন দ্য সেন্স, আর ভালো লাগে না সেম বই করতে। এখন মনে হয়, গল্পের মধ্যে যদি বিশেষ কিছু না থাকে, করব কেন! এই ‘শাস্ত্রী’ বইটার মধ্যে সেটা আছে।
দেবশ্রী : মিঠুনদা আর দেবশ্রী রায়কে দেখতে ভালোবাসে বাঙালি দর্শক এখনও।
‘শাস্ত্রী’ ছবির গল্পটা বিজ্ঞান এবং জ্যোতিষের দ্বন্দ্ব থেকে উঠে এসেছে। আপনারা দুজনেই জ্যোতিষে বিশ্বাস করেন, যতদূর জানি।
দেবশ্রী : আমি বিশ্বাস করি ডেফিনিটলি। এই তো আমার হাতে আংটি আছে।
আপনি কি ডেস্টিনিতে বিশ্বাস করেন।
মিঠুন : ডেস্টিনি-ই তো জ্যোতিষ, আবার কী।
নিজের ভাগ্য আপনি নিজে অনেকখানি বদলেছেন মনে করেন না?
মিঠুন : নিজের ভাগ্য নিজে কেউ বদলাতে পারে না। ও বড় হয়ে গেলে লোকে বাতেলা মারে। ও আমি পারব না। আমি বলি, ডেস্টিনি ইজ দ্য লাস্ট ওয়ার্ড।
স্টারডমের এতটা পথ আপনারা দুজনেই অতিক্রম করেছেন। জাতীয় পুরস্কার, পদ্মভূষণ- তার পরেও বলছেন ডেস্টিনি!
মিঠুন : তারপরে আরও বেশি করে বলছি ডেস্টিনি। ইউ হ্যাভ টু বি ডেস্টিনি’স চাইল্ড, আদারওয়াইজ ইমপসিব্ল। স্বপ্ন দেখারও একটা অধিকার, একটা গন্ডি আছে যে আমি এই, আমি এইটুকুই স্বপ্ন দেখতে পারি। এর বাইরে যাওয়া যাবে না।
আপনি ইদানীংকালে ছবি করতেই চান না, ‘শাস্ত্রী’তে কী আকর্ষণ করেছে?
দেবশ্রী : বিষয়টা এবং মিঠুনদা। মনের মতো আর্টিস্ট। তারপর অবশ্যই বিট্টু (সোহম চক্রবর্তী)।
ছবির সেটে গিয়ে কি আপনাদের পুরনো দিনের স্মৃতি ঘুরেফিরে এল?
দেবশ্রী : আমরা আলোচনা করছিলাম খুব যে আমরা কী করেছি।
মিঠুন : ছবির গল্পটা শুনে আমার ভালো লেগেছিল। তখন জানতাম না দেবশ্রী করছে। পরে ওরা বলেছিল, দেবশ্রীর জন্য চেষ্টা করছে। কিন্তু আমি তো জানি, সব বই ও করে না। তারপর স্ক্রিপ্ট শুনলাম। পরে জানলাম, দেবশ্রী করছে। সামনে একজন ভালো আর্টিস্ট থাকলে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। অ্যাকশন-রিঅ্যাকশন ভালো হয়, সেটা তোমরা বই দেখলে বুঝবে।
এই ছবির অন্যতম প্রযোজক এবং অভিনেতা সোহম চক্রবর্তী। আপনাদের দুজনেরই ঘনিষ্ঠ। ‘শাস্ত্রী’র শুটিংয়ের সময় আপনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সেই সময় সোহম নিজে ড্রাইভ করে আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন শুনেছি। অথচ আপনাদের ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ। এই সদ্ভাবের জায়গা কীভাবে তৈরি হল?
মিঠুন : এটা তো এখন একেবারেই চলে গেছে। একটা ভ্যান থেকে আরেকটা ভ্যানের কাউকে আমরা মেসেজ করি, ‘হাউ আর ইউ’? আগে এসব ছিল না। নিজের মেকআপ রুম থেকে সবাই একটা জায়গায় আসত। খাওয়াদাওয়া-ইয়ার্কি হত। সন্ধেবেলায় বাড়ি চলে যেতাম। সেই বন্ধন আর নেই, হারিয়ে গেছে। এখন সব এসএমএস বা হোয়াটসঅ্যাপে। সেটাই এখন সম্পর্ক।
তবুও বলব, আপনি এই প্রজন্মের অভিনেতা বা নায়কদের সঙ্গেও একটা বন্ডিং তৈরি করে ফেলেছেন।
মিঠুন : আমি বলব, কমপ্রোমাইজ করেছি। এই যুগের সঙ্গে লড়তে গেলে আপোস করতে হবে, নয়তো হারিয়ে যাবে।
আপনার চরিত্রটা সম্পর্কে জানতে চাই।
দেবশ্রী : মিঠুনদার স্ত্রীর চরিত্রে। পুরো ছবিজুড়ে নেই, কিন্তু আছি। দুজনের মধ্যে ভালোবাসা আছে। খারাপ অবস্থায় বউ তাকে সাপোর্ট দিচ্ছে, নিজের দুল খুলে দিচ্ছে। বউ মুখরা, পরিমল (মিঠুন) তাকে ভয়ও পায়। বউ ধীরে ধীরে দেখতে পায়, সেই স্বামীর মধ্যে বদল আসছে। একটা যন্ত্রণায় পড়ে যে, স্বামীকে বলতে হবে- সে ঠিক করছে না।
‘পরিমল’ চরিত্রটা কমনম্যান। ফ্যাক্টরি-তে কাজ করে। একসময় সে ‘শাস্ত্রী’ অর্থাৎ ‘মসিহা’ হয়ে উঠছে। তারপরে জীবনের যাবতীয় প্রতিশোধ নিচ্ছে। কতটা উপভোগ করেছেন চরিত্রটা?
মিঠুন : এটা আমি বিশ্বাস করি, এভরিবডি নিডস আ ম্যাজিক। আর গরিবদের বেশি করে ম্যাজিক দরকার। এমনকী, বিশ্বাস করি ভগবান, ইভেন দ্য গডম্যান, দুজনেই ম্যাজিক না দেখালে, তাঁকে কেউ মানবে না। ম্যাজিক দেখাতেই হবে। ফর দ্যাট ম্যাজিক উই আর রানিং। গরিবের জীবনের ম্যাজিকটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ এই ছবিতে। সমাজের সব স্তরের মানুষ কানেক্ট করবে এই ছবির সঙ্গে। কেউ লটারিতে ম্যাজিক খুঁজছে, কেউ জ্যোতিষে, কেউ আংটিতে। এই পরিমলের ম্যাজিক হল, আগামীতে কী হবে দেখতে পাচ্ছে। দেন দ্য পাওয়ার করাপ্টস। ক্ষমতা পেয়ে বউকে চিনতে পারছে না। গরিবের স্ত্রী, সংসার, সন্তানই ম্যাজিক, তার বাইরে যখন চলে যাচ্ছে তখনই সমস্যা। সেটাই ‘শাস্ত্রী’। ক্ষমতা হল সাপের মতো। সেখানে যদি নিয়ন্ত্রণ থাকে যে, সাপটাকে ঢুকতে দেব না, তবেই হবে।
দেবশ্রী : আমি অভিনয়ের কথা বলছি। একজন স্টার হয়ে গেছে। তারপর যদি যা তা করতে থাকে তাহলে ডিজাস্টার হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.