সন্দীপ্তা ভঞ্জ: লকডাউনের এই গৃহবন্দি জীবনে ইতিমধ্যেই আমরা হাঁপিয়ে উঠেছি। কিন্তু যে মানুষগুলো সেই দীর্ঘকাল ধরে চার দেওয়ালের মধ্যে থেকেই বাড়ির সব কাজ সামলে সন্তানদের বড় করে তোলা, হেঁশেলে বাটনা বাটা, খুন্তি নাড়া থেকে বাড়ির প্রত্যেকটা সদস্যের খুঁটিনাটি প্রয়োজনের খেয়াল রেখে আসছেন, ‘ওঁরা’ কিন্তু হাঁপিয়ে পড়েননি। পড়েনও না! ওঁরা ‘মা’। জগতের সবচাইতে নিরাপদ আশ্রয়। সবথেকে ভরসার জায়গা। কালের নিয়মে পারিপার্শ্বিক সব বদলালেও মায়ের আদর-ভালবাসা, অনুভূতিতে কোনও রকম পরিবর্তন আসে না। সন্তানের ওপর মায়ের অধিকার, ভালবাসা স্মরণ করানোর জন্য যেমন কোনও নির্দিষ্ট দিনের দরকার হয় না, ঠিক তেমনই মায়ের প্রতি সন্তানের সম্মান প্রদর্শনের জন্যও নির্দিষ্ট কোনও দিনকে বেছে নেওয়াটা ভীষণই অমূলক! কিন্তু প্রত্যেক বছরই একটা নির্দিষ্ট দিনকে আন্তর্জাতিক মাতৃ দিবস হিসেবে ধার্য করা হয় বিশ্বের সমস্ত মা’দের কুর্নিশ জানাতে। আজ সেই দিন- আন্তর্জাতিক মাতৃ দিবস। জীবনের মৌলিক স্তরগুলোতে আমাদের সবথেকে বড় শিক্ষাগুরু, যাঁর হাত ধরে চলতে শেখা, খেতে শেখা.. বিশ্বের সেসমস্ত মায়েদের কুর্নিশ জানাতেই মীর আফসার আলির শর্ট ফিল্ম ‘মাতৃ’। মাতৃ দিবস উপলক্ষে মুক্তি পেল আজ।
৪ মিনিটের এই শর্ট ফিল্ম ‘মাতৃত্ব’-এর কথা বলে। অতি যত্নে সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলো তুলে ধরা হয়েছে ছবিতে। এক ছেলে এবং তার মায়ের গল্পকে কেন্দ্র করেই এগিয়েছে ছবির গল্প। মায়ের চরিত্র মঞ্জুলা পোলে এবং ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মীর। কেরিয়ার-অফিস, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে হইহুল্লোর নিয়ে রোজকার জীবনে আমরা সত্যিই এত ব্যস্ত যে ‘মা’র খেয়াল রাখা তো দূরের কথা, ‘মা তুমি ভাল আছ কিনা?’ সেই প্রশ্নটা করার কথাও সাধারণত উঁকি দেয় না আমাদের মাথায়! তবে মায়েরা কিন্তু সেই একইরকমভাবে আমাদের খেয়াল রেখে চলেছেন। সন্তান দূরদেশে থাকলেও সময়ে সময়ে খোঁজ নিয়ে একটা ফোন কিংবা একটা টেক্সট অন্তত চলে আসে। কখনও ব্যস্ততায় কেউ এড়িয়ে যায়। আবার কখনও বা দায়সারা উত্তর আসে। অসাড় হয়ে যাওয়া সেই সূক্ষ অনুভূতিগুলোতেই যেন মীরের শর্ট ফিল্ম ‘মাতৃ’ কড়া নাড়ে। আরও একবার মনে করিয়ে দেয় যে, মায়েদের কোনও ছুটি নেই। রোজকার জীবনে ওঁদের কোনও লকডাউন চলে না।
ব্যস্ত জীবনে আমরা ওঁদের খেয়াল রাখতে ভুলে গেলেও ওঁরা কিন্তু ভুলে যান না আমাদের খেয়াল রাখতে। এমনকী শৈশবে সযত্নে স্কুলব্যাগে নিজের সন্তানের জন্য টিফিনবক্স ভরে দিলেও তাতে আরেকটু অতিরিক্ত খাবার দেওয়ার অভ্যেসটা আজও পালটায়নি মায়েদের। পালটেছে শুধু স্থান-কাল-পাত্র। তখন স্কুলের বন্ধুদের জন্য অতিরিক্ত খাবার দিতেন, এখন সেটা সন্তানের অফিসের সহকর্মীদের জন্য দেন। মায়েরা এরকমই। সন্তান হোক বা সন্তানসম, সবার জন্যই ওঁরা মমতাময়ী। তাই তো এখনও ছেলেবেলার মতো সকালে ঘুম থেকে ‘ওঠ রে’ থেকে শুরু করে রাতে ঘুমতে যাওয়া অবধি ‘দুধটা খেয়ে নে রে.. আর কত রাত করবি!’ বুলিতে কোনও পরিবর্তন আসেনি। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সন্তানদের মধ্যে পরিবর্তন এলেও মায়েদের কাছে তারা সেই একইরকম রয়ে গিয়েছেন। সেই ‘ছোট্টটি’। ‘মাতৃ’তে এই সমস্ত ইমোশনগুলো সংলাপের মাধ্যমে খুব যত্ন সহকারে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
টার্টল ফিল্মস নিবেদিত এই ছোট দৈর্ঘ্যের ছবির কনসেপ্ট, চিত্রনাট্য এবং পরিচালনা রণজয়ের। মিউজিকের দায়িত্বে আশু চক্রবর্তী। যেহেতু সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বাড়িতেই শুট হয়েছে, এক্ষেত্রে সম্পাদনা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দক্ষতার সঙ্গে সম্পাদনার কাজ করেছেন পৃথা চক্রবর্তী। সাদাকালো ফ্রেমে পারদর্শীতার সঙ্গে রং ব্যবহার করেছেন কালারিস্ট উত্তম উট্টু। উল্লেখ্য, মীরের অংশগুলো শুট করেছেন তাঁর মেয়ে মুসকান। এই লকডাউন পর্বে বাড়িতে বিভিন্ন শুটের জন্য মুসকান অবশ্য এর আগেই বাবার সিনেম্যাটোগ্রাফার হয়ে গিয়েছেন।
দেখে নিন ‘মাতৃ’-
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.